Trending
দুর্গাপুজোয় বাংলা জুড়ে ব্যবসা ৮০ হাজার কোটি টাকার। এমপ্লয়মেন্ট ডিরেক্ট বা ইনডিরেক্ট মিলিয়ে ৩ লক্ষ। এই দাবি আমাদের নয়, খোদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আমাদের তরফ থেকে একটা প্রশ্ন রয়েছে। দুর্গা পুজো মানে যেখানে ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর একটা এক্সেপশনাল প্ল্যাটফর্ম। সুতরাং এটা ন্যাচারাল যে, এই সময় বাংলার ইকোনমি একটা মেজর বুম পায়। দেন, হোয়াট নেক্সট? পুজো শেষ মানেই কি ক্রিয়েটিভ ইকোনমি ডাউন? হ্যাঁ, বন্ধুরা। আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা সারব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি জেনারেট আদৌ কি বাংলা করতে পারছে? আর ক্রিয়েটিভ ইকোনমি এই কয়েনেজের আসল ব্যাখ্যা ঠিক কী?
ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি- অক্সফোর্ড ডিকশনারির রেফারেন্স বলছে “Commercial and Industrial Production sectors involved in generating new cultural contributors through creativity, skill and talent.” আর্ট, মিউজিক, ফিল্ম, পারফরম্যান্স আর্ট, আর্কিটেকচার, ডিজাইনার ফ্যাশন, বুক পাবলিশিং এই সবই আসতে পারে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে। টেলিভিশন, রেডিও-তো রয়েছেই। এই ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিজের কনসেপ্ট প্রথম উঠে আসে ১৯৯০ সালে। আর ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি যখন দুর্দান্ত একটা ইকোনমি জেনারেট করে তখন সেটা ক্রিয়েটিভ ইকোনমির ফরমেশন নেয়। ক্রিয়েটিভ ইকোনমির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অবভিয়াসলি ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি, ইনক্লুডিং ট্রেড, লেবার অ্যান্ড প্রোডাকশন। গ্লোবাল ইকোনমিতে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিকে বলা হয় মোস্ট ডায়নামিক সেক্টর, যেখান থেকে ইকোনমিতে হাই গ্রোথ দেখতে পাবার পসিবিলিটি সবসময় বেশি থাকে। অর্থাৎ কমার্শিয়াল এবং কালচারাল ভ্যালুজ যখন মিলে যায় তখন সেটা ক্রিয়েটিভ ইকোনমির ফরমেশন নেয়। ইউনেসকো বলছে, গ্লোবাল জিডিপি-র ৩.১% কনট্রিবিউশন থাকে এই ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির। আর ইন্ডিয়ার কথা যদি ধরি, তাহলে বলতে হবে, ভারতে কর্মসংস্থানের ৮% জড়িয়ে রয়েছে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে। টার্কি, মেক্সিকো বা অস্ট্রেলিয়ার থেকে যা অনেক বেশি। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের দেশ কি আদৌ ক্রিয়েটিভ ইকোনমিতে এক্সেপশনাল কোন ফর্ম ক্রিয়েট করতে পেরেছে?
ভারতে ক্রিয়েটিভ ইকোনমির ওভারঅল মার্কেট সাইজ পৌঁছে গিয়েছে ৩৬.২ বিলিয়ন ডলারে। মনে করা হচ্ছে, প্রত্যেকটা রাজ্য যদি ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিকে আরও বেশি জোর দেয় তাহলে ক্রিয়েটিভ ইকোনমি দিনে দিনে পৌঁছে যেতে পারে আরও দুর্দান্ত জায়গায়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় কই? আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, এই দুর্গা পুজোয় গোটা বাংলা জুড়ে ব্যবসা হয়েছে ৮০ হাজার কোটি টাকার। এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট হয়েছে ৩ লক্ষ মানুষের। বিশ্ব দরবারে আরও কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছে শিল্পকলা, হস্তশিল্পের বিভিন্ন পণ্য। সবই ঠিক হচ্ছে তারপরেও যেন রয়ে গিয়েছে ল্যাক। অনেকেই বলছেন, রাজ্যে ক্রিয়েটিভ ইকোনমি তৈরি হয়েও না হবার কারণ একটাই- সুনির্দিষ্ট পলিসির অভাব। মানে, ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিকে হাতিয়ার করে রাজ্য নিজের আয় বাড়াবে, এটা সামহাউ যেন কোথাও গিয়ে ঠিক দাঁড়াতে পারছে না।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটা রিপোর্ট বলা যাক। ২০২১ সালে সেটা পাবলিশ হয়েছিল। পুরোটাই হয়েছিল ক্রিয়েটিভ ইকোনমির উপর এবং সেটা দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করেই। মণ্ডপ, কেনাকাটা, বিজ্ঞাপনের প্রচার, খাওয়া-দাওয়া, পত্রপত্রিকা পাবলিশ- এই সব মিলিয়ে অঙ্কটা পৌঁছে গেছিল ৩৩ হাজার কোটি টাকায়। কলকাতার দুর্গা পুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে ঐ বছরেই। দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা, ইউনেস্কোর মাথারা সকলেই কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে, তার ইতিহাসের সঙ্গে আলাপ করেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্গা পুজো শেষ হয়ে গেলেও সেই রেশ থেকে যায়। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি বাড়তি অনেক সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগ ঠিক করে কাজে লাগাতে পারেনি রাজ্য সরকার। তার কারণ? অভিজ্ঞ ইকোনমিস্টরা একটা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের বক্তব্য দুর্গা পুজোকে ঘিরে ক্রিয়েটিভ ইকোনমির কথা ভাবা হলেও সেই ইকোনমি কি এখনো আদৌ যথেষ্ট মজবুত, সংগঠিত? নিচু তলার মানুষরা এই দুর্গা পুজো থেকে কতটা লাভবান হন? একটা রিপোর্ট বলছে, দুর্গা পুজোর সময় একটি অখ্যাত চাউমিন, বিরিয়ানির দোকানও ৬-৭ লক্ষ টাকা আয় করে। কিন্তু তার কোন কংক্রিট প্রুফ নেই। ফলে শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়। দুর্গা পুজোকে ঘিরে যে হিউজ একটা ব্যস্ততা চলে, সেটা ক্রিয়েটিভ ফিল্ডের যে-কোন সেক্টর থেকেই হোক না কেন, আর সব সেক্টরে তো নিচু তলার কর্মীরা থাকেনই। দিনের শেষে তাঁরা কতটা বেনিফিটেড হচ্ছেন?
ইনস্টিটিউট ফর কমপিটিটিভনেসের ওয়েবসাইট থেকে আমরা জানতে পারছি, ২০১৭ সালে ক্রিয়েটিভ ইনডেক্সে নজর দিলে আমরা বাংলার নামই দেখতে পাব না। সেখানে তালিকায় রয়েছেঃ দিল্লি, পঞ্জাব, কেরালা, গোয়া, চণ্ডীগড়, হরিয়ানা, কর্ণাটক, মিজোরাম, সিকিম এবং তামিলনাড়ু। ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে ক্রাইম রয়েছেই। শিল্পক্ষেত্রে চুরি, কপিরাইটের ঝামেলা, ফরজারি, ট্রাফিকিং এই সবই হচ্ছে। মূলত কালচারাল হেরিটেজ এবং ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে অপরাধের কারণে ফিনানশিয়ালি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো রাজ্যের অর্থনীতি। অনেকেই বলেছেন, আমাদের এখানে কোন ইনস্টিটিউশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার, এক্সপারটাইজ বা টেকনোলজি কোন কিছুই পর্যাপ্ত নেই। নেই প্রপার কোন পলিসি মেকিং-এর জায়গা। নেই ক্রিয়েটিভ মানুষদের কাছে অ্যাডভান্সড টেকনোলজিকে ছড়িয়ে দেবার কোন প্রচেষ্টা। তাই অনেকেই মনে করছেন, ক্রিয়েটিভ ইকোনমিকে দাঁড় করাতে গেলে সবার আগে নজর দিতে হবে বেশ কয়েকটি সেক্টরে। সিকিউরিটি মেজারস, ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন, পাবলিক অ্যাওয়ারনেস, শিল্পীদের জন্য প্রপার ট্রেনিং, প্রফেশনালি তারা কিভাবে ডেভেলপ করতে পারেন সেদিকে নজর, শিল্প তৈরিতে প্রয়োজনীয় মেটেরিয়াল সাপোর্ট, বাজারের সঙ্গে শিল্পীদের আরও বেশি ডিরেক্ট কানেকশন, বড় বড় কমিউনিটি-তে যাতায়াত। প্রয়োজনে ইন্সটিটিউট তৈরি করে আর্টওয়ার্ককে প্রোমোট করা, আর দিনের শেষে শিল্পীদের একটা শক্তপোক্ত জমি তৈরি করে দেওয়া- এই সবই ক্রিয়েটিভ ইকোনমিকে মজবুত করতে পারে।
আমাদের বাংলায় কুটির শিল্প থেকে সব ধরণের ক্রিয়েটিভ সেক্টরে প্রচুর প্রচুর শিল্পী রয়েছেন। যারা বিশ্ব দরবারে অন্যান্য শিল্পীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে পারেন। কিন্তু তারা যেন আটকে থাকেন ঐ দুর্গা পুজোর মধ্যেই। তারপর এতো এতো শিল্পীরা সেভাবে বিশ্ব দরবারে পৌঁছতেই পারেন না। পারেন না বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের পৌঁছে দিতে। তাদের প্রপার ট্রেনিং দিলে গ্লোবাল এরিনায় তাঁরা ক্রিয়েটিভ ইকোনমিকে বুম করতে অনেকটাই সাহায্য করবেন। সেইভাবে পলিসি তৈরির প্রয়োজন রয়েছে সেটা দেশ হোক বা রাজ্য। প্রত্যেককেই ক্রিয়েটিভ ইকোনমিতে আরও বেশি কনসেনট্রেট করতে হবে। তাহলেই দেখবেন, বাংলার শিল্পীদের ব্যস্ততা শুধু দুর্গা পুজোর মরশুমেই থাকবে না। থাকবে বছরভর। আপনারা কি মনে করেন, মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ