Market
দীপাবলিতে ঘরের কোণে জ্বলে ওঠে মাটির প্রদীপ। সেই আলোতেই দূর হয় সকল আঁধার। এই বিশ্বাসেই মাটির প্রদীপের চাহিদা দীপাবলির সময় তুঙ্গে ওঠে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন প্রদীপের বাজার গ্রাস করেছে টুনি বাল্ব, চিনা লাইট। অপেক্ষাকৃত সস্তা এই টুনি বাল্ব বা চিনা বাল্বের কাছে অনেকটাই টিমটিম করছে মাটির প্রদীপের বাজার। তবু ভাটা নামেনি প্রদীপ তৈরি করা এই মৃৎশিল্পীদের উৎসাহে।
পুরুলিয়া জেলার ২নং ব্লকের কোটলুই গ্রাম। এখানে শুধু মাটির প্রদীপই তৈরি হয় না। এই গ্রামের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে মৃৎশিল্পের জন্য। এই এলাকার কুমোরপাড়ায় এখন বাস ৭০ থেকে ৮০টি পরিবারের। যারা সকলেই পেশার টানে মাটির বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে থাকেন। কলসি, হাঁড়ি, লক্ষ্মীর ভাঁড়, ধুনুচি, চায়ের ভাঁড়ের মত বিভিন্ন সামগ্রী তাঁরা তৈরি করেন বছরভর। তাই সারা বছর এই সকল সামগ্রীর চাহিদা থেকেই যায়। তবু পুরুলিয়ার এই মৃৎশিল্পীদের বিশেষ নজর থাকে দীপাবলির সময়। কিন্তু এই বছরে যেন গোটা ছবিটাই বদলে গেল প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে। পরপর নিম্নচাপের জের। তার সঙ্গে করোনার থাবা। সব মিলিয়ে মৃৎশিল্পীদের বিকিকিনি অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে।
অন্যান্যবারের মত চাহিদা না থাকলেও একেবারে যে চাহিদা নেই সে কথা বলা ভুল। তবে বিক্রির হাল হকিকত নিয়ে তাঁদের মধ্যেও জমা হয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ এই সকল শিল্পকর্ম তৈরিতে তাঁদের উৎসাহে কোন ভাটা নেই। প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে বিক্রি নিয়ে।
শুধু পুরুষরাই নন। এই কাজে হাত লাগিয়েছেন পুরুষের সঙ্গে বাড়ির মহিলারাও। সংসারের কাজ সামলে তাঁরাও একসঙ্গে তৈরি করছেন মাটির প্রদীপ।
তাঁদের তৈরি করা প্রদীপ যেমন পুরুলিয়াতেই পাইকারি দরে বিক্রি হয় তেমনি পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ডেও পৌঁছে যায় তাঁদের শিল্পকর্ম। তবে অতিমারি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের জোড়া আক্রমণ থাকলেও মাটির জিনিস তৈরিতে নামেনি ভাটা। বরং তাঁদের উৎসাহ এবং পরিশ্রমের কারণেই যেন মাটির সামগ্রীগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাই সরকারের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। সংগঠিত বাজার ও সরকারি সুযোগ – সুবিধার কিছু ব্যবস্থা এই পেশাকে ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে বলে তাঁদের আশা। তাই চাহিদা কমলেও ব্যস্ততা কমেনি পুরুলিয়ার কোটলুই গ্রামের কুমোরপাড়ায়।
সন্দীপ সরকার
পুরুলিয়া