Trending
ভোটের আগে রাম নাম। কমবে তবে গ্যাসের দাম! ছন্দে যাব না। তবে ভোট আসলে শাসক শিবির যে ছন্দ মিলিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা কুড়োতে যায়, সেই ছন্দটা চেনা। সেই পথেই পা বাড়িয়েছে, বা বলা ভালো বাড়াতে চলেছে বিজেপি সরকার। কানাঘুষো কী শোনা যাচ্ছে জানেন? কমতে পারে সিলিন্ডারের দাম, পেট্রোল-ডিজেলের দাম। অর্থাৎ হেঁসেল খরচ যেভাবে আমআদমির ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল, এবার পাওয়া যেতে পারে খানিক সুরাহা। স্বস্তি পাবে আমজনতা। তাহলেই ২০২৪ মোদীর কনফার্ম নোটিশ, তিনি আসছেন। কিন্তু আদৌ কি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমবে? পেট্রোল ডিজেলের দাম কমবে? মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে মিলবে রেহাই? এই বিষয়ে তাই আজ খোঁজ নেওয়া চাই।
কর্ণাটক হাতছাড়া হয়েছে বিজেপি সরকারের। এদিকে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ সহ নির্বাচন রয়েছে পরপর পাঁচটি রাজ্যে। এদিকে লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-এই। তৃতীয়বারের জন্য মোদীকে বসতে হবে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে। আর যে কারণে এবার মানুষের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে একটু মাথা ঘামাচ্ছে মোদী সরকার। গুরুত্ব দিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে। রান্নার গ্যাসের দাম, পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমাতে উদ্যোগী হতে পারে তারা। অন্তত তেমনই ইঙ্গিত নাকি দিচ্ছে বিজেপি শিবির। আসলে, মোদী গভর্নমেন্টের সবথেকে অস্বস্তির কারণ অনেকের মধ্যে মেজর একটা। পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সিলিন্ডারের আগুন দাম। যাকে হাতিয়ার করে মানুষের আস্থা কুড়োতে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। আর কংগ্রেস যে বিরোধিতা করছে সেটা ধীরে ধীরে মোদী ম্যাজিক ফিকে করিয়ে দিচ্ছে। খেয়াল রাখবেন, মোদী ভোটব্যাঙ্কের বড় একটা বিশ্বাস ধরে রেখেছিল মহিলারা। কিন্তু দেশে ডোমেস্টিক গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। তার জন্য প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার আন্ডারে সাড়ে ৯ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে গ্যাস দেবার কথা বলা হয়। তার জন্য ভর্তুকি দেওয়া হয় ২০০ টাকা। কিন্তু আমাদের দেশ চিন নয়। বেকারত্ব রয়েছে। গরিবিয়ানা রয়েছে। সুতরাং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা পরিবারগুলো ৯০০ টাকা দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কিনবেন? সেটা মানা যায়? একবার রাজস্থানের দিকে নজর ঘোরান। রাজস্থান সরকার বিজেপি শাসিত নয়। অতএব একটু কষ্ট করে যদি এই ইস্যু তুলে সাধারণ মানুষকে রিলিফ দেওয়া যেত! ব্যস, আর কী- কংগ্রেস মারল ছক্কা। কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান সরকার গ্যাস সিলিন্ডার দিতে শুরু করল ৫০০ টাকায়। মানে একেবারে অর্ধেক। এবার বিষয়টা হচ্ছে, কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান যেমন ৫০০ টাকায় আমআদমির হেঁসেল খরচা এভাবে কমাতে পারল, তার মানে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস এলে সেখানেও ৫০০ টাকায় সিলিন্ডার দেওয়া সম্ভব হবে। সেভাবেই ছত্তিশগঢ়, তেলেঙ্গানার মতো অন্যান্য রাজ্যেও কংগ্রেসের একটি দান করতে পারে কিস্তিমাত। আর দাবার বোর্ড থেকে ছিটকে যেতে পারে বিজেপি।
আর এখানেই তো শেষ নয়। চলতি বছর জুলাই মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার পৌঁছে গিয়েছে ৭.৪৪ শতাংশে। ১৫ মাসের মধ্যে এটা সর্বোচ্চ। মূল্যবৃদ্ধির হার শেষ রেকর্ড করেছিল ২০২২-এর এপ্রিল মাসে। সেই সময় মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৭৯%। তখন পেট্রোল ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর যে আর শুল্ক ছাঁটাই-ই করা হয়নি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক এই বিষয়ে একটা গান গেয়েছে। ঐ সময় যখন শুল্ক পেট্রোলে লিটার প্রতি ৮ টাকা এবং ডিজেলে লিটার প্রতি ৬ টাকা কমানো হয়েছিল তার জন্য দেশের রাজস্ব আয় কমে গেছিল প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা মতন। এদিকে গ্যাস সিলিন্ডারের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিজেপি সরকারের একটা বক্তব্য রয়েছে। তারা বলছে, এই দেশে যত সিলিন্ডারের প্রয়োজন তার ৬০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর দামটাও নাকি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখেই করা হয়। কিন্তু পরিণতি যেদিকে এগোচ্ছে, তারপর কি আর বিজেপির এই দাবি তেমন ধোপে টিকবে? কংগ্রেসের কাছে বড় সুযোগ। বিজেপির কাছে এটা চ্যালেঞ্জ। আবারও বলছি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগঢ়, তেলেঙ্গানার মতো পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। কর্ণাটক হাতছাড়া হয়েছে। ন্যাশনাল লেভেলে মোদী ম্যাজিক ফিকে হচ্ছে, এদিকে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে ক্রমশই বাড়ছে মোদীর ক্যারিশ্মা। সুতরাং বাসায় এবং বিদেশে মোদী ম্যাজিক ফিকে হওয়া যাবে না কোনমতেই। আর যে কারণে বিজেপি সরকার অনিচ্ছে সত্ত্বেও দাম কমানোর ব্যপারে ভাবনা চিন্তা করছে। তাদের বক্তব্য, কোষাগারে চাপ পড়লে পড়ুক। কিন্তু সুরাহা দিতে হবে আমআদমিকে। আর সেই কারণেই কি এবার সত্যি সত্যিই কমতে চলেছে সিলিন্ডার, পেট্রোল বা ডিজেলের দাম? আর এভাবেই রাজপথ পরিষ্কার রাখতে চাইছে মোদী সরকার?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ