Story
বি পি এন ডেস্ক: বেল যদি শ্রীফল হয় নারকেল তবে কল্পবৃক্ষ। যার একশো শতাংশই কাজে লাগে দৈনন্দিন জীবন যাপনে। দিনযাপনের দিনলিপি হয়ে উঠতে পারে এই গাছ। হয়ে উঠতে পারে পথচলার ক্ষেত্রে বেমিসাল নজির। নারকেলের নানান গুনে নিজেদেরকে গুনান্বিত করে স্বনির্ভর হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। মূলত সমুদ্রতটীয় বৃক্ষ হলেও গ্রাম বাংলায় কিংবা শহরে চোখ সহা গাছ এই নারকেল।
গাছটি জাতের বিচারে গৃহলালিত হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এই গাছ চাষ করে প্রচুর মানুষ স্বনির্ভর হয়েছেন নিজেদের জায়গাতেই। নারকোল আদতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে ফললেও আজ কমবেশি ৯৩টিরও বেশি দেশে এই গাছের জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। তার মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াতেও নারকেল উৎপাদনে অগ্রগণ্য দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ভারতে কোকোনাট ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নিজেদের সমুদ্রতটীয় অঞ্চলে এই গাছের বাণিজ্যিক গুনাগুণ বিচার করে এই গাছের চাষে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের ২০ লক্ষ হেক্টর জমিতে সারি দিয়ে চাষ হচ্ছে নারকেল। তার সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ লক্ষ হেক্টর জমিতেও ডেভেলপমেন্ট বোর্ড চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তই প্রমাণ করছে আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য।
আন্তর্জাতিক বাজারে নারকেল ফলের জল থেকে যেমন বিভিন্ন ওষুধ তৈরি হয়, তৈরি হয় রেডিমেড প্রিজারভেটিভ ড্রিঙ্ক। তেমনই এর শাঁস থেকে তৈরি হয় দুধ, ক্রিম, ভোজ্যতেল, মাথায় মাখার তেল সহ নানান ধরণের বাইপ্রোডাক্ট। সবগুলোই অর্থকরী। যা কোন না কোনভাবে ভারতে নিয়ে আসে বাণিজ্যের সম্ভারকে। দেখে নেওয়া যাক নারকেলের খাদ্যগুনঃ কার্বস ১৫ গ্রাম , ফাইবার ৯ গ্রাম, ফ্যাট ৩৩ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ, ৭৫%
কিভাবে করবেন নারকেল গাছের চাষঃ ৬X৬ মিটার হিসেবে হেক্টর প্রতি জমিতে ২৭৮টা চারা লাগানো যায়। চারা লাগানোর জন্য যে গর্ত খুঁড়তে হবে তার মাপ হতে হবে ৩ ফুটX৩ ফুটX৩ ফুট। গর্তের মধ্যে দিতে হবে ১৫-২০ কেজি পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার। পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য প্রতি গর্তে ৫০ গ্রাম মত কীটনাশক দিতে হবে। সব মিশিয়ে ভরাট করতে হবে গর্ত। তারপর জল দিয়ে গর্ত ভেজাতে হবে। যাতে সকল সার ও অন্যান্য উপাদান মিশে যায়। এরপর গর্তের মাঝখানে গাছের চারা রোপণ করতে হবে। এমনভাবে চারা রোপণ করতে হবে যেন গাছের খোসা সংলগ্ন চারার গোরার অংশ মাটির ওপরে থাকে। চারা রোপণের সময় মাটির নিচের দিক ভালোভাবে চাপা দিতে হবে। এরপর সেচ করতে হবে। গরমের সময় যেমন জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে, বর্ষার সময় তেমনই জল বেরনোর ব্যবস্থাও রাখতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করতে হবে ২০ দিন পরপর। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য প্রতি ১৫ দিন অন্তর গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। ২৪ মাস পর প্রতি গাছে বছরে ৫.৫ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, ৭ কেজি মপ এবং ৫০ কেজি গোবরসার তিন মাস অন্তর চার ভাগে ভাগ করে দিতে হবে। এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ১৫০ গ্রাম প্রতি ছ’মাস অন্তর এবং বোরন সার ১০০ গ্রাম বছরে দুবার করে দিতে হবে।
সঠিক পরিচর্যা করলে পেতে পারেন গাছ প্রতি ২৫০টি ডাব। ফলন পেতে সময় লাগে ২.৫-৩ বছর। এই গাছের বাণিজ্যিক হিসেবটাও বেশ চমকপ্রদ। বর্তমানে রাজ্যে একটি ডাবের হোলসেল প্রাইস ১৫ টাকার মত। সেই হিসেবে যদি একটি গাছ থেকেই ২৫০টি ডাব পাওয়া যায় তাহলে গাছ প্রতি কৃষকের আয় হতে পারে ৩৭৫০ টাকার মত। আর ২৭৮টা গাছ থেকে কৃষক আয় করবেন ১০ লক্ষ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।
ধৈর্য, পরিশ্রম এবং একটু সময় দিতে পারলেই কল্পবৃক্ষ আপনার সামনে খুলে দেবে আয়ের পথ। একদিকে যখন কৃষকেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষাবাদ থেকে তখন নারকোল গাছ চাষ করতে পারলেই আপনি হয়ে উঠতে পারবেন স্বনির্ভর। সাফল্যের রাস্তায় আর কোন বাধা থাকবে না।