Trending
ভারত খরায় খটখট করবে নাকি বন্যা ভাসবে, সেটা এবার থেকে ডিসাইড করবে চিন। শুধু ভারত নয়। চিনের ফাঁপরে পড়বে বাংলাদেশও। ভারতের ভূগোল বদলানোর চাবিকাঠি এখন চিনের হাতে। পিঠে নয়। পেটে মারবে দেশটা!
বাঁধ, যা কমিয়ে দিতে পারে পৃথিবীর গতি, দীর্ঘ হয়ে যায় দিনও, তেমনই বাঁধ তৈরি করে ভয় ধরাচ্ছে চিন। ২০০৫ সালে চিনের থ্রি গর্জেস বাঁধ নিয়ে নাসার বিজ্ঞানীদের রায় কি ছিল শুনেছেন? তারা বলেছিলেন, থ্রি গর্জেস বাধের বিপুল জলরাশির চাপে পৃথিবীর মাঝের অংশ সামান্য ফুলে গিয়েছে আর দুই মেরু চেপে গিয়েছে। শুধু তাই নয়। এই বাঁধ পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগে পরিবর্তন এনেছে। কমিয়েছে আহ্নিক গতি। ফলে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়েছে। ২৬ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্টে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে যে বাঁধ চিন তৈরি করেছে তার ফলে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়েছে ০.৬ মাইক্রোসেকেন্ড। এবারে এর চেয়েও তিনগুণ বড় বাঁধ তৈরির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে চিন।
বাঁধ-যুদ্ধে বাঁধাহীন চিন। ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়াকে শায়েস্তা করতে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ছোট-বড় একাধিক ড্যাম তৈরিতে মরিয়া দেশটা। নিজের মুখে সেই খবর কোনদিনই খোলাসা করেনি তারা। কিন্তু এই ভয়ানক খবর উঠে আসছে স্যাটেলাইট চিত্র থেকে। যেটা সচরাচর ভুয়ো ইনফরমেশন দেয় না। এবার চিনের নজরে যে নদীর কন্ট্রোল রয়েছে, সে শুধু ভারতকে নয়। নেপাল এবং বাংলাদেশকেও শেষ করে দিতে পারে। এই প্রথম একটা মাত্র নদীকে কেন্দ্র করে ভারত-বাংলাদেশের স্বার্থ এক কাতারে দাঁড়াতে যাচ্ছে।
ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে পৃথিবীর উচ্চতম নদী ইয়ারলাং জাংব। তিব্বতে সাংপো, অরুণাচলে সিয়ং আর আসাম এবং বাংলাদেশে যার নাম ব্রহ্মপুত্র। ভারতের বর্ডার থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর চিন চুপিচুপি এই ড্যাম নির্মাণ করতে চলেছে। যা বিশ্বের বৃহত্তম ড্যাম হতে যাচ্ছে। যার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ গিগাওয়াট। প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আড়াই গিগাওয়াট। তাহলে আপনারা নিজেরাই ভেবে দেখুন, তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রের উপর বাঁধ তৈরি করে কতবড় দক্ষযজ্ঞ বাঁধাতে যাচ্ছে চিন।
নির্মীয়মাণ চীনা সুপারড্যাম নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। শঙ্কায় ভারত। কারণ এর ফলে থমকে যেতে পারে গঙ্গার গতিপথ। তিব্বতের কৈলাসে যে হ্রদ থেকে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি, তা পৃথিবীর ছাদ। সেখান থেকে শুরু করে অরুনাচল প্রদেশ এবং আসাম পর্যন্ত এলাকা পরিবেশের দিক থেকে খুবই স্পর্শকাতর। একবার যদি বাঁধ বানিয়ে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথে কোন পরিবর্তন নিয়ে আসে তাহলে নদের নিম্ন অববাহিকার জনজীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। চিনের এই রেকর্ড নতুন নয়। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে চাপে রাখতে মেকং নদীতে বাঁধ বানিয়েছে চিন। যে মেকং নদী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষের লাইফলাইন। এখন মেকং নদীর জলের গতিধারা পুরোটাই চিনের কন্ট্রোলে।
বিশ্বের উপর ছড়ি ঘোরাতে এতটাই নাছোড়বান্দা চিন যে মিনিমাম এটিকেটস তাও ভুলে গিয়েছে। অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীপ্রবাহে পরিবর্তন আনতে পারে এমন কোনো কাঠামো তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত এবং চিনের সহমতে জলবন্টন চুক্তি সই করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু চিন সেটা করেনি। উপরন্তু নিজের এই কুকর্মের জন্য শালিশি করেছে। তারা জানিয়েছে, নিজেদের নদীতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন চীনের বৈধ অধিকারের মধ্যে পড়ে। আর তাছাড়াও আসাম এবং অরুনাচলের বৃষ্টিপাত নাকি ব্রহ্মপুত্রের গতিপথে জলের ধারা অব্যাহত রাখে। তাই এসব ঠিক থাকলে চিনের তৈরি ড্যাম ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে কোনরকম ক্ষতি করবে না।
কিন্তু নামটা যখন চিন আর প্রসঙ্গটা যখন ভারত, তখন সিদ্ধান্ত এত সহজ হওয়ার নয়। নয়ও। তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ যদি একটা ওলটপালট করে দেখা যায়, তাহলে সবার আগেই যেটা চোখে পড়বে, সেটা হচ্ছে নদের গতিপথে তৈরি হয়েছে এমন এক গিরিখাত যা গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের থেকেও দ্বিগুন গভীর। তৈরি হয়েছে বেশ কিছু রিজার্ভর। আপনারা জানেন কি, ব্রহ্মপুত্র ওয়াটার ভ্যালি এশিয়ার বৃহত্তম আনট্যাপড ওয়াটার রিজার্ভর? আর এই রিজার্ভরের এক তৃতীয়াংশ মালিকানা রয়েছে চিনের দখলে। আর ঠিক এই কারণেই ছোট-বড় একাধিক বাঁধ নির্মাণ করে আর্টিফিশিয়ালি নদীর প্রবাহকে বাধা দিতে চায়। চিনের সুপারড্যাম এক্ষেত্রে একটা মারন অস্ত্র তো বটেই। একটা নদীকে উৎস থেকে আটকে দেওয়া মানে যে নিম্ন অববাহিকার অঞ্চলে বিপদ ঘনিয়ে আসা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই অসৎ কোন উদ্দেশ্য নেই বলে যতই আওয়াজ করুক চিন- দুয়ে দুয়ে চার করতে কারোরই কোন অসুবিধে হচ্ছে না। কেন অসুবিধে হবে বলুন? গত বছর আসামে যে ম্যান মেড বন্যা হয়েছিল, যে বীভৎস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল- তার নেপথ্যে যে চিন রয়েছে, তার তো প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।
চিনের মিনিস্ট্রি অফ ওয়াটার রিসোর্সের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ৯৮ হাজারেরও বেশি ড্যাম তৈরি করে ফেলেছে চিন। ধীরে ধীরে হাইড্রো সুপারপাওয়ারে পরিণত হচ্ছে দেশটা। কিন্তু পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছে, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘটনাও কিন্তু পরিবেশের নীতিবিরুদ্ধ কাজ। নদীকে নদীর মতো থাকতে দেওয়ার কনসেপ্ট বিশ্ব সাধে গ্রহণ করেনি। এর সঙ্গে শুধু নদী নয়। জড়িয়ে আছে জলবায়ু, পরিবেশ, কৃষি এবং জনজীবন। ভাবুন, সুপারড্যাম ছাড়াই চিনের দৌলতে আসাম বানভাসি হয়েছিল। কী ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মনে আছে? রেললাইনের তোলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল। ধস আর জল- বিপন্ন জনজীবন। আর সেই চিনেই তৈরি হচ্ছে সুপার ড্যাম। আবার শাপাই গেয়ে চিন বলছে এতে কোন দেশের কোন ক্ষতি হবে না, সেই গ্যারান্টি চিন নিজেই। ইতিহাস আওড়ালে চিনকে কি সত্যিই ভরসা করা যায়?
চিনের তৈরি এই সুপার ড্যাম ভারতের জন্য একটা অভিশাপ। এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নিলে পড়ে পস্তাতে হতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটেনশন সিক করা থেকে শুরু করে ভারত-চিন বাইল্যাটেরাল ট্রেডে রাশ টানা, ইত্যাদি একাধিক উপায় আছে। দেখুন, বাইল্যাটেরাল ট্রেডে রাশ টানলে এইমুহূর্তে ভারতের বাজারে একটা ক্ষতি হবে। হয়তো বেশ ভালোরকম ক্ষতি হবে। কিন্তু সেটা রিপেয়ার করা সম্ভব। অন্যদিকে, চিনের হাতে ভারতের বন্যা কিংবা খরার চাবিকাঠি একবার উঠে গেলে কি ভয়ানক দিন আসতে পারে ভেবে দেখেছেন? মানুষের জীবনের মূল্য আগে নাকি ব্যবসার? মানুষ না থাকলে ব্যবসা হবে তো? এই প্রসঙ্গে আপনার যা মতামত, সেটা কমেন্টবক্সে জানাতে পারেন। লাইক ও শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।