Agriculture news
ছক ভেঙে কিছু করতে গেলেই আশপাশ থেকে গুচ্ছের বাধা এসে হাজির হয়। ডিমোটিভেট করার মত মানুষ এই দুনিয়ায় কম নেই। শিলিগুড়ির উৎপল ব্যানার্জীর সঙ্গে ঠিক সেটাই হয়েছিল। কারুর কথায় তেমন আমল দেননি। এখন তাঁর কাণ্ডকারখানা দেখে অবাক কৃষি বিশেষজ্ঞরা। অবাক হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্ট। কারণ তাঁরা ভাবতেও পারেননি যে শিলিগুড়িতেও অর্কিড চাষ হতে পারে, তাও আবার এমন রমরমিয়ে।
শিলিগুড়ির উৎপল ব্যানার্জীর নিজের কাছে দু’বিঘে জমি ছিল। সেই জমির ওপরেই ২০১২ সাল নাগাদ পলি হাউজ তৈরি করে অর্কিড চাষ শুরু করেছিলেন। শুভাকাঙ্ক্ষীরা পর্যন্ত উৎপলবাবুর এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশায় ছিলেন। কারণ তরাই অঞ্চলে অর্কিড চাষ করে কতটা সাকসেসফুল হওয়া সম্ভব? এই নিয়েই সবার মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। তবে উৎপলবাবু নিজের কাজের প্রতি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তার প্রমাণ কি জানেন? এই পলি হাউজে চাষ হওয়া একটা, দুটো নয়- প্রায় ২৬ হাজার প্রজাতির অর্কিড। যাকে ট্রপিকাল অর্কিড বলা যায়। এই পুরো টেকনোলজিটাই আনা হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে। অবাক কৃষি বিশেষজ্ঞরা। খবর পেয়ে দিল্লি থেকে এসেছেন বিভিন্ন আধিকারিকরা। নিজের চোখে পুরো বিষয়টা দেখতে উৎপল বাবুর পলি হাউজ ঘুরে গেছেণ হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন আধিকারিকরাও। কারণ, পলি হাউজে চাষ করেও কিন্তু একটা অর্কিডের মৃত্যু হয়নি। বরং বিভিন্ন রং নিয়ে তারা রয়ে গেছে উৎপলবাবুর পলি হাউজে।
সত্যি বলতে কী, ট্রপিকাল অর্কিড ফুল বিজনেসে নতুন একটা ডাইমেনশন এনে দিয়েছে। স্পেশ্যালি কার্ড ফ্লাওয়ার হিসেবে এই অর্কিড বিক্রি করা হয়। এখন থিম ওয়েডিং-এর জমানা। ফলে মানুষের পছন্দ হিসেবে সেই রং-এর অর্কিড পাঠানো হয় উৎপলবাবুর পলি হাউজ থেকে। হ্যাঁ, এই ধরণের অর্কিড একটু এক্সপেনসিভ। একেকটি অর্কিড বিক্রি করা হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। নাগাল্যান্ডে অর্কিডের চাহিদা নাকি খুব ভালো। আর যে কারণে বেশিরভাগ অর্কিড পাঠানো হয় নাগাল্যান্ডে।
ট্রপিকাল অর্কিড এমন সাকসেসফুলি চাষ করতে দেখে অবাক হয়েছেন হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকরা। যে কারণে তাদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে শিলিগুড়িতে একটি ট্রপিকাল অর্কিড সেন্টার তৈরি করা হবে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন ছোট ছোট চাষিদের এই অর্কিড চাষ ভালো করে বোঝানো হবে। এটা চাষিদের জন্য দারুণ গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে। ফলে তাঁরাও এভাবে অর্কিড চাষ করতে পারবেন। স্বাভাবিকভাবেই ছোট ছোট কৃষকরাও তাঁদের আয়ের পথে নতুন একটা রাস্তা সংযোজন করতে পারবেন।
পৃথিবীতে ফুল ভালোবাসেন না এমন মানুষ বিরল। অর্কিডের মতন রংবাহারি ফুলের প্রেমে মজেন না এমন মানুষও খুঁজে পাওয়া কঠিন। ট্রপিকাল অর্কিড চাষ করে কৃষি বিশেষজ্ঞদের চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন উৎপল ব্যানার্জী। আজ তরাই অঞ্চলে অর্কিড চাষ করার ব্যপারে তিনি একজন পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর দেখানো পথে হাঁটলে ছোট ছোট চাষিরা উপকৃত হবেন। এই ফুল গাছ থেকে ছিঁড়ে নেওয়া হলেও অনেকদিন থেকে যায় একভাবে। আর গাছে থাকলে তো কথাই নেই। সুতরাং ট্রপিকাল অর্কিড চাষ করুন, আর আয়ের পথ বাড়ান। অর্কিডের চাহিদা তো আর কমার নয়।
অরূপ পোদ্দার
শিলিগুড়ি