Trending
প্রিয় দর্শক, গ্লোবাল কারেন্সির প্রসঙ্গ যদি ওঠে, তাহলে সবার প্রথমে মাথায় আসে একটাই কারেন্সি। আর সেটা আমেরিকান ডলার। বছর বছর ধরে যে কারেন্সি রুল করছে গ্লোবাল মার্কেট। কিন্তু কোনদিন ভেবে দেখেছেন যে, এই ডলারকেই পিছনে ফেলে দিতে পারে অন্য একটি দেশের কারেন্সি! মনে হয় ভেবে দেখেন নি। কিন্তু এই মুহূর্তে আপনার মাথায় কী আসছে? কোন কারেন্সি ডলারের মুখে ঝামা ঘষে দিতে পারে? নিশ্চয়ই ভারতের কথা ভাবছেন। মনে করছেন, ভারত তো এখন বিশ্বগুরুর পথে। সুতরাং টাকাও…ক্কিন্তু ইয়ে…একেবারেই সেটা নয়। টাকা বিশ্বগুরু? হু…তাহলেই হয়েছে। কারণ ডলারকে রিপ্লেস করতে পারে একমাত্র পাকিস্তানের আয়রন ব্রাদার চিন। মানে চিনের কারেন্সি। হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। চিনের কারেন্সি নিয়ে আজ গোটা পৃথিবী কথা বলছে। এমনটাই জানাচ্ছে ব্লুমবার্গের একটা রিপোর্ট। সেখানেই বলা হয়েছে, ফেলে আসা এপ্রিল মাসেই চিন নিজের কারেন্সি ইউয়ানের ডমিন্যান্স ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে। আর চিনের কারেন্সিকে মজবুত করতে ভালোরকম হেল্প করছে রাশিয়া। কিভাবে? আজকের প্রতিবেদনে বলব সেটাই। কিভাবে ডলারের মুখে ঝামা ঘষে নিজের ইকোনমিকে স্ট্রং করছে চিনের কারেন্সি।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু এক বছর হয়ে গেল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন আমেরিকা প্রথম রাশিয়ার আর্থিক কর্মকান্ডের ওপর বিভিন্ন ধরণের স্যাংশন লাগিয়ে দিল। সেই নিষেধাজ্ঞা মাথায় তুলে নিল ইউরোপ। ফলে রাশিয়ার কাছে যুদ্ধ চালাবার পাশাপাশি যে ট্রেডিং চলছিল, সেটা কার্যত পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সেই সময় রাশিয়ার পাশে দাঁড়াল দুই দেশ। এক চিন এবং দুই ভারত। তারপরেই রাশিয়া চিনের কারেন্সি ইউয়ানের দিকে বেশি নজর দিতে শুরু করল। এই বছরে রাশিয়া ডলারের থেকে অনেক বেশি ইউয়ানের মাধ্যমে ট্রেড করেছে। আসলে, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড করবার জন্য একটি গ্লোবাল কারেন্সির প্রয়োজন পড়ে। সেটা এতদিন ডলার-ই করে আসছিল। এবার পাওয়ার শিফটের সময়। আমেরিকা রাশিয়ার বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডে ব্যান লাগাতেই, বিন্দুমাত্র চিন্তা না-করে ইউয়ানকেই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং-এর জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কারেন্সি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করল রাশিয়া। আর অনেক দেশ তো ডলারের পরিবর্তে এমনিই ইউয়ানকে গ্লোবাল কারেন্সি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছিল। স্বাভাবিকভাবে তারাও রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে সাগ্রহে গ্রহণ করল। অতএব, রাশিয়ার না কমল ইমপোর্ট আর না কমল এক্সপোর্ট। চিনের কারেন্সিকে রাশিয়ার মত এতো বড় দেশ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং-এর জন্য এভাবে ব্যবহার করছে- বিষয়টা এই প্রথম। চিন স্বাভাবিকভাবেই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইল না। আর যে কারণে চিন রাশিয়ার জন্য নিজের মার্কেটকে ভবের হাট করে দিল। যাতে রাশিয়া আর ডলারের অভাব সেভাবে না-পেয়ে থাকে। এই খবর সামনে আসতেই ঘুম উড়ল ডলারপ্রেমীদের। তাঁরা মনে করতে শুরু করলেন তাহলে কি সত্যি ডলারকে পিছনে ফেলে দিতে চলেছে চিনের কারেন্সি ইউয়ান?
ফরেন কারেন্সি কতটা জনপ্রিয়তা পাবে সেটা নির্ভর করে একটি দেশের ইকোনমিকালি কতটা পাওয়ারফুল। ইকোনমিক স্ট্র্যাটেজি মেনে দেখতে হয় যে, ঐ দেশটার ইকোনমিক গ্রোথ কতটা ভালো। জিডিপি রেট কতটা ভালো। সঙ্গে গ্লোবাল কারেন্সিকে ডমিনেট করতে পারে যে দেশের কারেন্সি, সেই দেশই ইকোনমিকালি অনেকটা পাওয়ারফুল হয়। অবশ্যই ওয়ার্ল্ড ট্রেডের কথা বলা হচ্ছে। যদি চিনের কথা ধরি, তাহলে দেখব, চিন বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই যার সঙ্গে ট্রেড করে না। চিনের ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি এতটাই স্ট্রং যে এমন বহু দেশ রয়েছে যারা চিনের প্রোডাক্টের ওপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকে। সুতরাং ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, চিনের কারেন্সি আজ গ্লোবাল মার্কেটে ভালোরকম ছাপ রাখতে শুরু করে দিয়েছে। এই রকম সময়ে দাঁড়িয়ে যখন নতুন কোন কারেন্সি মজবুত হতে শুরু করে, তখন অন্য দেশ সেই কারেন্সিকে নিজেদের ফরেক্স রিজার্ভে রাখতে শুরু করে। যাতে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং চালিয়ে যেতে কোন প্রবলেমের মুখোমুখি না পড়তে হয়। যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, ১৫৩০ সালে পর্তুগালের কারেন্সি গ্লোবাল মার্কেটকে ডমিনেট করত। এরপর ১৭ এবং ১৮ শো সালে গ্লোবাল মার্কেট ডমিনেট করত নেদারল্যান্ড এবং ফ্রান্সের কারেন্সি। তারপর এলো ব্রিটিশ পাউন্ড। ব্রিটিশ পাউন্ড বিশ্বমার্কেট দাপিয়ে বেরালেও, সেই সুখ তাদের ভাগ্যে খুব বেশিদিন স্থায়ী হল না। এরপর ১৯৩০ সালে আমেরিকার ডলার শুরু করল ছড়ি ঘোরাতে। ২০০৮-২০২২ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ট্রেডিং-এর ৭০% হয়েছে মার্কিনী ডলারে। কিন্তু আবার বদলাচ্ছে সময়। এখন বেশ কিছু দেশ ট্রেডিং-এর জন্য ডলার নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চাইছে। একটা তথ্য দিয়ে রাখি যে, আজ প্রায় ২৫-টি দেশ ট্রেডিং-এর জন্য ইউয়ানের ওপরেই ভরসা রাখছে। তার মধ্যে অন্যতম লাতিন আমেরিকার দুটি দেশ- ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। আর জানেন কি চিন সেই কারণে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের বদলে এখন এশিয়ান মানিটারি ফান্ড ব্যবহার করতে চাইছে। তার মধ্যে মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরব ডলার ছেড়ে দিয়ে অন্য কারেন্সির ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। সৌদি আরব তেলের জন্য ডলারের পরিবর্তে ভরসা রাখতে চলেছে ইউয়ানে। অন্যদিকে ইরান আবার রাশিয়ার কারেন্সিকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। ভবিষ্যতে ভারত, চিন এবং তুর্কির সঙ্গে রুবলেই ট্রেডিং করবে। অর্থাৎ ইরান নিজেও ডলারের ওপর থেকে নিজের ডিপেন্ডেন্সি কমাতে চাইছে।
চিনের ইকোনমিক কন্ডিশন যদি ভালো করে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখব, আজ পোস্ট কোভিডের পরেও চিন নিজের ইকোনমিক গ্রোথ ভালোভাবে ধরতে পেরেছে। চিনের এখন বর্তমান জিডিপি ১৭.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর চিনের ইকোনমি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ইকোনমি। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে, ওয়ার্ল্ড ট্রেডিং-এর মাত্র ৩ শতাংশ এখন হচ্ছে চিনের কারেন্সি ইউয়ান দিয়ে। যেখানে ডলার ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় ৮৭ শতাংশ মতন। সঙ্গে আরেকটা জিনিস। ফরেক্স রিজার্ভে কোন কারেন্সি থাকবে, সেটা নির্ভর করে ভবিষ্যতে এই কারেন্সি কতটা স্টেবল থাকবে। সেই জায়গাটা এখনো চিন পাকা করতে পারেনি। তাই প্রশ্নচিহ্ন থেকেই গেল। সত্যিই কি ডলারের মুখে ঝামা ঘষতে চলেছে চিনের কারেন্সি ইউয়ান?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ