Daily
ডাল বেটে, সেটা ভালো করে ফেটিয়ে হাতে করে বড়ি দেওয়া বাংলার এক পুরনো ঐতিহ্য। বিশেষত, বাংলার মা- বোনেরাই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন বা আছেনও। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজকের জেনারেশন বাংলার এই কুটির শিল্পের বিষয়ে বিশেষ অবগত নয়। তবু নিঃশব্দে বড়ি তৈরির এই শিল্পকে আগলে রেখে বছরভর বড়ির যোগান দিয়ে যাচ্ছে নৈহাটির আম্রপালি মাঠপাড়া, পূর্বপাড়া, সুকান্তপল্লি সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকা।
রাস্তার দুপাশে এনামেল শিটে সারি দিয়ে সাজানো রয়েছে ডালের বড়ি। সেগুলোকে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আগে যদিও এই ডাল বাটা থেকে শুরু করে এনামেল শিটে সেগুলোকে সাজিয়ে রোদে শুকোনো এবং সব শেষে প্যাকেটজাত করা, এই পুরো প্রসেসটা হত ব্যবসায়ীদের নিজের হাতে। অর্থাৎ ম্যানুয়ালি। কিন্তু এখন যখন এ টু জেড, সবেই বইছে আধুনিকতার হাওয়া, তখন বড়ি ব্যবসাতেই বা বাদ থাকে কেন? যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে বাংলার এই সুপ্রাচীন কুটিরশিল্পে। কাজেই সময় লাগছে কম, আর উৎপাদন হচ্ছে অনেক, অনেক বেশি। কিন্তু মেশিনের সংযুক্তিকরণে কতটা অভ্যস্ত গ্রামের মানুষজন?
রেগুলার বেসিসে বড়ির প্রোডাকশন হয় মোটামুটি ৮০ থেকে ৯০ কিলো মত। এলাকার মা-বোনেরাই শুধু নয়, এই কাজে যুক্ত থেকে গ্রামের পুরুষেরাও এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাদের এলাকার এই বড়ি শিল্পকে। এলাকার প্রায় ৩০০ টি পরিবার যুক্ত রয়েছেন এই বড়ি ব্যবসার সাথে। উৎপাদিত বড়ি রপ্তানি হচ্ছে কলাকাতা, বিহার, আসাম সহ বিভিন্ন জায়গায়।
কাজটা দেখতে যতটা সহজ, আদপে সেটা কিন্তু বেশ কঠিন। ধৈর্য, অক্লান্ত পরিশ্রম সবটা মিলিয়ে এই বড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকেন আমোদ সিকদারের মত স্থানীয় বড়ি ব্যবসায়ীরা। কেউ যদি এই বড়ির বিজনেস স্টার্ট করতে চান, তাকে কি কি ফলো করতে হবে? সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য দিলেন আমোদ বাবু।
বড়ি ব্যবসার উপর নির্ভর করে এখানে জাঁকিয়ে বসেছে স্থানীয় ডাল ব্যবসাও। কারণ, বাইরে থেকে নয়, বড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ডাল তারা কেনেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকেই। যেটা লোকাল বিজনেস বুস্ট আপ করতে নিঃসন্দেহে একটা দুর্দান্ত বিষয়। শুধু কি তাই? বড়ি ব্যবসা যেমন এখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে খেয়াল রেখেছে, ঠিক তেমনই স্বনির্ভর করছে স্থানীয় মহিলাদেরও। সবমিলিয়ে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মহিলাদের স্বাবলম্বী করতে আজ গোটা বাংলার কাছে মডেল হয়ে উঠেছে নৈহাটির এই এলাকাগুলি।
সুব্রত সরকার
নৈহাটি