Daily
লাল ফৌজের দেশ চিন। সে দেশের ইউহান প্রদেশ থেকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এক নতুন ধরণের সংক্রমণ। সময়টা ছিল ২০১৯ এর ডিসেম্বর।
আন্তর্জাতিক উড়ানে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিমানের মাধ্যমেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই সংক্রমণ। বাদ পড়েনি ভারতও।
বিভিন্ন দেশে যখন প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণের গ্রাফ, ভারত সরকারও তখন বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া ৯৪৮ জন ভারতীয়কে বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে আনে।
এরপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয় আন্তর্জাতিক উড়ানে। নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও ততদিনে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।
নতুন এই ভাইরাসের কবলে পড়ে বহু মানুষ মারা যান বেঘোরে। শুরু হয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা। বিশেষজ্ঞরা এই নতুন ভাইরাসের নাম দিলেন কোভিড-১৯।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু একে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে হু এটাও জানায় যে কোভিড-১৯ ভাইরাস আসলে একটি মহামারি। এতে প্রাণ হারাবেন বহু মানুষ।
সংক্রমণের ভয়াবহতা বিচার করে ২০২০ ২৪ মার্চ দেশ জুড়ে লক ডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘ মাসের লকডাউনে থমকে যায় গোটা দেশ। এই সময় তৈরি হওয়া নতুন শব্দবন্ধ ‘পরিযায়ী’ তকমা নিয়ে রাস্তায় নামে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ঢল। কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েকশো মাইল শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফেরার তাগিদে ক্লান্ত, অবসন্ন শরীর নিয়ে ঔরঙ্গাবাদের রেললাইনের ধারে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণ হারানোর বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকে দেশ।
কয়েক মাস পরেই দেশজুড়ে শুরু হয় পর্যায়ক্রমে আনলক পর্ব। এই সময় কাজ হারান লক্ষ লক্ষ মানুষ। কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করলেও তা আমজনতার কতটা কাজে এসেছে তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা।
মুখ থুবড়ে পড়ে অর্থনীতি। দিশেহারা কর্মহীন মানুষের ভরসা বলতে শুধুই সরকারি সাহায্য। সেই সাহায্য নিয়েও রয়েছে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের ফুলঝুরি। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে জিডিপি সংকুচিত হয় ২৩.৯ শতাংশ।
রোজগারের আশায় পথে নামে মানুষ। সরকারও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এ বছরের গোড়াতেই ভ্যাকসিন দেবার প্রক্রিয়া শুরু করে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ১০ কোটিরও বেশি মানুষকে দেওয়া হয় করোনার টিকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া না হচ্ছে ততক্ষন কিছুতেই ভাঙা যাবে না করোনার এই কঠিন শৃঙ্খল।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে গত তিনদিনে সংক্রমণের দৈনিক গড় ২ লক্ষেরও বেশি। মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি সহ বেসামাল একের পর এক রাজ্য। কোথাও সাপ্তাহিক নৈশ কার্ফু তো কোথাও চলছে ১৪৪ ধারা। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউতে ইতিমধ্যেই বেশ টলমল ভারত আরও একবার।
পশ্চিমবঙ্গেও প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে সংক্রমণের গ্রাফ। নবান্ন থেকে নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে জেলায় জেলায়। তবুও হাসপাতালে শয্যা পেতে হাপিত্যেশ করছেন মানুষ।
ভোটমুখী বাঙলায় রাজনৈতিক দলগুলির মিটিং মিছিলে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস আর জমায়েত কিসের বার্তা বহন করছে? সংক্রমণ রুখতে রাজনৈতিক দলগুলির কি কোন দায়বদ্ধতা নেই? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন সব দলগুলিকে কঠোরভাবে কোভিড বিধি মানবার নির্দেশ দিয়েছে। তবে থুতনিতে মাস্ক নিয়ে ঘোরা সাধারণ মানুষ যেভাবে হাটে বাজারে, মাঠে ময়দানে, উৎসবে অনুষ্ঠানে ভিড় করছেন তাতে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে চিকিৎসকদের কপালে। পরিস্থিতি যেভাবে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সেখানে পুনরায় দেখতে হবে নাতো লকডাউনের পুরনো দুঃসহ দিনগুলিকে আরও একবার?
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন ২,১৭,৩৫৩ জন
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১,১৮৫ জন
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৬,৯১০ জন
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জন
তাই করোনা অথঃ কিম। কোন পথে হাঁটব আমরা? সেই সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য তথা দেশবাসী নিজেরাই।
ব্যুরো রিপোর্ট