Story
মাটির টানে মৃন্ময়ী হন দেবী। আবার মাটির টানেই ঘর সেজে ওঠে শৌখিনতায়। বাঙালিয়ানায় মাটির টান থাকবে না, তা কী করে হয়? তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাটির ছোঁয়া লেগেছে নারির ভূষণেও। অলংকার যদি একজন নারীর অহংকার হয়, তবে মাটির গয়না যে একজন নারীর বাঙালিয়ানাকে আরো বেশি তুলে ধরে সেকথাও অস্বীকারের জায়গা নেই।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই মাটির ছোঁয়া এবার গয়নাতেও। আর সেই গয়নার চাহিদা প্রতিবছর এতটাই বেড়েছে যে পুজোর আগে ব্যস্ততা চরমে উঠেছে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ ব্লকের কুনোর হাটপাড়ার টেরাকোটা শিল্পীদের। বিভিন্ন ডিজাইনের গলার হার, কানের দুল, হাতের বালা, মালার সেট সবই তৈরি হচ্ছে মাটি দিয়ে। একেবারে নিখুঁত কিন্তু মাটির গন্ধ যেন শিল্পকে নিয়ে গিয়েছে অন্য জায়গায়। তেমনই একজন টেরাকোটা শিল্পী দুলাল চন্দ্র রায়। মাটি দিয়ে একের পর এক শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছেন বিগত ৪০ বছর ধরে। আগে বিভিন্ন শৌখিন জিনিস তৈরি করলেও চাহিদা বাড়ার কারণে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখন তৈরি করছেন মাটির গয়না।
নিজের মত ডিজাইন করে মাটির গয়না বানিয়ে চলেছেন দুলালবাবু। তবে গ্রাহক যদি তাঁকে কোন ডিজাইন দিয়ে দেন, সেই ডিজাইনেও গয়না বানিয়ে দিতে পারবেন তিনি। সামনে পুজো। তাই মা-বোনেদের মধ্যে গয়না কেনার চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। চাপ বেড়েছে দুলাল বাবুর মত টেরাকোটা শিল্পীদের।
শুধু এই রাজ্যে নয়। রাজ্যের বাইরে তো বটেই, এমনকি আমেরিকা, লন্ডন বা রাশিয়ার মত ভিনদেশেও মাটির গয়নার প্রচলন অনেকটা বেড়েছে। অর্থাৎ রাজ্যস্তরে তো বটেই বিদেশের বাজারেও ব্যবসা ভালোই হয় শিল্পীদের। এছাড়া সরকারি সাহায্য তো রয়েছেই। স্বীকার করলেন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য দীপা সরকার।
ভবিষ্যতে শিল্পীদের সমস্ত রকম সরকারি সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সঙ্গে বলেছেন, ব্যবসার প্রসার কিভাবে হতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখছে সরকার। অতিমারিতে একদিকে যখন বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে, শিল্পকর্মে নেমেছে অন্ধকার তখন দুর্গা পুজোয় আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে পুজোর সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষের মনে। মাটির গয়না প্রস্তুতকারী টেরাকোটা শিল্পীরা যে তাঁদেরই একজন।
অনুপ জয়সোয়াল
উত্তর দিনাজপুর