Story
আধুনিকতার ছোঁয়া দুর্গা পুজোয় লেগেছে ঠিকই। তবে ডাকের সাজে মায়ের রূপ যেন আরো বেশি করে ফুটে ওঠে। আগে শোলা দিয়ে ডাকের সাজ হত। এখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উধাও হয়েছে শোলা। পরিবর্তে এসেছে থার্মোকল। কিন্তু তাতে কী? শিল্পীর দক্ষতা প্রকাশ পাচ্ছে সেখানেও।
পুরুলিয়ার আরশা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম বামুনডিহা। সেখানেই আজ ধরা পড়ছে চরম ব্যস্ততা। বামুনডিহার যোগীপাড়ার ১৪-১৫টি পরিবার আজ ভুলেছে নাওয়া খাওয়া। কারণ মায়ের মৃন্ময়ী রূপকে ফুটিয়ে তোলার জন্য দিলীপ যোগী, চিন্তা যোগী বা স্বপন যোগীদের মত ডাক শিল্পীদের এখন একটুও ফুরসত নেবার সময় নেই। তবে করোনার থাবায় গত দু’বছর যেমন খরা নেমেছিল এদের জীবিকায়, আজ সেই খরা কেটেছে অনেকটাই। কিন্তু আগের মত চেনা ছন্দ উধাও হয়ে গিয়েছে।
তবে এরা যে শুধু প্রতিমার ডাকের সাজ তৈরি করেন, এমন নয়। বিখ্যাত ছৌ নাচের শিল্পীদের পোশাকও তৈরি করেন তাঁরা। কিন্তু গত দু বছর করোনার জন্য ছৌ নাচ একেবারে বন্ধ থাকায় ছৌ শিল্পীরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন তেমনই ক্ষতির মুখে পড়েছেন এরাও। তবু, শিবরাত্রির সলতের মত যেটুকু বরাত পাওয়া যায় সেটা দিয়েই কম পারিশ্রমিকে রাতদিন খেটে চলেছেন শিল্পীরা।
তবে এটা ঠিক যে আগেরবারের মত যে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল এই ডাক শিল্পীদের, এবারে অন্তত সেই ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে। এমনটাই জানালেন আরেক ডাক শিল্পী স্বপন যোগী।
মূল্যবৃদ্ধির আঁচ লেগেছে এদেরও। কাঁচামালের দাম বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি তাঁদের পারিশ্রমিক। তবু এর মধ্যেই দুর্গা পুজোকে ঘিরে তাঁরা উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের তৈরি সাজ পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।
তবে শুধু পুরুষরাই নন। এই কাজে হাত লাগিয়েছেন বাড়ির মহিলারাও।
শোলার সাজের অর্ডার পেলে শোলা। নাহলে জড়ি, চুমকি, ভেলভেট, ফেভিকল ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোশাক। পরিশ্রমে ঘাটতি নেই। রোজগার বাড়তি নয়। অবশ্য সরকারের কল্যাণে চাল, ডাল জুটছে ঠিকই। তবে ডাক শিল্পীদের আর্থিক উন্নতির জন্য এখনো সরকার কোন পরিকল্পনা নেয়নি। তবে সরকারি সাহায্য পেলে তাঁরা আবার পুরনো উদ্যমে কাজ শুরু করবেন। আপাতত এই বছর যে মা মুখ তুলে চেয়েছেন, এই প্রাপ্তি বুকে নিয়েই শিল্পীরা তাঁদের দক্ষতা প্রমাণ করে যাবেন।
সন্দীপ সরকার
পুরুলিয়া