Agriculture news
হলদে সবুজ ওরাং ওটাং
ইট পাটকেল চিৎপটাং
মুস্কিল আসান উড়ে মালি
ধর্মতলা কর্মখালি…
সুকুমার রায়ের দ্রিঘাংচু গপ্পোটি ভালো করে পড়লে এই কবিতার মাধ্যমে লেখক সুকুমার কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা স্পষ্ট হয়। কিন্তু এই কবিতার সঙ্গে আজকের প্রতিবেদনের যোগসূত্র কোথায়? কোথাও না। তবে কিছু কিছু জায়গায়…ঐ মনে পড়ে যায়। যেমন ফুলকপির ফলন গতে বাঁধা হতেই পারে। চাষ করলেই ফলন হবে স্বাভাবিক এবং গতানুগতিক। সেটাই আমরা জানি। ফলে আমরা অনেক সময়ই শুনতে পাই যে গতে বাঁধা পদ্ধতিতে চাষ করতে করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বহু লোক। অর্থাৎ কর্মখালি! না, বরং হলদে, সবুজ বা বেগুনি ফুলকপি চাষ করেই কর্মব্যস্ততা বাড়তে পারে ভালোরকম। একেবারেই ভাববেন না যে এই কপি শৌখিনতার মাপকাঠিতে মাপা হয়। কৃষকদের মধ্যে এই রঙিন ফুলকপি চাষই বেশ হিট। কোথায় হচ্ছে এই ফুলকপি চাষ? কোলাঘাট ব্লকে মানে পূর্ব মেদিনীপুর।
কৃষকের নাম প্রমথনাথ মাজি। ভদ্রলোক বহুদিন ধরেই ফুলকপির চাষ করছেন। কিন্তু ধরাবাঁধা ঐ সাবেকি চাষে তেমন মন মজে না প্রমথবাবুর। বিদেশি আনাজ চাষের ব্যপারে তাই ওর মধ্যে সবসময়ই একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে রয়েছে ব্রকোলি, চায়না টোম্যাটো, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি। কিন্তু এবার প্রমথবাবু সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছেন। এই বছরেই পরীক্ষামূলকভাবে তিনি চাষ করছেন হলদে, সবুজ বেগুনি রং-এর ফুলকপি। দেখতে যেমন, স্বাদও তেমন। জানা যাচ্ছে, প্রথমে এই ধরণের চাষ নিয়ে একটু ভয়ভীতি ছিলই। তবে যেভাবে ফলন শুরু হয়েছে, তাতে দিনের শেষে রোজগার মন্দ হচ্ছে না কিন্তু। সাড়াও পাচ্ছেন ভালোরকম। শুধু রং-এর বাহার নয়, এই ফুলকপি নাকি স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ ভালো। এই বিষয়ে কি বলছেন কৃষক প্রমথনাথ মাজি, শুনে নেওয়া যাক। তিনি বলেছেন ২০১৩ সালে তিনি প্রথম ব্রকোলি , চায়না বাঁধাকপি চাষ শুরু করেছিলেন তাতে ভাল সাফল্য পেয়েছিলেন । বর্তমান মার্কেট তিনি সবুজ , হলুদ , বেগুনি নানা রকমের ফুলকপি চাহিদা বেশি দেকেছেন । এর গুনাগুন আছে নানা রকমের রং-এর কারনের প্রোটিন পরিমাণ টাও বেশি থাকে।
তবে এই বছর খুব বিস্তৃত জমি জুড়ে যে তিনি রঙিন ফুলকপি চাষ শুরু করেছেন, এমন কিন্তু নয়। এবারে একটু সতর্কতার সঙ্গে হাজার খানেক চারা চাষ করছেন। এবং সেটাই এখন কৃষক প্রমথনাথ মাজিকে আরও বেশি উৎসাহিত করছে। তিনি ঠিক করছেন, পরের বছর আরও বেশি পরিমাণ ফুলকপি চাষ করবেন। এমনই রঙিন, বাহারি এবং স্বাদেও বেশ অন্যরকম হবে। একইসঙ্গে বজায় থাকবে তার স্বাস্থ্যগুণ।
বর্তমানে এই বাহারি ফুলকপি বিক্রি করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী যশোড়া, খুকুড়দহ, দেউলিয়া এবং কোলাঘাট বাজারে। জানা গিয়েছে, বর্তমানে গড়ে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে এই ফুলকপি। তিনি তো নিজে চাষ করে খুশি। পরের বছরেও নাকি আরও বেশি করে চাষ করবেন তিনি। আর এখন বাহারি ফুলকপির চাষ এতটাই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে যে অন্যান্য চাষিরাও এখন আসছেন এই বাহারি ফুলকপির চাষ দেখতে। এমনকি তাঁরাও ভালোরকম উৎসাহী হচ্ছেন। আজ তিনি আর নিজের গ্রামের শুধু কৃষক নন। একজন কৃষকবন্ধু হিসেবে নিজের দক্ষতাকে আলাদাভাবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনিই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, এই চাষ করলে কর্মখালি হবার কোন অবকাশ নেই। বরং ধরাবাঁধা গত থেকে বেরিয়ে আরও নতুন নতুন চাষে আগ্রহী করে তুলবে সবাইকে।
প্রসূন ব্যানার্জী
পূর্ব মেদিনীপুর