Agriculture news
পাথরে ফুল ফোটানো গেলে গরমেও চন্দ্রমল্লিকা ফোটানো যায়। বিশ্বাস না হয়, তো চলুন নদীয়া জেলার হরিণঘাটাকাষ্ঠডাঙায়।
যতদূর চোখ যাচ্ছে, ততদুর পর্যন্ত শুধু চন্দ্রমল্লিকার রাজত্ব। জমির পরিমাণ প্রায় ১১ বিঘা। এইরকম ঘরের ভিতর চাষ হচ্ছে বলে আপনিও কি অবাক হচ্ছেন? আমরাও হয়েছিলাম। এই প্রসেসের নাম পলি হাউজিং। কৃষিক্ষেত্রে এখন ভীষণভাবে জনপ্রিয় এই পলি হাউজিং। কেউ কেউ একে গ্রিন হাউজও বলে থাকেন। তবে নামে আর কি বা যায় আসে বলুন? কাজে কতদূর সেটাই আসল বিষয়।
এই বিশাল প্রজেক্টের মালিক সুশান্ত মণ্ডল। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, এই পলি হাউজে চাষের পারফরম্যান্স নাকি দুর্দান্ত। নার্সারি নিয়ে অভিজ্ঞতা তার বহু পুরনো। তবে গত দু’বছর যাবত পুরোপুরি এই চন্দ্রমল্লিকা লালনপালনের নিজুক্ত করেছেন নিজেকে। শুরুর আগে যেমন আর সকলে সার্ভে করে, উনিও তেমন ভাবেই এগিয়েছেন। তারপর অন্য কারও সাহায্যও ছাড়াই নিজের বুদ্ধিতে তৈরি করেছেন পলিহাউজ। দু’বছর আগে মাত্র একটা শেড দিয়েই শুরু হয়েছিল। এরপর সেই সংখ্যা বেড়ে পৌঁছয় ৭৫-এ। নাহ। আমরা আর কিছু বলব না। ওনার গল্প ওনার মুখ থেকেই শুনুন।
শীত মরশুমের রানি এই চন্দ্রমল্লিকা। আলো-ঝলমলে ওয়েদার আর একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা তাপমাত্রা- বেড়ে উঠতে এদের দাবি শুধু এটুকুই। তাই গরম কালে খোলা আকাশের নিচে চাষ করাটা কঠিন। কিন্তু ট্রান্সপারেন্ট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ঘেরাও করে এসি চালিয়ে দিলে তো আর কোন সমস্যা নেই। হ্যাঁ! আর্টিফিশিয়ালই শীতকাল ক্রিয়েট করা। তাতে যদি বছরভর চন্দ্রমল্লিকা মেলে, ক্ষতি তো কিছু নেই। বরং লাভই। বিপুল লাভ।
হিমাচল প্রদেশ, ব্যাঙ্গালর অত্যাদি জায়গায় চন্দ্রমল্লিকার চাহিদা প্রচুর। পিক সিজনে প্রায় দের লাখের উপর চারা পাঠান তিনি। তবে ড্রাই টাইমে খুবই কম হয় বিক্রিবাট্টা। যদিও তিনি জানেন, লাভ-ক্ষতি সবটা মানিয়ে নিয়েই তাকে চলতে হবে।
একার চেষ্টায় এতদুর এগিয়েছেন জন্য সাধুবাদ তাকে জানাতেই হয়। আর নিজে এগিয়েই থেমে থাকেননি। রুজিরুটির ব্যবস্থাও করেছেন অনেকের। প্রতিদিন তার জমিতে কাজ করেন ২৫ থেকে ৩০ জন মতন। চন্দ্রমল্লিকার পলিহাউজের পরিচর্যা থেকে এয়ারপোর্টে ডেলিভারি- এই সবটাই একদম সিস্টেম্যাটিকভাবে করে থাকেন তারা।
নদিয়া জেলার দু’চার জন মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সুশান্ত বাবু জানান, তার প্রোজেক্টটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড়। আসলে এসি কিনে সেই বিল মেটানোর মতো ক্ষমতা সকলের থাকে না। হ্যাঁ! সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো ছবিটাই বদলে যেতে পারে। ঠিক যেভাবে গল্প লিখেছেন সুশান্ত বাবু নিজে। সেভাবেই হয়তো নদীয়া জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের গল্প লিখতে পারেন আরও অনেকেই।
সুব্রত সরকার
নদীয়া