Trending
চন্দ্রযান-৩। যাকে ঘিরে আরও একবার আশায় বুক বাঁধছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা। আগামী ১৪-ই জুলাই-ই হয়তো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যেদিন শ্রীহরিকোটা সাক্ষী থাকবে আরও এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের। চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে চন্দ্রযান-৩। কি এই চন্দ্রযান-৩? চন্দ্রযান-২ এর থেকে এটা আলাদা কেন? এবং কেন চন্দ্রযান-৩ নিয়ে এত মাথাব্যাথা ভারতের? সবটাই জানাবো আপনাদের।
একটা সময় ছিল, যখন মহাকাশে একচেটিয়া রাজত্ব ছিল চিন এবং আমেরিকার। তারপর দুটো তীক্ষ্ণ বুদ্ধির মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম আর একটা গরুর গাড়ি- ঠিক কতটা রেভোলিউশনারি ছিল, সেটা আশা করি মনে আছে। মহকাশ গবেষণায় সেই প্রথম ডানা মেলল ভারত। শ্রীহরিকোটা থেকে উড়ল চন্দ্রযান। জুলাইয়ের এমনই এক দিন ছিল সেদিন। যেদিন পৃথিবীর মাটি ছেড়ে চাঁদের দেশে যাত্রা করেছিল চন্দ্রযান-২। গোটা ভারতের চোখ ছিল টিভি-র পর্দায়। একটা চাপা উত্তেজনা। আর ঠিক কিছুক্ষনের অপেক্ষা। চোখের পাতা পড়ছে না, নিঃশ্বাস চেপে বসে আছেন ইসরোর কর্মকর্তারা, বসে আছে ভারতের সাধারণ মানুষ। কিন্তু এত অপেক্ষা, এতসব- শেষ হয়ে গেল সবটা। প্রথমবারের মতো চাঁদের সাউথ পোলে পৌঁছনোর স্বপ্ন ধরাশায়ী থেকে গেল ভারতের। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা…
সেই নিস্তব্ধতাকেই একপ্রকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে অ্যাক্সেপ্ট করেছিলেন ইসরোর বৈজ্ঞানিকরা। চার বছর পেরিয়ে আবারও আসছে আরেক মাহেন্দ্রক্ষণ। শ্রীহরিকোটা থেকে যাত্রা শুরু করবে চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযান-২ এর রাস্তা ধরেই এগবে সে। কারণ এটা চেনা রাস্তা। পথে কোন বিপদ আপদ হলে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছে ইসরো। কিন্তু চন্দ্রযান-৩ ভারতের কাছে এতটা ইম্পরট্যান্ট কেন?
প্রথমেই বলি, চন্দ্রযান মিশন কি? ভারতের চন্দ্রযান মিশন হচ্ছে একটা লুনার মিশন। চাঁদের অজানা রহস্য ভেদ করতেই চন্দ্রযান মিশনের শুরু করে ভারত। চাঁদের যে প্রান্ত এখনও প্রায় আনএক্সপ্লোরড, সেই প্রান্তেই যাবে এই চন্দ্রযান। আর এই মিশনে যদি ভারত একবার সফল হয়ে যায়, তাহলে স্পেস রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রিতে ভারতের জায়গাটা দৃঢ় হবে আরও। রয়েছে জিওপলিটিক্যাল ইম্পরট্যান্সও। যে প্রান্তে চিন কিংবা আমেরিকা এত বছর ধরে চেষ্টা চালানর পরও পৌঁছতে ব্যর্থ, সেখানে ভারতই হবে প্রথম দেশ। সুতরাং স্পেস রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রিতে এটা ভারতের কাছে এটা কত বড় মাইলফলক, সেটা আন্দাজ করতে পারছেন তো?
চন্দ্রযান-২ এর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই যাত্রা করছে চন্দ্রযান-৩। চাঁদের সাউথ পোল বরাবরই রহস্যের জায়গা। অন্ধকার ঘুটঘুটে এই প্রান্তের উষ্ণতা প্রায় -২৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি। এখানে হাইড্রোজেনের মাত্রা বেশি থাকায় জল থাকার সম্ভাবনা প্রবল। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন চাঁদের ঠিক এই প্রান্তে প্রায় ১০০ মিলিয়ন টন ক্রিস্টালাইজড ওয়াটার থাকতে পারে। একইসঙ্গে এখানে অ্যামোনিয়া, মিথেন, সোডিয়াম, মার্কারি, সিলভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদার্থের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে। কাজেই চন্দ্রযান-৩ এর এই চাঁদের সাউথ পোলের উদ্দেশ্যে যাত্রা এলিমেন্টাল এবং পজিশনাল রিসার্চের জন্য ভারতের কাছে ভীষণভাবে জরুরী। হয়ত, স্পেস রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের অস্তিত্বের বুনিয়াদ পাকাপোক্ত করতে, এটাই হতে পারে ভারতের জাদুকাঠি।
ইসরোর বর্তমান চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, চাঁদের লুনার সারফেসে সায়েন্টিফিক একপেরিমেন্ট কন্ডাক্ট করানই এই চন্দ্রযান-৩-এর এক এবং একমাত্র লক্ষ্য। ঠিক এই কারণেই চন্দ্রযান-৩ এর মেকানিজম এবং ডিজাইনে কোন কম্প্রোমাইজ করেনি ইসরো। যাতে এক ভুল বারবার না হয়, তাই অ্যাটাচ করা হয়েছে আপডেটেড সফটওয়্যার। সিকিউর ল্যান্ডিং-এর জন্য সাবধানতা যেমন রয়েছে তেমনই বিপদ এড়াতে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যামেরাও। কিন্তু চন্দ্রযান-২ এর সেই অভিশপ্ত ইতিহাস আজও স্পষ্ট সকলের মধ্যে। বারবার একটাই প্রশ্ন। এত প্রিপারেশন, রিসার্চ- সব জলে যাবে না তো? যাবে না। এই বিষয়ে ১০০ শতাংশ আস্বস্ত করেছেন ইসরোর বর্তমান চেয়ারম্যান এস সোমনাথ।
বদলাচ্ছে ভারতের স্পেস রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রির বাতাবরণ। স্পেস রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রিকে প্রপার সাপোর্ট করার জন্য বেড়েছে বাজেটেও। নিজেই ব্যারিয়ার তৈরি করছে, নিজেই সেটা ভাঙছে। চিনের স্পেস ইন্ডাস্ট্রি- যার গুণগানেই মত্ত গোটা দুনিয়া, আজ তাকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে ভারতের ইসরো। মহাকাশে দাপিয়ে বেরাবে ভারত, মত বিশেষজ্ঞদের। এই চন্দ্রযান-৩ মিশন সাকসেসফুল হলে শুধু ইসরোই নয়, গোটা ভারতের জন্যই দারুন একটা অ্যাচিভমেন্ট হবে। এরপর ভারত পৌঁছবে অন্তরীক্ষে। সেখানে চালাবে গবেষণা। তারপর পৌঁছবে সূর্যের অরবিটে। গবেষণা করবে সূর্যকে নিয়ে। ইসরোকে বিশ্বের অন্যতম লিডিং স্পেস স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।