Trending
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরনোর পর কেউ বলছেন এটা বিজেপির নৈতিক পরাজয়। আর কংগ্রেসের নৈতিক জয়। আবার বিজেপির তরফ থেকে বলা হচ্ছে এটা বিজেপির জয় আর দিন শেষে কংগ্রেসের পরাজয়। সেটাই তো আমরা দেখতে পেলাম। তবে বিষয়টা কি এতটাই সহজ? অনেকটা আধ গ্লাস ভর্তি জলের মতন। কেউ দেখেন ভর্তি হিসেবে আর কেউ দেখেন ফাঁকা হিসেবে। নির্বাচনের ফলাফল বেরনোর পর বিজেপি ইতিমধ্যেই ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতিশ কুমারের সঙ্গে জোটবদ্ধ এনডিএ সরকার গঠন করেছে। তবে কংগ্রেস মোদী সরকারের এই জোট দেখে অদূরে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসি হাসছে। সেই হাসি ধরে রেখেছে বাংলার তৃণমূল সরকারও। কারণ কংগ্রেস মনে করছে, এখন বিরোধী আসনে বসে বরং চুপচাপ দেখা যাক। তাই বিরোধী হিসেবেই থেকে গিয়েছে তারা। সময় এবং সুযোগ বুঝে পদক্ষেপ নেবে। সেই ভাবনার সঙ্গে অবশ্য তৃণমূল সরকারের ভাবনার ফারাক রয়েছে। তারা মনে করছে কংগ্রেস সবসময় ইন্ডিয়া জোটের মাথা হিসেবে কাজ করতে চাইছে। তাদের মধ্যে যে কংগ্রেসী অহংকার রয়েছে, সেটা আবার তৃণমূলের না-পসন্দ। তবে যত যাই বলুন না কেন, যা ইচ্ছে বলুন না কেন, দিন শেষে কংগ্রেসের যে নৈতিক জয় হয়েছে সেটা অনেকেই মনে করছেন। এই অনেকের মধ্যে যেমন রয়েছে পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট তেমনই আবার রয়েছেন ভোট কুশলী। পিকে অবশ্য ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন যে, কংগ্রেসের এই নম্বর জাম্প সম্পর্কে কোন আইডিয়া রাখতে পারে নি। আবার অন্যদিকে বিজেপির সামগ্রিকভাবে দেশে নম্বর কমে আসাটাও পিকের মত মাথা ভাবতেও পারেন নি। তবে দিন শেষে বিজেপির হ্যাটট্রিক হয়েছে সেটা মানতেই হবে। কংগ্রেসও হ্যাটট্রিক করল হারে। তারপরেও কংগ্রেস অবশ্য অনেকটাই আশাবাদী। কারণ দেশের বড় বড় রাজ্য যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনেও আতস কাঁচ বা দূরবীন দিয়ে কংগ্রেসকে খুঁজতে হত, সেটা এবারে আর হয়নি। আসন সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কংগ্রেস এখন বিজেপির সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টেক্কা দেবার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে।
যেমন ধরা যাক গুজরাত। এই বছর লোকসভা নির্বাচনে গুজরাতে আসন সংখ্যা ছিল ২৬ তার মধ্যে কংগ্রেস জিতেছে ১টি আসন। উত্তরপ্রদেশ- এখানে রয়েছে মোট ৮০টি আসন। যার মধ্যে কংগ্রেস জোট জয়লাভ করেছে ৪৩টি আসনে। মহারাষ্ট্র- এখানে আসন ছিল ৪৮টি। তার মধ্যে কংগ্রেস জোট জিতে নিয়েছে ৩০টি আসন। মধ্যপ্রদেশে আসন সংখ্যা ২৯। এখানে অবশ্য কংগ্রেস জোট কোন খাতাই খুলতে পারে নি। আর হল রাজস্থান। এখানে আসন সংখ্যা ২৫টি, যার মধ্যে কংগ্রেস জোট পেয়েছে ১১টি আসন। গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ বাদ দিলে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস জোটের তুলনামূলক ভালো ফলাফল এই অক্সিজেন দিয়েছে যে এবার হয়ত কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়ানোর সময় পেয়ে গিয়েছে। বিজেপির চিন্তা অনেকটাই বেড়েছে যদি আপনি এই তিনটি আসনে কংগ্রেসের ফলাফল দেখেন। উত্তরপ্রদেশের কথা যদি ধরি, সেটা যোগীদুর্গ হিসেবেই ২০১৪ থেকে দেখে আসছেন দেশবাসী। তাঁকে আবার বুলডোজার বাবাও বলা হয়। ২০২৪ এও মনে করা হয়েছিল, এবার হয়ত কংগ্রেস জোট উত্তরপ্রদেশে লাড্ডু খেয়েই ঘরে ফিরবে। পরীক্ষা পাশ করতে পারবে না। কিন্তু হল একেবারে উল্টো। দেখা গেল, কংগ্রেস এবং অখিলেশ তলে তলে এই রাজ্যে কতটা শক্তিশালী করেছে নিজেদের। একটা কথা বলা হয় ভারতীয় রাজনীতির অভ্যন্তরে। যার হাতে উত্তরপ্রদেশ, তার হাতে গোটা দেশ। কারণ উত্তরপ্রদেশেই লোকসভার আসন সংখ্যা সবথেকে বেশি। সেখানে কংগ্রেস জোট যে এভাবে বিজেপিকে টাফ ফাইটের মধ্যে ফেলে দেবে সেটা না আন্দাজ করেছিলেন মোদী, না করেছিলেন শাহ, চাড্ডা আর না আন্দাজ করেছিলেন খোদ যোগী। ফলত কংগ্রেস জোটের এই জয় স্বাভাবিকভাবে বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। যোগী দুর্গে চিড় ধরেছে সেটা এখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার। অন্যদিকে যদি রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রের দিকে তাকাই তাহলে সেখানেও দেখা যাবে একনাথ শিন্ডে খুব একটা বেশি মারাঠি মানসে হিরো হয়ে থাকতে পারলেন না। কারণ কংগ্রেস জোটের জাম্পটা হাই ছিল। ফলে তড়াক করে নম্বর সিস্টেমে লাফিয়ে উঠতে পেরেছে কংগ্রেস জোট। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে রাজস্থানে। ফলে দেশের এই তিনটি সবথেকে বড় রাজ্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলো কার্যত কংগ্রেসী জোটেদের মধ্যে নতুন একটা চার্ম ফিরিয়ে দিয়েছে। বিজেপির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে কংগ্রেস ঠিক দশ বছর পর। ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কংগ্রেস কার্যত যেখানে হাওয়ায় ভেসে ভেসে বেরাতে হত এই বছর সে খানিক শক্ত জমি পাওয়ায় অনেকটাই খুশি কংগ্রেস সহ ইন্ডিয়া জোটের কর্তারা। আর ওদিকে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় মাথারা মনে করছেন, কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোট আসলে হেরে গিয়েছে ঠিকই। তবে বিজেপির ভোট পারসেন্টেজ এতো কমল কেন সেটা পর্যালোচনা করতে হবে। তাই নিয়ে কাটাছেঁড়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে কংগ্রেস বসে আছে বিজেপির দিকে তাকিয়ে। কে বলতে পারে, নীতিশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডুর পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডপয়েন্ট যে একেবারেই নেই। যখন তখন ঘুরতে পারে পাশা, আপাতত সেটা দেখার জন্যই কংগ্রেস নিয়েছে ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ পলিসি। তখন কংগ্রেসীরাই সরকার গড়ার জন্য ঝাঁপাবে। এখন সময়ের কথা সময় বলতে পারে। আমরা শুধু দেখতে পারি সামনে যা হচ্ছে। আপনাদের মতামত জানাবেন। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ