Daily
পাহাড়ের কোল বেয়ে অবিরাম বয়ে চলেছে খরস্রোতা জয়ন্তী নদী। পাহাড়ি ঝর্ণার শব্দ আর পাখিদের কলতানে মেতে রয়েছে চারপাশ। নদী অববাহিকা দিয়ে হেঁটে গেলে আপনাকে স্বাগত জানাবে বক্সার ঘন জঙ্গল। অববাহিকার এই দুর্গম পথে চলার ক্লান্তি দূর করার জন্য অবশ্য আপনার জন্য অপেক্ষা করছে জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের এক আদিম সৌন্দর্য। আর এই নদীখাত ধরে দুর্গম পথে ট্রেক করে উপরের দিকে উঠে এলে দেখা পাবেন স্বয়ং মহাকালের।
৫১ টি সতীপীঠের একটি হল এই ছোট মহাকাল। লোকমুখে অবশ্য পরিচিত, বাংলার অমরনাথ বলেই। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত জয়ন্তী থেকে ৫ কিমি উপরে ট্রেক করে এলে দর্শন মিলবে ভৈরব ক্রমদিশ্বরের। স্টালাগটাইট পাথরের গুহায় তাঁর অবস্থান। এছাড়াও এখানকার আরাধ্য দেবতা দেবী জয়ন্তী। পৌরাণিক মতে দেবী সতীর বাম জঙ্ঘা পড়েছিল এখানেই। তাই ভক্তের ভিড় উপচে পড়বে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
প্রতি বছর শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে এখানে প্রায় লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে এই ৭ টা দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তের ঢল উপচে পড়ে এই পাহাড়ে। সকাল থেকে রাত, তবু মহাদেবকে দর্শনের ইচ্ছেয় নেই এতটুকু ক্লান্তির রেষ। যাত্রা পথে দর্শনার্থীদের যাতে কোনরকম অসুবিধের মুখোমুখি না হতে হয়, সেই জন্য বানানো হয় অস্থায়ী সেতু, রাস্তা। ফলে শিবরাত্রির আগে ও পরে এখানে আসা সবচেয়ে সুবিধাজনক।
শিবরাত্রির মাহেন্দ্রক্ষণে আসা পুণ্যার্থীদের যেন পথে খাবারের কোন আসুবিধে না হয়, সেই জন্য রাস্তার ধারে ভাণ্ডারা নিয়ে বসেন আলিপুরদুয়ারের ফল মণ্ডি গোষ্ঠীর সদস্যরা। হাসি মুখে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তারা ভক্তদের এই সেবা প্রদান করে আসছেন। একেবারে নিঃস্বার্থভাবে। হাজার হাজার পূণ্যার্থীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন তারা। যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করেন ভাত, ডাল, পুরি, সবজি, পায়েসের। ব্যবস্থা রয়েছে ফলাহারের, মিনারেল ওয়াটারের। সে এক এলাহি আয়োজন। কোন কোন ভাণ্ডারায় আবার পরিশ্রান্ত পূণ্যার্থীদের মনোরঞ্জনের জন্য সঙ্গীতানুষ্ঠানের ব্যবস্থাও থাকে।
বক্সার একদম কোর এরিয়ায় অবস্থিত এই অঞ্চলটি একবারে জনবসতিহীন। বছরের ঠিক এই সময়টাতে আপনি সহজেই মহাকাল গুহায় পৌঁছতে পারবেন। আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য পাহাড়ের বুকে অপেক্ষা করছে প্রায় ৬৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪১ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫১৬ প্রজাতির পাখি, ১০৬ প্রজাতির মাছ সহ আরও অনেক প্রাণী। আর আপনি যদি বাটারফ্লাই সামিটে যেতে চান, তাহলে এই জায়গাটা আপনার জন্য একেবারে আদর্শ। বন্য জীবজন্তুর বিচরণভূমি আর সাথে পাহাড়ের স্বর্গীয় সৌন্দর্য- আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
কিভাবে যাবেন? জয়ন্তীর নিকটবর্তী রেল স্টেশন হচ্ছে আলিপুরদুয়ার জংশন আর নিউ আলিপুরদুয়ার। এছাড়াও নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট হিসেবে রয়েছে রূপসী আর বাগডোগরা। তাছাড়াও আপনি যদি সড়কপথে আসতে চান, তাহলে শিলিগুড়ি থেকে ৩১ সি জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে যেতে হবে দমনপুর মোড়ের দিকে। তারপর সেখান থেকে নিচের রাস্তা ধরলেই বক্সার ঘন জঙ্গল আপনাকে স্বাগত জানাবে।
কোথায় থাকবেন ভাবছেন তো? থাকার জন্য হোটেল, হোম স্টে বা বনবাংলো- সবই আছে জয়ন্তীতে। লোকাল গাইড হিসেবে নির্দ্বিধায় ভরসা করতে পারেন অভিজ্ঞ প্রদীপ দে’কে।
কি ভাবছেন? নিজের ১০টা – ৫টার একঘেয়ে জীবন থেকে একটু রিল্যাক্সড হতে নেক্সট বারের প্ল্যানটা সাজিয়ে ফেলুন। আর চট করে ঘুরে আসুন, বাংলার অমরনাথ মানে ছোট মহাকাল থেকে।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার