Trending
ভারত টেক্কা দেবে চিনকে! এখনই সেই ভাবনা মাথায় আনার দরকার নেই। দরকার নেই কারণ ভারতের সঙ্গে চিনের টক্কর কিছুটা সৃজিত আর সত্যজিতের মতনই। আশা করি বুঝতেই পারছেন, কী বলতে চাইছি। সামরিক শক্তি, অর্থনীতির শক্তি সর্বক্ষেত্রে ভারতকে বলে বলে গোল দেবে চিন। এশিয়ান গেমসেও তাই হয়েছে। পদক তালিকা দেখুন। চিন সোনা এনেছে এখনো ২৫টা। ভারত আপাতত ১-টা। কিচ্ছু করার নেই। বৃহৎ অর্থনীতি হবার চেষ্টা চিন করে আসছে প্রায় ৬০ বছর ধরে। ভারতের এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বিগত কয়েক বছর। তবু এতো কিছুর পরেও আপনাদের বলছি, ভারত কিন্তু একটা জায়গায় চিনকে টেক্কা দিয়েছে। সেটা মোক্ষম জায়গা কিন্তু। বলছি…বলছি…তার জন্য প্রতিবেদনটা দেখতে হবে তো।
১৯৬৬ সাল। মাও জে দং শুরু করলেন এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব। লক্ষ লক্ষ তরুণের স্বপ্ন হাতিয়ার হয়ে উঠল মাও-এর। চিনে যখন ভরা গরিবিয়ানা, তখন মাও-এর স্বপ্নকে ভবিষ্যৎ চিনের স্বপ্ন মনে করেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অনেকে। অর্থনীতির সাম্যবাদ এখানে একটা বড় বিষয়। নিজেদের পলিসিকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে চিন ধীরে ধীরে এগিয়েছে এবং গ্লোবাল বিজনেসকে নিজেদের হাতের তালুতে নিয়ে এসেছে। এবং ধীরে ধীরে পশ্চিমী দেশ আর আমেরিকার ব্যবসার চাবিকাঠি নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে। এখন চিনের ইকোনমি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইকোনমি। সেই জায়গায় পৌঁছনোর তাগিদ ভারত তেমন একটা দেখায় নি। হঠাৎ ২০১৪ সাল থেকে ভারতের ভাতঘুম ভেঙেছে। আলস্যে জড়ানো এতদিনের ঘুম ভেঙে ছোটা, মুখের কথা নয়। তাই ঘনঘন হোঁচট খেতেও হচ্ছে। তবু ভারতের এই ইকোনমিক আপলিফটমেন্ট দেখে এখন পশ্চিমী বিশ্ব এবং আমেরিকা আশা দেখেছে। তার একটাই কারণ। তাদের এখন প্রয়োজন ভারতকে। চিনকে নয় কেন? মার্কিন মুলুক বুঝতেই পারেনি কখন যেন চিন অন্যের ব্যবসাকে গিলে ধীরে ধীরে জায়ান্ট হয়ে উঠছে। আর যতদিনে বুঝতে পারল ততদিনে সময় পেরিয়েছে অনেক। হুয়াং হু-র উপর দিয়ে বয়ে গেছে এক দীর্ঘ সময়কালের হাওয়া। রাশিয়ার গলায় গলায় চিনের বন্ধুত্ব দিন দিন যেন মার্কিন মুলুকের চোখের বালি হয়ে উঠেছিল। স্বাভাবিকভাবেই অল্টারনেটিভ- ভারত। আর সেখানেই কেল্লা ফতে। বিষয়টা চিনের জন্য বেশ দুশ্চিন্তার। একইভাবে ভারতের জন্য খানিক নিশ্চিন্দির।
এক স্বনামধন্য পরামর্শদাতা সংস্থা বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ বা বিএসজি একটা রিপোর্ট পেশ করেছে। আর সেখানেই বলা হয়েছে, চিনের সঙ্গে ভারতের রফতানি যুদ্ধ যে বিগত কয়েক বছর ধরে চলে এসেছে, সেখানে গোল দিয়েছে ভারত। অর্থাৎ সোজা কথায়, আমেরিকায় যে বিপুল রফতানি হয়ে থাকে সেই রফতানি বাণিজ্যে চিনকে টপকে গিয়েছে ভারত। এই রিপোর্টে সায় শুধু বিএসজি-র নয়। ম্যাকিনসে অ্যান্ড কোম্পানি, বেইন অ্যান্ড কোম্পানির মত প্রতিষ্ঠানও একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে। বিএসজি-র রিপোর্ট বলছে, ২০১৮-২২ সালের মধ্যে আমেরিকায় চিন রফতানিতে পতন দেখেছে ১০ শতাংশ মতন। অন্যদিকে ভারতের রফতানি বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ মতন। কিন্তু এই সমীকরণ কেন? চিনের পণ্য টেঁকসই নয় বলে! আজ্ঞে না। চিন হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব। ফলে শিল্পোৎপাদনের খরচ সেখানে এতদিন পর্যন্ত কম ছিল। কিন্তু কোভিড চলে আসার কারণে চিনের ব্যবসা-বাণিজ্য খানিক ধাক্কা খেয়েছে। ফলে চিনে পণ্য উৎপাদনে খরচ হচ্ছে বেশি। এদিকে ভারতে শিল্পোৎপাদনে খরচ অনেকটাই কম। উৎপাদন খরচ কম মানেই সার্বিক খরচ কমের দিকেই এগোবে। যেমন ধরা যাক, মজুরি। চিনের থেকে ভারতের মজুরি কম। চিনের থেকে ভারতের সামগ্রিক উৎপাদনের খরচ কম। লজিস্টিক্সে খরচ কম। পণ্য তৈরির সময় যে বিদ্যুতের খরচ হয় সেটাও কম। চিনে যেখানে লেবার ওয়েজেস ২৪ শতাংশ, মেক্সিকোয় ২২ শতাংশ সেখানে ভারতে মাত্র ১৮ শতাংশ। আমেরিকায় গাড়ি রফতানি ভারত বাড়িয়ে করেছে ৬৫ শতাংশ। মেকানিক্যাল যন্ত্রের রফতানি করেছে ৭০ শতাংশ। এর পিছনে অবশ্য আরও বেশ কয়েকটা কারণ কাজ করেছে। অতিমারি, বিজনেস সেক্টরে নতুন নতুন পলিসি, আমেরিকার সঙ্গে চিনের রক্তচক্ষুর আদানপ্রদান- এসবের কারণে ভারত কিছুটা সুবিধাজনক জায়গা পেয়েছে। আর এসবের কারণেই মনে করা হচ্ছে, ভারত চিনকে টেক্কা দিয়েছে হাতে নয় ভাতে। আর সেটা কি জিনপিং বুঝতে পারছেন না বলে আপনারা মনে করছেন?
তবে এই পরিসংখ্যান দেখে আপনি যদি ভাবেন যে ভারত চিনকে টেক্কা দিয়ে দেবে, তাহলে কিন্তু ভুল বলা হবে। কারণ বিদেশি বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে ভারত পিছিয়ে অন্তত ২০ বছর। ফরেক্স রিজার্ভে পিছিয়ে অন্তত ১৯ বছর। এক্সপোর্ট ব্যবসায় অন্তত ১৬ বছর। সুতরাং বিএসজির রিপোর্ট দেখে বড়জোর আশার জায়গা তৈরি হতে পারে। ছবি বদলাতে শুরু করেছে মাত্র। তবে কতদিনে সেই ছবি বদলে যাবে? এখন অপেক্ষা করুন বন্ধুরা। আর আপনাদের যদি মতামত থাকে তাহলে সেটাও শেয়ার করুন কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, আর সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ