Trending
“We tend to overestimate the effect of a technology in the short run and underestimate the effect in the long run.” – Amara’s law
এই কয়েক সপ্তাহ আগের কথা। বাজারে নাকি এমন এক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ক্রেজ ছড়িয়েছে যে কি না দাঁড়ি টানতে পারে গুগলের রাজত্বে! চাকরি খেয়ে নিতে পারে বহু মানুষের! এমনকি শেষ অবধি জানা যাচ্ছে যে সেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে মানুষ নাকি কোটি কোটি টাকা ইনকাম করতে পারবে! আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, যা কিনা এতদিন পর্যন্ত ম্যাজিক আইডিয়া রূপে শুধু বই, ফিল্ম আর রিসার্চ ওয়ার্কের ফ্যান্টাসির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ এআই রিয়ালিটিতে পরিণত হয়েছে। যা কিনা গোটা বিশ্বের মানুষের জীবনে একটা রেভলিউশনারী চেঞ্জ আনতে চলেছে। একবার ভাবুন, এমন একটা টুল যা আপনার শিশুর স্কুলের হোমওয়ার্ক করে দিতে পারছে, একটা গল্প লিখতে পারছে এমনকি আপনার অফিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা মেইলের ফরম্যাট রেডি করে দিতে পারছে। এমন একটা এআই বেসড টুল, যা এক তুড়িতে খুব ডিফিকাল্ট একটা ম্যাথামেটিকাল প্রবলেমের সলিউশন করে দিতে পারে। ভাবতেও কত অবাক লাগে, তাই না! কিন্তু আজ আমরা কোন ফিউচারিস্টিক টেকনোলজিক্যাল টুলের কথা বলছি না। বরং আজ আমরা যার কথা বলছি, সে সত্যি সত্যিই আপনার জন্য এই সমস্ত কাজ করে দিতে পারে, তাও আবার একদম ফ্রিতে। আমরা কথা বলছি ওপেনএআই-এর রিসেন্ট ইনভেনশন মানে চ্যাটজিপিটি-কে নিয়ে।
চ্যাটজিপিটি বা চ্যাট জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনিং ট্রান্সফরমার আসলে একটা চ্যাটিং রোবট। যা কিনা আপনার সঙ্গে সহজ ভাষায় একদম মানুষের মতো কথা বলতে পারে। ইংলিশ বা হিন্দির মতো বেশ কয়েকরকমের ভাষা বুঝতে পারে, আর সেই ভাষায় প্রশ্ন করলে কয়েক সেকন্ডের মধ্যে সহজ উত্তর দিতে পারে। আর এই বিশেষ গুনের কারণেই এখন টেকএক্সপার্ট থেকে শুরু করে স্টুডেন্ট বা বিজনেসম্যান-প্রায় প্রত্যেকেরই হট ফেভরিট হয়ে উঠেছে এই চ্যাটজিপিটি। যে ক্রেজ তৈরিতে ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এমনকি টিকটকেরও কয়েক মাস সময় লেগে গিয়েছিল, সেই ক্রেজ তৈরি করতে চ্যাটজিপিটি-র সময় লেগেছে মাত্র ৫ দিন। যাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন জোরদার চর্চা চলছে। তবে যাকে নিয়ে চর্চা হয়, তাকে নিয়ে বিতর্কও হয়। আর সেই চর্চার সূত্র ধরেই উঠে এসছে একাধিক প্রশ্ন। যেমন-
সত্যিই কি আগামীতে গুগলকে রিপ্লেস করতে চলেছে চ্যাটজিপিটি?
চ্যাটজিপিটি-র চাপে কি সত্যিই টালমাটাল হয়ে উঠবে মানুষের চাকরির গদি?
নাকি এই চ্যাটজিপিটি শুধুই একটা হাইপ?
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একবার বরং চ্যাটজিপিটি-র ইতিহাসটা একবার ঘুরে আসা যাক। ২০১৫। ইলন মাস্ক এবং স্যাম অল্টম্যান যৌথভাবে এই টেকনোলজির উপর কাজ করা শুরু করে। তবে সেইসময় যেহেতু এটি একটি ননপ্রফিটেবল কোম্পানি ছিল তাউ ১-২ বছর কাজ করার পর মাস্ক এই প্রোজেক্ট থেকে সরে আসেন। যদিও এতে বিপুল অর্থ ইনভেস্ট করেছে মাইক্রোসফট। অবশেষে 2022 সালের 30 নভেম্বর একটি প্রোটোটাইপ হিসাবে চালু হয়। ওপেনএআই-এর প্রধান কর্মকর্তা অল্টম্যান জানিয়েছেন, এটি এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারির কাছে পৌঁছেছে এবং দিন দিন এর ক্রেজ আরও বাড়ছে। এই মুহূর্তে ফ্রি-তে এটা ব্যবহার করা গেলেও, ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে গেলে পে করতে হবে ইউজারদের।
তবে, এসবের পরেও গুগলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সবার আগে আমাদের গুগল এবং চ্যটজিপিটি-র মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। গুগল হচ্ছে একটা সার্চ ইঞ্জিন, যার কাছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ডেটা রয়েছে, এবং সেখান থেকে সে আপনাকে ইনফরমেশন দিচ্ছে। অন্যদিকে গুগলের মতো চ্যাটজিপিটি যেহেতু ইন্টারনেটের সঙ্গে কানেক্টেড নয় তাই তার কাছে রিয়েল টাইম ডেটা দিতে পারে না। তাই এখান থেকে পাওয়া ইনফরমেশন আসলেই কতটা অথেন্টিক, সে প্রশ্ন থাকাটা সমীচীন। ইনফ্যাক্ট বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই চ্যাটবটটি ভুল উত্তর দিয়েছে বলেও দাবি তুলেছেন বহু ব্যবহারকারীরা। এক্সপার্টরা অন্তত বলছেন যে, আগামী বেশ কিছু সাল পর্যন্ত চ্যাটজিপিটি কোনভাবেই গুগলকে রিপ্লেস করতে পারবে না। আর যে সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানির মোট রেভিনিউ-এর ৮০% অবদান রাখে সেখানে কোনরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে গুগল বরদাস্ত করবে না, সেকথা তো আর বলার অবকাশ রাখে না। সুতরাং, এবছরের মধ্যেই গুগলের নিজস্ব চ্যাটবট ‘কোড রেড’ লঞ্চের কথা ঘোষণা করেছে টেক জায়েন্ট। বলা হয়েছে, এর ফিচার কিনা চ্যাটবটকেও ছাড়িয়ে যাবে।
তবে, এআই মার্কেটে যতই প্রতিযোগিতা থাকুক, আপনারাই একটা কথা বলুন তো, কোম্পানিগুলো এই প্রোজেক্ট তৈরিতে যতটা এফোর্ট দেয়, বাস্তবে এর ব্যবহারে কি ততটাই দম রয়েছে? এআই বেসড চ্যাটবটের উত্তরগুলোকে কি সত্যিই চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়? আপনাদের কি সত্যিই মনে হয় এক মিনিটের মধ্যে একটা কম্যান্ডের নিরিখে একটা কবিতা লিখে ফেলা যায়? আর সেটা আমাদের সোশ্যাল ফ্যাবরিককে সমৃদ্ধ করে? তাহলে চ্যাটজিপিটি নিয়ে এত হৈহৈ কি শুধুই একটা হাইপ? চ্যাটজিপিটি-র মেইন প্রবলেম হচ্ছে, রিয়াল আর ফেক ইনফরমেশনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না এই চ্যাটবট। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফর্মাল টোনের মাধ্যমে গ্র্যামাটিকালি সঠিক কনটেন্ট দেওয়ার কারণে ইউজারের মনে হতে পারে যে, চ্যাটজিপিটি থেকে পাওয়া ইনফরমেশন সঠিক। কিন্তু যে এআই রিয়েল আর ফেক ইনফরমেশনে ডিফারেনশিয়েট করতে পারে না, সে কখনও অথেনটিক ইনফরমেশন দেবে, সেটা চোখ বন্ধ করে আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন? আর ঠিক এই কারণেই স্ট্যাক ওভারফ্লো তার নিজের প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যান করে দিয়েছে চ্যাটজিপিটি-র মতো যুগান্তকারী আবিষ্কারকে। আর এত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে মানুষের ক্রিয়েটিভিটির সঙ্গে পাঙ্গা দেবে চ্যাটবট? হাসালেন মশাই। যেসমস্ত স্টুডেন্টরা বইয়ের বদলে ইন্টারনেটকে ভরসা করেন আনলিমিটেড ইনফরমেশনের জন্য, তাদের জন্য চ্যাটজিপিটি-র প্রভাব কিন্তু মারাত্মক হতে পারে।
অন্যদিকে ট্রেইন্ড ডেটার কারণে চ্যাটজিপিটি অনেকসময় বায়াসড ইনফরমেশন দিতে পারে। আর সেই বায়াসড উত্তর একজন ইউজারের ভাবনা চিন্তার মধ্যে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করবে। লিমিটেড ইনপুট থেকে ম্যাক্সিমাম আউটপুট- এই নেক্সট লেভেল ফিচারের কারণে আজ চ্যাটজিপিটি কিন্তু ইউজারদের হট ফেভরিট হয়ে উঠেছে। তবে এই ধরণের ফিচার মানুষের মধ্যে বা স্পেসিফিক্যালি বলতে গেলে স্টুডেন্টদের মধ্যে একটা নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলবে। তাদের নিজেদের ক্রিয়েটিভ মাইন্ডকে এক্সপ্লোর করতে বাধা দেবে। আর যে কারণে ব্লগার, কোডার বা আর্টিস্টের জন্য চ্যাটজিপিটি একটা বড়সড় থ্রেট হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর এই সবকিছুর শেষে আরেকটা সতর্কবার্তা, সেটা হচ্ছে চ্যাটজিপিটির প্ল্যাটফর্ম কিন্তু হ্যাকারা ইজিলি অ্যাক্সেস করতে পারবে। আর তেমনটা হলে, সাইবার অ্যাটাকস কোন লেভেলে পৌঁছতে পারে, বুঝতে পারছেন?
কিন্তু কি বলুন তো, সব জিনিসেরই তো ভালো খারাপ রয়েছে। তাই শুধু অসুবিধে গুলোকে বড় করে দেখে একটা নতুন ইনভেনশনকে ইগনোর করে যাওয়া dishonesty হবে। আর মানুষের চাকরি হারানোর কথা যদি ওঠেই, তবে বলে রাখি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কিছু কাজ এআই দ্বারা রিপ্লেস করা সম্ভব। কিন্তু তাই বলে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সেটা অস্বাভাবিক। আর সত্যি বলতে কি, শিল্প বিপ্লব থেকে মেশিন রেভলিউশন অথবা ইন্টারনেটের ইনভেনশন- যেকোনো নতুন চেঞ্জ প্রথমে আমাদের একটু অবাক করে ঠিকই, কিন্তু নেচার মানুষকে এমনভাবে বানিয়েছে যে যেকোনো ওয়ার্ক এনভায়ারনমেন্টে নিজেকে অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারে। সুতরাং যত যা রিপ্লেস্মেন্টই আসুক না কেন, কোনকিছুই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে পারবে না ওয়ার্কিং এবিলিটির ওপর। সুতরাং দিন যত এগোবে ততই নতুন নতুন ইনভেনশন আসবে, আর সেটা নিয়ে হয়ত চাঁদ কিংবা মঙ্গলে গিয়ে চর্চা করবে আমাদের নেক্সট জেনারেশন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ