Story
দেবস্মিতা মণ্ডল, উত্তর ২৪ পরগণাঃ চাষাবাদ আর লাভজনক নয় বলে যখন মাঠের থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন অনেক চাষি পরিবার সেখানে উচ্চশিক্ষিত যুবক পকেটে ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি নিয়ে চাকরির দরজায় ইতি টেনে মাঠমুখী হয়ে লাভের অঙ্ক ঘরে তুলছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
রাখলেন কৃষকদের সামনে খুব ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। নিজের জমিতেই পলিহাউস তৈরি করে গরমে রঙিন ক্যাপসিকাম ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন অন্যান্য চাষিদের।
ইনি আবুল বাশার। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাসাত ১ নং ব্লকের দত্তপুকুরের বাসিন্দা। বিজ্ঞানে স্নাতক এই যুবকের ছোটবেলা থেকেই ছিল কৃষির প্রতি গভীর টান। তাই এমবিএ কোর্স করে বেসরকারি চাকরি জুটলেও চাকরিতে দাঁড়ি টানেন ২০১৫ সালে।
মনস্থ করেন মাঠে ফিরবেন। এই সময় খড়গপুর আইআইটি থেকে এক মাসের পলিহাউস চাষের বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের ১৫ কাটা জমিতেই জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের সহযোগিতায় তৈরি করেন ১ হাজার স্কোয়ার মিটারের পলিহাউজ। আর এখানেই ফলেছে সফলতার জিয়নকাঠি। সারি সারি গাছে ফুটে উঠেছে লাল, হলুদ, বেগুনি রঙের ক্যাপসিকাম। শীতের ফসল গরমে ফলিয়ে আয় যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে বিদেশে রপ্তানির চাহিদাও। খোলা মাঠ ফেলে প্লাস্টিকের ঘেরাটোপে প্রতিদিন একটু একটু করে বড় হচ্ছে আবুলের ভবিষ্যতের রোজগার।
একহাজার স্কোয়ার মিটার পলিহাউজ তৈরি করতে খরচ হয় ১০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে অবশ্য সরকারি ভর্তুকিও পাওয়া যায় অর্ধেক পরিমাণ। খরচখরচা বাদ দিয়ে লাভের অঙ্কটা নেহাতই মন্দ নয়। এই পলিহাউজে মাত্র আট মাসেই গাছে ফল এসেছে। ২৫০০ গাছের চাড়া থেকে প্রায় ৩ কেজি মত কালার ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। পাইকারি বাজারদর একশো টাকা প্রতি কেজি কালার ক্যাপসিকামে। সেক্ষত্রে গড়ে গাছ পিছু সব্জি বিক্রির পরিমাণ হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
শ্রমিক, সার, কিটনাশক সব খরচ বাদ দিয়েও লাভের অঙ্কটা বেশ ভালো এই পলিহাউজ চাষে। লাভের অঙ্ক বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেকগুলি ফ্যাক্টর এখানে কাজ করে। বাইরের পোকামাকড়ের সংক্রমণের সম্ভাবনা এখানে থাকে না। তাপমাত্রাও হয় নিয়ন্ত্রিত। তাই চারা নষ্টের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। উল্টে ড্রিপ পদ্ধতিতে কালো পাইপের সাহায্যে প্রতিটা গাছের গোরায় খুব সামান্য পরিমাণ জলসেচ লাগে এই চাষে। সবমিলিয়ে খোলা মাঠের চাইতে পলিহাউজ পদ্ধতিতে খরচের বহরটা অনেকটাই কম হয়।
খোলা মাঠে সবুজ ক্যাপসিকামের সঙ্গে পলিহাউজে কালার ক্যাপসিকাম চাষের ফারাক বিস্তর। খোলা মাঠে কালার ক্যাপসিকাম একপ্রকার হয়না বললেই চলে। আর দীর্ঘ মেয়াদিতে লাভ পেতে গেলে অর্থাৎ এক গাছ থেকে অধিক ফলন পেতে গেলে পলিহাউজই প্রয়োজন।
কৃষকদেরকে উৎসাহ দিতে মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করে চলেছেন জেলার কৃষি বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। সঙ্গে রয়েছেন উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিকরাও। তাই কোন চাষি যদি মনে করেন পলিহাউজ বানাবেন তাদেরকেও এই যুবক জানালেন কিভাবে সরকারি সাহায্য মিলবে। পলিহাউজ থেকে ভালো টাকা রিটার্ন পাওয়া যায়। মেলে সরকারি সহায়তাও।
দত্তপুকুরের আবুল আজ পলিহাউজ চাষে জেলার মধ্যে অতি পরিচিত নাম। আবুল শুধু নিজেই চাষ করছে না। পরামর্শও দিচ্ছেন অন্যান্য চাষিদের। নিজে স্বনির্ভর হয়ে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন অন্যদেরকেও।