পোনা মাছ চাষ করে যত না লাভ, তার চেয়ে লাভের অঙ্ক অনেকটাই বেশি থাকে যদি মৎস্যচাষিরা রঙিন মাছ চাষের দিকে ঝোঁকেন। থাকতে হবে একটি বড় পুকুর। আর সেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে যদি রঙিন মাছ বেড়ে ওঠে তাহলে আর দেখে কে। মৎস্যচাষিদের খরচাও যেমন অনেক কম হবে। তেমনি লাভের অঙ্ক থাকবে আরো বেশি। এটা পরীক্ষিত সত্য। যার হাতে গরম প্রমাণ পেয়েছেন মৎস্যচাষি বিকাশ সাউ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং ১ ব্লকের দিঘীরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ট্যাংরাখালি কয়ালপাড়া এলাকায় সাধারণ মাছ চাষের পাশাপাশি প্রযুক্তিগতভাবে চাষ করা হচ্ছে রঙিন মাছ। ক্যানিং ১ ব্লক মৎস্য দফতরের সহযোগিতায় প্রায় এক বিঘা পুকুরে এই রঙীন মাছ চাষ শুরু হয় গত দুমাস আগে। গোল্ড ফিশ,ডিসকাস,অসকাস,রেড ক্যাপ,রেড আই,মিল্কি,বার্ব প্রজাতির রঙীন মাছের এক লক্ষ চারা ছাড়া হয় একবিঘা পুকুরে। সবচেয়ে বড় ব্যপার কোন প্রকার রাসায়নিক বা ওষুধ ছাড়াই একেবারে প্রাকৃতিক নিয়মে এই মাছগুলি বেড়ে উঠেছে ভালোরকম। খোলামেলা পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে এতো কম সময়ে রঙিন মাছের বেড়ে ওঠা সত্যিই অবিশ্বাস্য। আর মাছের এই বাড়বাড়ন্তে নতুন দিশা যেমন খুঁজে পেয়েছে মৎস্য দফতর। তেমনি রঙিন মাছ চাষে ভালোরকম লাভের আশা দেখছেন মৎস্যচাষি নিজেও।

রঙিন মাছের কদর রয়েছে ঠিকই। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী জোগানের অভাব একটু থেকেই গিয়েছে। তাই মৎস্যজীবীরা যদি এই মাছ চাষে উৎসাহী হন, তাহলে আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন তাঁরাই। এমনটাই মনে করছেন শস্য শ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মুখ্য বিজ্ঞানী নারায়ণ চন্দ্র সাউ। সবথেকে বড় কথা এই বিষয়ে মৎস্যজীবীদের সবরকমভাবে সাহায্য করবেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। রয়েছে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।

রঙিন মাছ চাষের প্রতি সাধারণ মানুষের ঝোঁক বাড়ার কারণে এই রঙিন মাছের উপর নির্ভর করেই বহু মানুষ নিজের কর্মসংস্থানের দিশা খুঁজে পাবেন। কম সময়ে ভালো লাভ করতে পারবেন মৎস্যজীবীরা। তাই ক্যানিং ব্লকের অন্যান্য জায়গায় চাষীরা যাতে করে রঙীন মাছ চাষে আগ্রহী হয় সে ব্যাপার আরো বেশি করে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্যানিং ১ ব্লক মৎস্য আধিকারীক অরুন কুমার দেব। সরকারিভাবে করা হবে সব ধরণের সাহায্য।

পঞ্চাশ দিনেই মাছ চেহারায় বেড়ে উঠেছে। রঙিন মাছগুলি দেখতেও যেন সুন্দর হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে, পুকুরের মধ্যে মাছেদের এই বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে বিকাশবাবুকে অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে। লাভের দিক থেকেও বিকাশবাবু অনেকটা নিশ্চিন্ত। উপযুক্ত পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ পেয়েই বিকাশবাবু সাফল্যের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছেন। তাই তিনিও অন্যান্য মৎস্যচাষিদের রঙিন মাছ চাষ করতে অনুরোধ করেন। ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হবেন মৎস্যচাষিরাই।

দীপান্বিতা দাস
দক্ষিণ ২৪ পরগনা