Trending
ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ছে সূর্য। অন্তত নাসার বিজ্ঞানীরা তেমনটাই বলছেন। সূর্য দুর্বল হয়ে পড়লে আবারও তুষার যুগ ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। গোটা জগতের ইকোসিস্টেম একেবারে বদলে যেতে পারে। মৃত্যু হতে পারে বহু প্রাণীর। তাই আগে থাকতেই নাসার সাবধান বাণীকে মাথায় তুলে রেখেছিল আমাদের পড়শি দেশ। হ্যাঁ, আমি বলছি চিনের কথা। যে দেশটি তাদের নিজের নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার অ্যাটেনশন নিজের কাছে ধরে রাখতে পারে। এবার জানা গেল, বিশ্ব বাজারে চিন তার নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য আরও বড় একটা পরীক্ষা করল। সাফল্যও পেল। আর সেটা হল আর্টিফিশিয়াল সান বা কৃত্রিম সূর্য। অবাক হচ্ছেন? যদি বলি চিনের বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই তৈরি হয়ে গেল নকল সূর্য! আসুন বন্ধুরা। আজকের প্রতিবেদনে কথা বলা যাক চিনের এই নকল সূর্য তৈরি নিয়ে।
চিন বরাবরই নিজের কর্মকান্ড নিয়ে একেবারে সোজাসাপ্টা মনোভাব ধরে রাখে। তার জন্য চিন যে যে ধরণের পদক্ষেপ নেয়, সেটাও ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার নজর কেড়ে নেয়। অনেকেই বলে থাকেন, চিনের প্রোডাক্ট মানেই সেটা নকল। তাই গ্লোবাল মার্কেটে চিনের প্রোডাক্ট নিয়ে অনেকেই নাক, মুখ কুঁচকে থাকেন। আবার এটাও তো ঠিক যে, চিন আজ ওয়ার্ল্ড ম্যাপে বৃহত্তম ম্যানুফ্যাকচারিং হাব। চিন যা তৈরি করে সেটা অনুসরণ করেন অনেকে। কিন্তু তাই বলে একেবারে নকল সূর্য! এমন কৃত্রিম নকল সূর্য তৈরি করলেন কি করে চিনের বিজ্ঞানীরা? আর তৈরি করলেও আদৌ কি সেটা সূর্যের মতনই এমন তাপ দিতে সক্ষম? লক্ষ লক্ষ ডলার, পাউন্ড খরচ করে কৃত্রিম সূর্য তৈরির রহস্যটা কি? এর সঙ্গে কি আদৌ জরিয়ে রয়েছে চিনের অর্থনীতি?
আমরা সকলেই জানি, সূর্যের অভ্যন্তরে যে বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, সেটা কিভাবে হয়ে থাকে। মূলত অনবরত নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার কারণে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম উৎপন্ন হয়। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি। জানা গিয়েছে, চিন সেই একই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েছে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হাইড্রোজেন এবং ডিউটেরিয়াম গ্যাস। এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপার কন্ডাক্টিং টোকাম্যাক বা EAST ফিউশন রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে তৈরি করে ফেলেছে এই নকল সূর্য। আর এর ফলে আসল সূর্যের থেকেও নাকি পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রা তৈরি হয়েছে চিনের কৃত্রিম সূর্যে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, রিঅ্যাক্টরটির তাপমাত্রা পৌঁছে যায় প্রায় ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এবং সেই কৃত্রিম সূর্যটি ১৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড ধরে এই বিপুল পরিমাণ তাপমাত্রা দিতে পেরেছে। ভেবে দেখুন, সূর্যের ভেতরের তাপমাত্রা যেখানে ১.৫ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস মতন, সেখানে নকল সূর্যের তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে!
চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অফ প্লাজমা ফিজিক্সের এক কর্মকর্তার বক্তব্য, এই ধরণের কৃত্রিম সূর্য তৈরি করা আসলে চিনের গবেষণার ক্ষেত্রে একটা মাইলফলক তৈরি করেছে। কিন্তু অকস্মাৎ কৃত্রিম সূর্য তৈরির ব্যপারে চিন এভাবে উঠেপড়ে লেগেছে কেন? আমরা সকলেই জানি যে, সৌর শক্তি আমাদের প্রতিদিনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর অপ্রচলিত শক্তি হিসেবে সৌরশক্তির ভূমিকা অগ্রাহ্য করা যায় না। কিন্তু বর্তমানে সৌরশক্তিকে আমরা কতটুকুই বা কাজে লাগাতে পারছি? আমাদের নিত্যদিনের বেঁচে থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই হচ্ছে ফসিল ফুয়েল বা কয়লা দিয়ে। অর্থাৎ, পরিবেশবান্ধব একটাও নয়। বরং দিনে দিনে দূষণের বহর অত্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর যে কারণেই এখন বাড়ছে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার। কিন্তু আজ যা প্রয়োজন, তা বহু আগেই বুঝতে পেরেছিল চিন। আর এটাই নাকি ভবিষ্যতে চিনের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের জন্য দুর্দান্ত একটা জাম্প হতে চলেছে। কৃত্রিম সূর্য থেকে তৈরি অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার আজ চিনা বিজ্ঞানীদের সাফল্যকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, যখন অন্যান্য দেশ কার্যত পুরোপুরিভাবে অপ্রচলিত শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, তখন সেই সব দেশের ত্রাতা হয়ে দাঁড়াবে চিন। অপ্রচলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়েই নিজের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে তারা।
এখানেই বলে রাখি, ১৯৮৫ সালে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এই নকল সূর্য তৈরির ব্যপারে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল আমাদের ভারত। তারপর অবশ্য সেই প্রোজেক্ট হাতেকলমে প্রকাশ পায়নি। কিন্তু চিন থাকেনি বসে। ২০০৬ সাল থেকেই চিন কৃত্রিম সূর্য তৈরির ব্যপারে উঠেপড়ে লাগে। শুধু ৩০০ জন মতন ছিলেন চিনা বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও ১০ হাজার মতন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে হয়ে এই অসাধ্য সাধনটি করতে পেরেছেন। দিনরাত অকথ্য পরিশ্রম করে তৈরি করে ফেলেছেন এই নকল সূর্য। যা আসলে খুব কঠিন একটি এক্সপেরিমেন্ট। তবে বর্তমানে, চিন ছাড়াও ফ্রান্স এবং দক্ষিণ কোরিয়া এই নকল সূর্য তৈরিতে পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সুপার কন্ডাক্টিং টোকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টার বা কেস্টার ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা তৈরি করতে পেরেছিল। এবং সেই তাপমাত্রা ধরে রাখতে পেরেছিল প্রায় ২০ সেকেন্ড মতন। এখন তাদের লক্ষ্য ২০২৫। ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা তারা ধরে রাখতে চায় ৫ মিনিটের জন্য। এবার প্রশ্ন, ভারত কি চিনের মতন এখনই কৃত্রিম সূর্য তৈরির ব্যপারে মনযোগী হতে পারে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ