প্রকৃতি আমাদের মা। জঙ্গল হচ্ছে মা অন্নপূর্ণা। আর ঠিক তাই জন্যই তো অরণ্য উচ্ছেদ বন্ধ করতে গ্রামের মা-মেয়েরা গাছকে আগলে রেখেছিলেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। চিপকো আন্দলনের কথাই বলছি। তবে, জানেন কি, আমাদের এই বাংলাতেও অরণ্যের গুরুত্ব বোঝাতে, সবুজায়ন ধরে রাখতে নিঃশব্দে বিপ্লব করে চলেছে একদল যুবক? অ্যাসোসিয়েশনের নাম- লবণধার অন্নপূর্ণা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

শাল, সেগুন, মহুয়ার মত গাছ দিয়ে ঘেরা বুদবুদ থানার অন্তর্গত দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট্ট গ্রাম লবণধার। মেরেকেটে ১০০ টি বাড়ি নিয়ে জঙ্গলমহলের এক কোণায় পড়ে থাকে এই গ্রামটি। গত কয়েকদিনের প্রচেষ্টায় এই গ্রামের একদল যুবক প্রায় অধিকাংশ বাড়ির বা মন্দিরের দেওয়ালে এঁকে ফেলেছে একগুচ্ছ রঙিন ছবি। উদ্দেশ্য একটাই। জঙ্গলকে রক্ষা করা। আর এই অভিনব উদ্যোগের কারণে, এতদিনের এই অবহেলিত গ্রাম হয়ে উঠেছে অরণ্যসুন্দরী।

জঙ্গলের উপরই নির্ভর করে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা। তাই জঙ্গলের পরিবেশ থেকে আদিবাসী সমাজের পরিবেশ এবং সংস্কৃতি- সবটাই তুলে ধরা হয়েছে এই শিল্পকলার মাধ্যমে। শুধু কি তাই? শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বহু পৌরাণিক কাহিনী। কোথাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জঙ্গল থেকে গাছ কেটে নিলে কি ক্ষতি হতে পারে, তার বৃত্তান্ত। তবে প্রথম প্রথম খুব একটা সাড়া না মিললেও মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই বদলে যায় ছবিটা। গ্রামবাসীরা নিজে থেকে এগিয়ে এসেছেন এমন এক উদ্যোগকে যোগ্য সঙ্গত দিতে।

শিল্পীর তুলির টানে একের পর দেওয়াল রঙিন সাজে সেজে উঠছে। জঙ্গলে ঘেরা প্রত্যন্ত একটা গ্রাম, যে এতদিন অবহেলিতভাবে পড়ে ছিল, আজ তাই যেন প্রাণচ্ছ্বল হয়ে উঠলো। শিল্পের ছোঁয়ায় তাঁদের এই গ্রাম যে এত সুন্দর হয়ে উঠতে পারে, সেটা কল্পনাই করতে পারেননি গ্রামের মানুষজন। গ্রামের দেয়াল থেকে মন্দির- সমস্ত কিছুতে এমন সুন্দর শিল্পের ছোঁওয়া রীতিমত মুগ্ধ করেছে তাঁদের।

তাঁদের চেনা গ্রামকে নতুন সাজে সেজে উঠতে দেখে রীতিমত উছ্বসিত গ্রামবাসীরা। গ্রামের শিল্প দেখতে ভিড় জমাচ্ছে আশেপাশের গ্রামের লোকজনেরা। এমন এক উদ্যোগ যে সর্বতভাবে মানুষকে সমৃদ্ধ করে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর ফলে একদিকে যেমন নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামের সংস্কৃতি, বন-জঙ্গল সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ফুটে উঠেছে। তেমনই অপরদিকে জঙ্গলকে রক্ষা করতে কী করণীয় তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এখন অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এর ফলে সাধারণ মানুষ অনেক সচেতন হবেন এবং জঙ্গল থেকে অবাধে গাছ কাটা বন্ধ হবে। যা আগামী প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দেবে।

কাঞ্চন দাস

পশ্চিম বর্ধমান