Story

কথায় আছে, দিন কাহারো সমান নাহি যায়। বহু প্রচলিত প্রবাদটি, এবার হাড়ে হাড়ে টের পেলেন নদীয়ার একদল কপি চাষী।
অসময়ে সময়ের সবজি বাজারে যোগান দিয়ে যেভাবে মোটা লাভের অংক ঘরে তোলেন সেই হিসাবটাই এবার একেবারে গোলমেলে হয়ে গেল মাঠের ফসল মাঠে পড়ে থাকতে। একে করোনায় বাড়বাড়ন্ত অন্যদিকে ধুনোর গন্ধ নিয়ে হাজির সরকারি নিষেধাজ্ঞা। ফল আর কি? অনেকটাই যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন গোছের। পাইকারদের ঘরে চাহিদা কম, তাই চাষির পকেটেও পয়সা কম। ঠিক এমন একটা সময় যখন গরমও চোখ রাঙায়, পারদও চড়ে ৪০ ডিগ্রিতে। গেল বছরেও লাভের মুখ দেখতে পেয়ে চওড়া হয়েছে রাকেশ মণ্ডল, মীর হাসান বিশ্বাসের মত চাষিদের হাসি। কারণ শীতের ফসল শীতে ফলবে এতো জানা কথা। কিন্তু গরমকালে শীতের ফসল ফলালে লাভের অঙ্ক একটু বেশিই থাকে। সুযোগ, সময় সবই যেন বাঁধা থাকে নিয়মে।
নদিয়া জেলার হরিণঘাটা ব্লকের মিত্রপুর গ্রামে ১০০ বিঘে জমিতে গরমকালে রাকেশ মণ্ডল, মীর হাসান বিশ্বাসের মত চাষিরা প্রতিবছরই ফুলকপি, বাধাকপির চাষ করে থাকেন অসময়ে। অর্থাৎ গরমকালের কাঠফাটা রোদে। অসময়ের ফসল তাই চাষ করতে একটু বেশি খরচ করতে হয় বৈ কি! শীতকালে যেখানে এক বিঘে জমি চাষ করতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা সেখানে গরমকালে সব্জি চাষ করতে খরচ হয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। তবু তাঁরা এই সময়েই চাষ করে থাকেন। কারণ শীতকালে বিক্রি করে যেখানে লাভের পরিমাণ থাকে মাত্র ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা সেখানে গরমকালে বাধাকপি, ফুলকপি বিক্রি করে চাষিদের অ্যাকাউন্টে ঢোকে বিঘে প্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু এই বছর সবই যেন ওলটপালট করে দিল করোনার দ্বিতীয় ঝড়। ফসল ফলেছে ঠিকই কিন্তু বিক্রি ঠেকেছে একেবারে তলানিতে।
সরকারি নির্দেশ মত এখন বাজার খোলা থাকছে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। লকডাউনের খাঁড়া ঝুলে থাকার জন্য বাজারহাটে কমেছে মানুষের যাতায়াত। তাই বিক্রিও কমেছে নজিরবিহীন। যেকারণে ব্যবসায়ীরাও ভয় পাচ্ছেন, চাষিদের কাছ থেকে কপি কিনতে। কিনলেও এতো কম দামে কিনছেন যে চাষিদের পরিশ্রমটাই যেন বিফলে চলে যাচ্ছে।
এইসকল এলাকার মাটি বেশ মোটা। গরমের সময় খুব একটা বেশি চাষও হয় না। তাই অনেক আশা নিয়ে মীর হাসান বিশ্বাস বা রাকেশ মণ্ডলের মত কৃষকেরা জোর করেই ফুলকপি, বাধাকপির চাষ করে থাকেন। কিন্তু ভাইরাসের হানা যে সেখানেও। তাই সারি বেঁধে জমির ওপর ফলে থাকা ফুলকপি, বাধাকপি যেন জমিতেই রয়ে গেল। উঠে এলো না সাধারণ মানুষের হেঁশেলে। অন্ধকার নেমে এলো বিঘের পর বিঘে জমিতে। প্রশ্ন, তাহলে কি এইবছর সব পরিশ্রম একেবারে বৃথা হয়ে যাবে?
দেবস্মিতা মণ্ডল, উত্তর ২৪ পরগনা