Story
দেশ স্বাধীন হয়েছে এতোগুলো বছর পেরিয়ে গেল। এই দীর্ঘ বছরগুলিতে গোটা বিশ্বে বদল এসেছে বড় রকমের। বদল এসেছে ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে। সেই বদলের চাকা ঘুরিয়ে গোটা ভারত আজ বিশ্বমঞ্চে একের পর এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ রেখে চলেছে। তারই সূত্র ধরে গোটা বিশ্বের কাছে একটা ইঙ্গিত খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেটা হল, প্রোগ্রেস অফ ইন্ডিয়া। যা গোটা বিশ্বের কাছে সমীহ তৈরির জন্য যথেষ্ট। আসুন, আজ স্বাধীনতা দিবসে আমরা তুলে ধরি একটা স্পেশ্যাল প্রতিবেদন। যে প্রতিবেদনে আমরা একটা ধারণা রাখার চেষ্টা করব যে আদৌ কি সুপারপাওয়ার হতে চলেছে ভারত?
ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের যে সকল পণ্ডিতব্যক্তি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কেনেথ ওয়ালটজ। তিনি সুপারপাওয়ারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে থাকেন-
১ পপুলেশন অ্যান্ড টেরিটরি
২ রিসোর্স এনডাওমেন্ট
৩ ইকোনমিক ক্যাপাবিলিটি
৪ পলিটিকাল স্টেবিলিটি
৫ মিলিটারি স্ট্রেন্থ
আরেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব জন মিয়ারশাইমার বলেছেন, ‘দ্য নেশন হ্যাভিং মিলিটারি পাওয়ার টু গো ফর অ্যান অল-আউট ওয়ার উইথ দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল নেশন ইজ আ সুপারপাওয়ার’। সেই হিসেবে দেখতে গেলে, আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইউএসএসআরের নাম উঠেই আসে। এখন সুপারপাওয়ার বলতে অনেকেই আবার চিনের কথা বলছেন। কিন্তু ভারত কি সুপারপাওয়ার দেশগুলোর তালিকায় ঢুকতে চলেছে?
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের কাউন্সিলর ক্লাইড ভি প্রেস্টোউইজ জুনিয়র- টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিকে ইন্ডিয়ান সেঞ্চুরি বলে উল্লেখ করেছিলেন। কেন? তাঁর ভবিষ্যৎবাণী কতটা মিলছে? দেখুন, আজ কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারত পোটেনশিয়াল সুপারপাওয়ারের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। পোটেনশিয়াল সুপারপাওয়ার মানে, যে দেশ সুপারপাওয়ার হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বর্তমানে একমাত্র আমেরিকাই সুপারপাওয়ার হওয়ার যাবতীয় শর্তপূরণে সক্ষম হয়েছে। মিলিটারি থেকে ইকোনমি, টেকনোলজি থেকে কালচার। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকেই যে দেশগুলো সুপারপাওয়ার হওয়ার পথে ক্রমশ এগোচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএসএসআর, চিন এবং ভারত।
প্রথমেই বলি ইকোনমিক সুপারপাওয়ার। এখন ধীরে ধীরে চিনের সঙ্গে ভারতও নিজের অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করছে। মনে করা হচ্ছে, আগামীতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ারসকে এশিয়ার দেশগুলোই ডমিনেট করবে। গোল্ডম্যান স্যাকসের ২০০৩ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী পঞ্চাশ বছরে সকল মেজর ইকোনমির মধ্যে ভারতের ইকোনমি সবচেয়ে দ্রুত এগোবে। আর ২০২১ সালে আইএইচএস মার্কিটের একটি রিপোর্ট বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত জাপানকে পিছনে ফেলে দিয়ে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। তৈরি হবে ৮.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। কিন্তু কিভাবে? মনে করা হচ্ছে, এর পিছনে কাজ করবে র্যাপিডলি বাড়তে থাকা মিডল ক্লাস পরিবার। যে কারণে কনজিউমার গুডসের ডিমান্ড আরও বাড়বে। কনজাম্পশন এক্সপেনডিচার ২০৩০ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে। কনজিউমার মার্কেটের সঙ্গে লার্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেস গোটা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
জানা যাচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ১১০ কোটি ভারতবাসী ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হবেন। এমনকি ৫জি টেকনোলজি চলে আসার প্রস্তুতি শুরু হওয়ার কারণে দেশের ইউনিকর্নগুলো আরও বেশি মাত্রায় বুস্ট আপ হবে। এছাড়াও ইজ অফ ডুইং বিজনেস ভারতে এফডিআই বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। আইএইচএস মার্কিটের তথ্য অনুসারে- ম্যানুফ্যাকচারিং, ইলেকট্রনিক্স, কেমিক্যাল, সার্ভিস সেক্টর, ব্যাঙ্কিং, ইনশিওরেন্স, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ইনফরমেশন টেকনোলজির ফিউচার প্রসপেক্ট অনেকটাই পজিটিভ। আমেরিকা এবং ইউরোপের প্রথম সারির সমস্ত সংস্থাগুলি হাইলি স্কিল সার্ভিসেস এবং প্রফেশনালদের জন্য ভারতের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। উদাহরণ যদি দিতেই হয়, তাহলে গুগল, ফেসবুক, অ্যাডবের নাম করতেই হয়। এমনকি আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের মতন প্রতিষ্ঠানের মাথাতেও রয়েছে ইন্ডিয়ানরাই। মনে করা হচ্ছে, ইন্ডিয়াতে ইয়ং জেনারেশন অনেক বেশি থাকার কারণে আরও তাড়াতাড়ি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সক্ষম হবে। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ইয়ং জেনারেশনকে ঠিকঠাকভাবে ব্যবহার করতে পারলে, ভারত খুব তাড়াতাড়ি চিনকে ছাপিয়ে যেতে পারবে।
এবার আসা যাক মিলিটারি এবং গ্লোবাল ইনফ্লুয়েন্সের দিকে। ইকোনমিক পাওয়ার হাউজের লিস্টে জার্মানি, জাপান বা ইতালির নামও রয়েছে। কিন্তু এই দেশগুলোর একটিও সুপারপাওয়ার নয়। কারণ, মিলিটারি পাওয়ারের দিক থেকে এরা অনেকটাই পিছিয়ে আমেরিকা বা চিনের থেকে। আল্টিমেট মিলিটারি ইনডেক্সের ২০২১ এর একটি রিপোর্ট বলছে, মিলিটারি পাওয়ারের দিক থেকে একেবারে সামনের সারিতে রয়েছে চিন। এরপর রয়েছে আমেরিকা এবং ইউএসএসআর। বলা হচ্ছে, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মিলিটারি পাওয়ার রয়েছে এখন ভারতের হাতে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মিলিটারি পাওয়ার ভারতকে অন্যান্য দেশের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। আর মনে করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মিলিটারি পাওয়ার। এটা ঠিক যে, মিলিটারি খাতে ভারতের খরচা আমেরিকা বা চিনের থেকে অনেকটাই কম। সেক্ষেত্রে ভারতের অর্থনীতি মজবুত হলে আরও বেশি করে মিলিটারি পাওয়ারে খরচার অঙ্ক বাড়াতে পারে ভারত। একইসঙ্গে ইসরো এবং ডিআরডিও-র যৌথ প্রয়াস ভারতকে রিসার্চ এবং অর্গানাইজেশন সেক্টরে অনেকটা এগিয়ে দিতে সাহায্য করবে। কালচারাল হেজিমনি ভারতকে সুপারপাওয়ার হিসেবে তৈরি করতে আরও সাহায্য করবে। যা পজিটিভ অ্যাটিটিউড তৈরি করবে। এর মধ্যে রয়েছে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সফট পাওয়ার, অ্যাকাডেমিশিয়ান্স, ফিল্মস, মিডিয়া- এই সবই একটা দেশকে বিশ্ব মঞ্চে অনেকটা এগিয়ে রেখে দেবে। আর আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হাজার হাজার বছরের। এছাড়াও একটি সমীক্ষা বলছে, সবচেয়ে বেশি এনআরআই রয়েছেন ভারতের। একইসঙ্গে ইন্ডিয়ানদের সংখ্যাটাও দিনে দিনে বাড়ছে শুধু আমেরিকা, ইওরোপে নয়। এমনকি প্যাসিফিক থেকে সাউথ-আমেরিকায়। এরাই কিন্তু সফট পাওয়ারের তালিকায় ভারতকে আরও অনেকটা শক্তপোক্ত করেছে।
এটা ঠিক যে, সুপারপাওয়ার হতে গেলে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম গরিবিয়ানা। তবে আশা করা যায়, গরিবিয়ানা যত দিন যাবে ততই কমবে। ভবিষ্যতে মিডল ক্লাসের সংখ্যা পৌঁছে যেতে পারে ৮০ শতাংশে। তাই সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ভারত। আজ, স্বাধীনতা দিবসে বিজনেস প্রাইম নিউজ ভারতকে দেখতে চায় বিশ্বমঞ্চে শ্রেষ্ঠ আসনে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ