Daily
কয়েক মাস আগের ঘটনা। জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন প্রকাশ্যে। এবার সেই একই দৃশ্য। গুলিবিদ্ধ হলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী যখন প্রচার চালাচ্ছিলেন, সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। পিটিআই প্রধানকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুজন আততায়ী। যার মধ্যে একজন আপাতত ধরা পড়েছে। তবে ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছেন পিটিআই চিফ। একইসঙ্গে ইমরান খানকে বাঁচানোর পিছনে আরেকজনের নামও উঠে এসেছে। তিনি ইবতিসাম হাসা। যিনি নিজেও পিটিআই-এর সদস্য। জানা গিয়েছে, ইমরান খান যে গাড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেই সময় ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় আততায়ী। প্রথম গুলি চালানোর পর দ্বিতীয় গুলি চালানোর আগেই সে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যাই হোক, এখন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিপদমুক্ত। আবারও ফিরে আসবেন নিজের ফর্মে, কথা দিয়েছেন তিনি। তবে, ইতিমধ্যেই ইমরান খানের একটি বক্তব্য কার্যত ঝড় তুলেছে পাক মিডিয়ায়। আর সেটা কিছুটা হলেও ভারতের জন্য একটু চিন্তার বিষয়। গুলি চালানোর নেপথ্যে ইমরান যে তিনজনের নাম তুলে ধরেছেন, আজ তাঁরাই পাকিস্তানের ভাগ্যদিশারি। এক, বর্তমান পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, দুই মন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং তিন মেজর জেনারেল ফয়জল নাসির। দেখুন, এবার অনেকগুলো বিষয়। আমরা সবাই জানি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়সীমা এখনো পর্যন্ত কেউ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর বিশ্ব রাজনীতি ভেবেছিল, এবার হয়ত সেই ট্র্যাডিশন ভাঙবে। কিন্তু সেটাও হল না। পাকিস্তানে রাজনৈতিক জটিলতা যেমন রয়েছে, তেমনি অর্থনীতির অবস্থাও বেশ ভয়ের। কারণ, পাকিস্তানে খুব বেশি হলে হয়ত এক মাসের মতো ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর বুকে যদি গুলি লাগত, এবং যদি মৃত্যু হত, তখন পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সিচুয়েশন আরও খারাপ হতে পারত। এখন ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর কারণটা কি?
ইমরান খানের যে ইমেজ রয়েছে সেটা অন্যান্য পাক প্রধানমন্ত্রীর থেকে অনেকটাই ভালো। সেটা বর্তমান পাক প্রধানমন্ত্রীর জন্য যথেষ্ট অস্বস্তির তো বটেই। তবে এগুলো ছাড়াও আরেকটা কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। সেটা হচ্ছে, ভারতকে দেওয়া ইমরানের দরাজ সার্টিফিকেট। খুব বেশিদিনের কথা নয়। ইমরান খান তখন গদিচ্যুত। এমন সময়েই একদিন ভারতের বিদেশনীতির দারুণ প্রশংসা করেন তিনি। একইসঙ্গে জানান, ভারত পাকিস্তানের মত আমেরিকার পিছনে বা শুধু রাশিয়ার পেছনে ছোটে না। তারা যা চায়, সেভাবেই কাজ করে। বক্তব্যের প্রকাশ ছিল এটাই। যা সেই সময় আন্তর্জাতিক মহলে বিদেশমন্ত্রী এস.জয়শঙ্কর’কে ইয়েস বস অফ ইন্ডিয়া ইমেজ তৈরি করে। এখন অনেকেই মনে করছেন যে, ইমরানের ভারতপ্রীতি মনোভাব একেবারেই ভালো নজরে দেখতে চায় না বর্তমান শাহবাজ শরিফ সরকার। তাই ওয়াঘা বর্ডারের অন্যপ্রান্তে ইমরান ইমেজ বেশ অশান্তি তৈরি করেছে পাক রাজনীতির অভ্যন্তরে। তার মানে কি দাঁড়াল? প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ভারত ঘেঁষা? ইমরান খানের দুর্দান্ত ইমেজের কাছে হেরে যাওয়া? আসলে কোনটা? আর ইমরান খানকে গুলি করে আলাদা কোন বার্তা কি দেওয়া হচ্ছে? ভারত সরকার অবশ্য এই সব বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে চাইছে না। ভারতের বিদেশমন্ত্রক পুরো সিচুয়েশনের দিকে নজর রেখেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, পাকিস্তান বা ভারত যাই হোক না কেন, বাক-স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে। আর পাকিস্তানের অর্থনীতি যখন এত খারাপ অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তখন সেই দেশের উচিৎ তাদের ডেভেলপমেন্টের জায়গা তৈরি করা। কারণ, এই বিষয়গুলো যেমন পাকিস্তানের ভেতরের সুস্থ রাজনীতিকে অস্থির করে তুলছে তেমনি ভারতকেও খুঁচিয়ে ঘা করার চেষ্টা করছে তারা। বিবাদ, অশান্তি এইসব ভুলে গিয়ে দুটো দেশ যদি খুব ভালোভাবে নিজেদের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের কথা ভাবে তাহলেই তো সব ঝামেলা মিটে যায়। কিন্তু পাক রাজনীতি কি সত্যিই অশান্তি মেটানোর পক্ষে? আপনারা কি বলছেন? জানান, কমেন্ট বক্সে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ