Daily
মংপু। কার্শিয়ঙের পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম। গ্রাম তো নয়, যেন পাহাড়ের বুকে একফালি স্বর্গ। নিরিবিলি- ছিমছাম- সুন্দর। যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে ভ্রমনপিপাসুদের দল বারবার ছুটে ছুটে যেতে চায়, তার কাছে। অফ-বিট জায়গা হিসেবে পর্যটনপ্রেমীদের লিস্টে মংপুর জায়গা থাকে মোটামুটি উপরের দিকেই। কাজেই পর্যটন বাণিজ্য যে এখানকার অর্থনীতির শিকড়, সেটা বলাই যায়।
কিন্তু জানেন কি, শুধুমাত্র ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবেই নয়। এখানকার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রতপভাবে জড়িয়ে আছে আরও একটা ব্যবসা? কি জানেন? সিঙ্কোনা চাষ। আজ থেকে নয়। সেই ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকেই গ্রামের মানুষজন সিঙ্কোনা চাষের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার ঘরে ঘরে রয়েছেন সিঙ্কোনা চাষি। আর এখানকার পাহাড়ি পরিবেশ সিঙ্কোনা চাষের জন্য আইডিয়াল হওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সেটা একটা এক্সট্রা অ্যাডভান্টেজ তো বটেই।
ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ হিসেবে সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকে তৈরি হয় কুইনাইন ওষুধ। ছোটবেলার জীবন বিজ্ঞান বইতে লেখা এই লাইনটা গাঁতিয়ে মুখস্থ করার পর, সিঙ্কোনা গাছের ঔষধি গুণ নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকতেই পারে না। মংপু গেলেই চোখে পড়বে, এখানকার প্রতিটি মানুষ ঠিক কতটা জড়িয়ে রয়েছেন এই সিঙ্কোনা চাষের সঙ্গে। গাছের ছাল তুলে একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে সেগুলোকে শুকিয়ে, থেঁতো করে তৈরি করা হচ্ছে পাউডার। আর সেই পাউডার প্যাকেটবন্দী হয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ল্যাবে। ওষুধ তৈরির উদ্দেশ্যে।
এখানকার শ্রমিকেরা আজও মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে পরিষেবা দিয়ে থাকেন। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। মাত্র ২০০ টাকা। তবে প্রতি ১০ বছর অন্তর পদন্নতি হয় তাদের। সেই অনুযায়ী বাড়ে বেতনও। নিয়মটা যদিও সেই ব্রিটিশ সরকারেরই চালু করা। তবে লাস্ট ১০ বছরের সেসব কিছুই হয়নি। তাই, খানিকটা বাধ্য হয়েই আন্দোলনের পথ বাছেন শ্রমিকরা।
পারিশ্রমিক যাই হোক না কেন। এই সিঙ্কোনার সাম্রাজ্য বাঁচিয়ে রাখাটাই আসলে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তাই শত কষ্ট, শত আন্দোলনের পরেও সিঙ্কোনা বাগানে কাজ করেই দিন কাটাচ্ছেন দার্জিলিঙের বহু গ্রামের মানুষজনেরা।
অরূপ পোদ্দার
দার্জিলিং