Story
শৌখিন বাঙালির পরিচয় পাওয়া যায় তার অন্দরসজ্জায়। সঙ্গে যদি থাকে বেতের আসবাব। তাহলে তো কোন কথাই নেই। চেয়ার থেকে টেবিল থেকে ঘর সাজানোর নানা সরঞ্জাম। বেতের তৈরি এই সকল আসবাব চিরকালই বাঙালির মনে ভালোরকম জায়গা করে নিয়েছে। আর শুধু বাঙালি কেন? বেতের তৈরি আসবাবের প্রতি আগ্রহ রয়েছে বিদেশিদের মধ্যেও। তাই বেত শিল্প রাজ্যের বাজার অর্থনীতিকে চাঙ্গাও রাখে ভালোরকম ভাবে। কিন্তু করোনা যে পাঁজর ভেঙেছে এই শিল্পেরও।
উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার ২ নং ব্লকের খাটাজানি-টট পাড়া। এই গ্রামের সিংহভাগ মানুষ জড়িয়ে রয়েছেন বেত শিল্পের সঙ্গে। কেউ ৩০ বছর তো কেউ ৪০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় তৈরি করে আসছেন বেতের বিভিন্ন আসবাব। যা রাজ্যের বাউন্ডারি পেরিয়ে পৌঁছে যায় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। হস্তশিল্পে মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বেতশিল্পের জন্য সুখবর। কারণ আগ্রহ বাড়লে তবেই না ঘুরবে বেত শিল্পের চাকা।
বেত আসে মূলত অরুণাচল প্রদেশ এবং মেঘালয় থেকে। আর নিপুণ হাতে তৈরি বেতের এই শিল্পসামগ্রীর মধ্যেই ফুটে উঠছে শৌখিনতা। তাই বনজ এই উদ্ভিদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা থেকেছে ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু বর্তমানে এই বেত শিল্পকে সঙ্গে করে ভালো ভাবে কাজ করতে গেলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই সরকারি সুবিধা পেলে বেত শিল্পের প্রসার ঘটবে ভালোরকম। অন্তত এমনটাই মনে করছেন আরেক বেতশিল্পী নারায়ণ রাজবংশী।
করোনা এবং লকডাউনের সাঁড়াশি আক্রমণে বেত শিল্পীদের মুনাফা ঠেকেছে তলানিতে। সরকারি সুযোগ সুবিধাও সেভাবে নেই। ফলে অতিমারির আগে এই বেত শিল্প যেখানে আর্থিক নিশ্চয়তার দিকটা খেয়াল রাখত, এখন সেই শিল্প জুড়েই নেমেছে যেন অনিশ্চয়তার আবহ।
তবে লকডাউনের কারণে বেত শিল্পে যেভাবে ভাটা নেমেছিল এখন সেখান থেকে অনেকটাই ভালো জায়গায় রয়েছে বেত শিল্প। তবে সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন যে রয়েছে সে কথা স্বীকার করে নিলেন আরেক বেত শিল্পী ক্ষিতীশ রাজবংশী।
প্লাস্টিক শিল্প জাঁকিয়ে বসার পর থেকে বেত শিল্পের অবস্থা একটু হলেও টালমাটাল হয়েছিল। কিন্তু ক্রেতারা বুঝতে পেরেছে বেতের তৈরি আসবাবের স্থায়িত্ব। একটু ভালো বেতের আসবাব টিকে যেতে পারে ৩০ বছর ৪০ বছর এমনকি ৬০ বছর পর্যন্ত। একে স্থায়িত্ব, দুয়ে তার বাহারি ডিজাইন। শৌখিনতা এবং নির্ভরযোগ্যতায় বেত শিল্প দারুণভাবে টেক্কা দিয়েছে প্লাস্টিক শিল্পকে। আর যে কারণে বেত শিল্পের ব্যবসার ভাগ্যে এই মুহূর্তে খুব একটা অনিশ্চয়তা নেই।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার