Trending
পরিস্থিতি যখন বিশৃঙ্খল তখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। তারপর থেকে কোনরকম আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকার স্বীকৃতি পায় নি কোন দেশেই। তবু এতকিছুর মধ্যেও তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে উদ্যোগী হল চিন। কাবুলে নিয়োগ করা হল চিনের রাষ্ট্রদূত। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, যে দেশে তালেবানের সরকার, যে দেশের সরকারকে অন্যান্য দেশ এখনো স্বীকৃতি দেয়নি, সেই দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের কারণ? এই প্রতিবেদনে বলব সেটাই। জানতে হলে স্কিপ না করে দেখুন সম্পূর্ণ ভিডিও।
তালেবান সরকার গঠন করার পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে আফগানিস্তানে চির আঁধার নেমে এলো বলে। নারীদের ক্ষমতা আরও খর্ব হবে। কট্টরপন্থীদের দৌরাত্ম্য বাড়বে। আর অর্থনীতি যাবে গোল্লায়। মানে এখন যে অবস্থা পাকিস্তানের, অনেকে মনে করেছিলেন এই পরিস্থিতি তৈরি হবার কথা ছিল আফগানিস্তানে। কিন্তু পাল্টে গেল পাশা। আফগানিস্তানকে নিয়ে কখনোই কোন দেশ ভরসা করতে পারে নি। তারপরেও যেন করাচি অন্ধকারে ডুবলেও কাবুল রইল আলোয়। আর এখন তো তালেবান শাসনে ধীরে ধীরে আফগানি মুদ্রার ভ্যালু বাড়ছে। নতুন একটা গাড়িও তৈরি করেছিল তারা। আফগান অর্থনীতি নিয়ে আমরা আগেই একটা প্রতিবেদন করেছিলাম। প্রয়োজনে দেখতে পারেন আই বটনে ক্লিক করে।
যাই হোক, ন্যাটো সরতেই আফগানিস্তানের ভোল বদলানোর দায়িত্ব নেয় তালেবান। তারপরেও যেভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সেটা প্রকাশ্যে কোন দেশ স্বীকৃতি না দিলেও মনে মনে প্রশংসা জানিয়েছে অনেক দেশ। তবে গরিবিয়ানা, আর্থিক অনুদান এসবের থেকে নিজেদের বের করে আনতে পারে নি কাবুল। তবে ভারত আর্থিকভাবে সাহায্য করে আফগানিস্তানকে। তার জন্য তালেবান প্রশাসন ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসার বার্তাও ছুঁড়ে দেয়। আর এবার সেই প্রশংসার বার্তা চিনের জন্য। তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাবুলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চিন নিযুক্ত করে তাদের রাষ্ট্রদূত ঝাও জিং। তিনি পরিচয়পত্র তুলে ধরেন তালেবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের কাছে। চিনের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। কিন্তু তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে কেন সম্পর্কে জোর আনতে চাইছে জিনপিং সরকার?
কারণ যে আর কিছুই নয়। আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে জোর। চিনের তরফ থেকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ব্যাখ্যা হল, সংলাপ এবং সহযোগিতা। অবশ্যই কাবুল এবং বেজিং-এর মধ্যে। আফগানিস্তান নিয়ে চিনের নীতি একেবারে পরিষ্কার এবং সংগতিপূর্ণ। এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ব্যাখ্যা হল, তালেবান সরকার অধিগ্রহণ করার পর চিন স্বাভাবিকভাবেই চাইছে নিজেকে প্রভাবশালী প্রমাণ করার। তার জন্য কাবুলে প্রতিষ্ঠিত তালেবান সরকার যখন কোন দেশে স্বীকৃতি পায় নি, তখন চিন চাইছে কূটনৈতিক নমনীয়তা। মনে করা হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলো এখনো তালেবানের সরকারকে স্বীকৃতি দেয় নি। তারপরেও চিনের এগিয়ে আসা খানিক আন্তর্জাতিক মহলে শোরগোল ফেলল তো বটেই। চিনের এতো মাথাব্যথার কারণ আর কিছুই নয়। আফগানিস্তানের মধ্যে দিয়েই চলে গিয়েছে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রোজেক্টের একটা অংশ। সুতরাং কূটনৈতিকভাবে আফগানিস্তানকে পাশে নেবার প্রয়োজন রয়েছে চিনের। এছাড়া এই দেশে রয়েছে অমূল্য সম্পদের ভাণ্ডার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তামা, লিথিয়াম এবং সোনা। চিনের নজর সেদিকেই। বেজিং চাইছে আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা শুধু ইনভেস্ট করতে। ইতিমধ্যে সেই বিষয়ে খানিকটা আন্দাজ বেজিং দিয়েছে। তাদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, আফগানি খনিজের দিকে নজর দিয়েছে তারা। আর যে কারণে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে চাইছে জিনপিং সরকার। আর এই পুরো বিষয়টা তদারক করতে গেলে কাবুলে তো একজনকে প্রয়োজন নাকি বলুন। রাষ্ট্রদূত ঝাও জিং সেই কাজটিই করবেন। চিন সরকারের চশমা এঁটে তিনি নজরদারি করবেন। আর ঝাও জিং-এর দৃষ্টি দিয়ে আফগানিস্তানকে দেখবে বেজিং।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ