Trending
একের পর এক বড় বড় মার্কিনী সংস্থা চিন থেকে সরে ঠাঁই নিচ্ছে ভারতে। অর্থাৎ ভারত এবং আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরালো হচ্ছে। এতেই খানিক অস্বস্তিতে পড়েছে চিন। তার জন্যই কি কয়েক দিন আগে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের দিকটা মজবুত করতে এগিয়ে এলো ড্রাগনল্যান্ড! শুধু কি সেটাই একমাত্র কারণ নাকি অনেকেই বলছেন যে সার্বিকভাবেই চিনের বাণিজ্য ধীরে ধীরে কমতির দিকে? আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা সাড়া যাক এই বিষয়টা নিয়েই। সঙ্গে জেনে নেওয়া যাক, চিনের বাণিজ্য কমার পিছনে ভারতের কোন কূটনৈতিক চাল নেই তো? জানতে হলে প্রতিবেদনটি দেখুন একেবারে শেষ পর্যন্ত।
ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক খুব জোরালো নয়। মানে আস্থার সম্পর্ক এই দু’দেশের একটিরও নেই। তার অন্যতম কারণ সীমান্ত সংঘর্ষ। কাঁটাতারের বেরা উত্তপ্ত হয়েছে লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশে। এমনই একটি সময়ে দাঁড়িয়ে ভারত এবং চিনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে যে ভাটা পড়বে, সেটা অনেকেই মনে করেছিলেন। কিন্তু একেবারে বিপরীত ছবি দেখা গেছিল দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে। যদি আমরা ২০২২ সালের কথাই ধরি, তাহলে ভারত এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল নজরকাড়া। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, ভারত এবং চিনের মধ্যে ঐ বছরে বাণিজ্যিক লেনদেন হয় প্রায় ১৩ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা মতন। খেয়াল রাখবেন, আমদানি এবং রফতানিতে এই অঙ্কটা কার্যত রেকর্ড তৈরি করেছিল। তবে আগেও একটি বছরে ভারত এবং চিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক যে কতটা মধুর ছিল সেটা রিফ্লেক্ট করে দুই দেশের বাণিজ্যের অঙ্কে। সেবার দিল্লি এবং বেজিং-এর আমদানি রফতানির সম্পর্ক দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। তার মানে ২০২২ সালে সেই অঙ্কটা একধাক্কায় বৃদ্ধি পেয়েছিল ৮% মতন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও বাণিজ্যিক তলানি! অর্থাৎ ভারত এবং চিনের কূটনৈতিক সম্পর্কের মতনই এবার দুই দেশের বাণিজ্যের গ্রাফ নামল কিছুটা। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কি সত্যিই ভারত এবং চিনের সম্পর্ক অবনতি হবার কারণেই নেগেটিভ প্রভাব পড়ল দুই দেশের বাণিজ্যে? মার্কিন মুলুককে পাশে পেয়ে মোদীর এটা নতুন কোন চাল নয় তো?
আমরা যদি চিনের শুল্ক দফতরের পরিসংখ্যান দেখি, তাহলে সেটা কিছুটা হতাশই করবে। কারণ সেখানে সাফ দেখা যাচ্ছে যে, ভারত এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্রমশ নিচের দিকে নামছে। আর সেটাই নজর কেড়েছে বিশ্বব্যাপী থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের। দেখা যাচ্ছে, দুই দেশের বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ০.৯% মতন। অর্থাৎ এই বছরে প্রথম ছয় মাসে চিন থেকে ভারতে পণ্য রফতানি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৬৫৩ কোটি ডলার মতন। খেয়াল রাখবেন, গত বছর কিন্তু বেজিং ভারতে পণ্য রফতানি করে আয় করেছিল ৫ হাজার ৭৫১ ডলার মতন। একইভাবে ভারত চিনকে পণ্য রফতানি করেছে, এই বছরে, ৯৪৯ কোটি ডলার মতন। গত বছর এই অঙ্কটাই ছিল ৯৫৭ কোটি ডলার মতন। তারপরেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভারত-চিনের সম্পর্কের অবনতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনে? মোদীর কি ইচ্ছাকৃত মাস্টারপ্ল্যানের জন্যই চিন্তিত বেজিং?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, একেবারেই বিষয়টা সেভাবে দেখা উচিৎ নয়। অর্থাৎ, চিন-ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে যে অবনতি আমরা লক্ষ্য করছি আসলে সেটার পিছনে মোদী ম্যাজিক নয় বরং দায়ী চিনের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি। কোভিড মহামারি পর্ব আপাতত বিদায় নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার রেশ থেকে গিয়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্কে, আর্থিক লেনদেনে। ফলে শুধু ভারত বলেই নয়, সার্বিকভাবে পুরো বিশ্বে চিনের বাণিজ্য বেশ বেকায়দায় পড়েছে। ফলে আমদানি এবং রফতানিতে ভালোরকম একটা অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই বছরে চিনের বাণিজ্য কমেছে সার্বিকভাবে ৫ শতাংশ মতন। রফতানি কমেছে ৩ শতাংশের বেশি আর আমদানি কমেছে ৬ শতাংশের বেশি। ফলে বাণিজ্যিক পরিকাঠামোয় ভালোরকম প্রভাব লক্ষ্য করা গেল। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে চিনের অভ্যন্তরে। মূল্যবৃদ্ধি আটকাতে আসরে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। বিদেশি ক্রেতাদের জন্য বাড়ানো হয়েছে সুদ। ফলে বিদেশের বাজারেও পণ্যের চাহিদা কমছে। আর এই সুযোগটাকে শুধু কাজে লাগাচ্ছে ভারত। মোদী ম্যাজিক কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেটা গোটা বিশ্ব উপলব্ধি করছে। চিনের দুর্বল মুহূর্তকে হাতিয়ার করেই ভারত তাই নিজের দিকে টেনে আনতে শুরু করেছে বিশ্বের তাবড় তাবড় সংস্থাগুলোকে। দিল্লির এই মুভ ভালোরকম চিন্তায় ফেলেছে বেজিংকে। আর মোদী-বাইডেনের সাক্ষাৎ তো যেন আরও দুশ্চিন্তার বহর বৃদ্ধি করেছে। আর যে কারণে সীমান্ত সংঘর্ষকে পাশে সরিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে আগ্রহ দেখাচ্ছে চিন। সেটাই কি সত্যি? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে প্রতিবেদনটি লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর সাবস্ক্রাইব করে নিন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ