Trending
বেজিং থেকে দূরত্ব মাত্র ১৩৫ কিমি। শহরের নাম তিয়ানজিন। সেখানেই এখন সারিবদ্ধ নির্মীয়মাণ বহুতল আবাসন। কবে সেই আবাসন পুরোপুরি তৈরি হবে, সেটা নিয়েই এখন দানা বাঁধছে সন্দেহ। শুধু এই একটা জায়গা বলে নয়। চিনে যে সকল আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে, সবেতেই আজ প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হচ্ছে বড়সড়। তাহলে কি চিনের আবাসিক খাতে ঘনিয়ে আসছে সংকট? কেন নির্মীয়মাণ আবাসনগুলি পুরোপুরি নির্মিত হচ্ছে না? আর কেনই বা নির্মিত আবাসন কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন চিনের সাধারণ মানুষ? তাহলে কি রিয়েল এস্টেট খাতে চিন আশঙ্কা করছে বড় বিপদের? ভুল কি তাদের পলিসিতে, প্ল্যানিং-এ? আজকের প্রতিবেদন শুরু করা যাক এই নিয়ে। কেন ধীরে ধীরে সংকট গ্রাস করছে চিনের আবাসিক খাতকে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টিপ্পনী কেটে একবার বলেছিলেন, ‘টিকিং টাইম বম্ব’। চিনের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ক্ষইছে। ফলে চিনের অভ্যন্তরে অসন্তোষ বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত রেখে প্রত্যুত্তর দিয়েছেন চিনের কর্তা জিনপিং। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, দেশের ইকোনমি কোনভাবেই দুর্বল নয়। যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেটা একেবারেই সাময়িক। কেটে যাবে সকল বাধা। তাহলে আসল সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা অনেক গভীরে। দেখুন, অনেকেই মনে করছেন যে চিনে অর্থনৈতিক সংকট প্রায় ঘাড়ে এসে বসল বলে। সত্যি বলতে কী, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এতো সহজে ভেঙে পড়বে না। কিন্তু সমস্যা যে রয়েছে। আর সেটাকে চ্যালেঞ্জ জানানো মুখের কথা নয়। কারণ, চিনে বর্তমান যে একটা আর্থিক ডামাডোল লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার অন্যতম ভিলেন দেশের আবাসন শিল্প। আসলে আবাসন শিল্প হচ্ছে চিনের সাধারণ মানুষের কাছে অন্যতম অ্যাসেট। এমনকি চিনের মোট সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ ছিল এই আবাসন খাতেই। আর জটিলতা শুরু এখান থেকেই।
গত ২০ বছর ধরে চিনের আবাসিক খাত ফুলেফেঁপে এতটাই উঠেছিল যে সেটা চিনের সার্বিক উন্নয়নের পথে এক বড় রকম অক্সিজেন জুগিয়েছিল। চিনে তখন সঞ্চয়ের অপর নাম নিজের নিজের বাড়ি এই একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায়। মুশকিলটা হয় কোভিড আসার পর। ফলে আবাসিক খাত সংকটে পড়তে পারে এই আশঙ্কা করেছিল চিনের সরকার। যে কারণে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা কত পরিমাণ টাকা ধার নিতে পারে তার একটা সীমা বেঁধে দেয় চিনা সরকার। আর সেটা করতে গিয়েই চমকে ওঠেন সংশ্লিষ্ট দফতর। দেখা যায়, চিনে যত রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা রয়েছেন তারা কোটি কোটি ডলার ঋণ নিয়ে ইতিমধ্যেই বসে রয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা পরিশোধ করার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। কেন? তার উত্তর রয়েছে চিনের সাধারণ মানুষের কাছে।
পোস্ট কোভিড সিচুয়েশনে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতি ধাক্কা খেলেও তারা যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, সেই প্রতিযোগিতায় খানিক পিছিয়েই পড়েছে চিনের সরকার। তার মেজর কারণ চিনের আম নাগরিক। কারণ তাঁদের মধ্যে নতুন বাড়ি কেনার আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। মনে করা হচ্ছে, পোস্ট কোভিড পলিসির কারণেই চিনের সাধারণ মানুষ এখন কিছুটা ভীত। তাঁরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে হয়ত দারিদ্র্য আরও বেশি করে চিনে থাবা বসাতে পারে। ফলে নিজ বাড়ি নিজ সঞ্চয় গোছের যে হাওয়া তৈরি করা হয়েছিল তা অচিরেই মিলিয়ে যেতে শুরু করল। ফলে নতুন ঘর-বাড়ির চাহিদায় ধ্বস নামতে থাকল এবং আবাসন খাতের ব্যবসা মার খেতে শুরু করল। চিনের সাধারণ মানুষ এখন সঞ্চয়ে জোর দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সঞ্চয়টা তাঁরা আর আবাসন খাতে করতে চাইছেন না। ফলে লোকাল গভর্নমেন্টগুলো এখন ঋণের ভারে আরও ঝুঁকে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিনের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা নির্মাণ শিল্প। কিরকম? চিন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নির্মাণ শিল্পকে হাতিয়ার করেছিল। রেজাল্ট পাচ্ছিল সেভাবে। একের পর এক রাস্তা, ব্রিজ, রেললাইন, এয়ারপোর্ট, কলকারখানা কিছুই বাদ দেয় নি। আর এই গোটা কাজ করছে চিনের লোকাল গভর্নমেন্টগুলোই। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সবথেকে বড় মুশকিল হচ্ছে, ডেভেলপারদের কাছে আবাসন তৈরির জমি আর বিক্রি করতে পারছে না তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনা সরকার মনে করেছিল রাষ্ট্রের হাতে রেখেই হয়ত সকল জটিলতা কাটিয়ে নেওয়া যাবে, আবাসন শিল্প ভেঙে পড়ার নো চান্স। কিন্তু বাস্তব ছবিটা একেবারে উল্টো। আর্থিক খাতের ওপর তাদের এতো কঠোর নিয়ন্ত্রণ যে সেই কোপে পড়েছে আলিবাবার মতন বড় বড় সংস্থাগুলি। তাই এখন আর রাষ্ট্রের হাতেই সবকিছুকে ধরে না রেখে ধীরে ধীরে ব্যক্তিখাতে পুরো বিষয়টা ট্রান্সফরম করা উচিৎ বলেই মনে করছেন অনেকে।
আর এসব কিছুর মাঝে অন্য বিপত্তি হল বেকারত্ব। চিনে গ্র্যাজুয়েশনের পর হন্যে হয়ে ঘুরছেন পড়ুয়ারা। হিমশিম খেতে হচ্ছে চাকরি পেতে গিয়ে। সুযোগ কম, প্রার্থী বেশি। অর্থাৎ বেকারত্ব বাড়ছে ভালোরকম। আর মানুষের হাতে টাকা না থাকলে আবাসন শিল্প যে সঙ্কটের দিকে এগোবে, সে আর নতুন কী? স্বাভাবিকভাবেই চিনের আবাসন খাত এখন বড়সড় বিপর্যয়ের দিকেই এগোচ্ছে। কবে মিলবে সুরাহা? চিন সরকার এখনই কোন সুরাহা খুঁজে পাচ্ছে না। তবে পলিসিতে ভালোরকম পরিবর্তন আনার কথা হয়ত ভাবছে। তবে সংকট থেকে দ্রুত মুক্তির আশা নেই। আবাসন শিল্পকে ঘুরে দাঁড় করাতে আরও বেশ কিছু বছর সময় লাগতে পারে বলেই মনে করছেন চিনের বিশেষজ্ঞদের একাংশ। প্রতিবেদন এটুকুই। লাইক করুন, শেয়ার করুন। সঙ্গে নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ