Trending
চিনের সঙ্গে টক্কর দেওয়া মুখের কথা নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো চিনকে দুর্দান্ত জবাব দেবার মত জায়গায় নেই। একমাত্র ভারত ছাড়া। সেটা চিনের জন্য যথেষ্ট হুঁশিয়ারি। পৃথিবীকে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি বলতে ঠিক কী বোঝায়, সেটাও চিনিয়েছে চিন। আজ সেই চিনকে কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে চাইছে ভারত। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ভারত চিনের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। কিন্তু গ্লোবাল মার্কেটে আপকামিং রুলার হিসেবে ভারতের উত্থান চিনের জন্য অ্যালারমিং তো বটেই। কিন্তু চিনের সঙ্গে ভারত কিভাবে টক্কর দেবে? অবশ্যই সামরিক ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রদর্শনের থেকেও এখন অনেক বেশি প্রয়োজন ইকোনমিতে কে কতদূর রুল করবে, সেটা দেখানোর। আর ভারতের মার্কেট যে বিশ্ব পুঁজিপতিদের জন্য অত্যন্ত লোভনীয় হয়ে উঠছে, সেটা এতদিনে সকলেই বুঝে গেছে। ভারতের মার্কেট যে বুমিং- এই বিষয়টা অন্যান্য দেশগুলোকে বোঝাতে আরও বেশি সাহায্য করছে জাতিসংঘ, আইএমএফের মতন প্রতিষ্ঠান। কেন এই কথা বললাম? কারণ, সম্প্রতি জাতিসংঘ একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। আর সেখানেই স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ২০২৪ সালে দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে ৬.৭ শতাংশ হারে। আর চলতি বছরে বৃদ্ধি পেতে পারে ৫.৮ শতাংশ। এখন বিষয়টা হচ্ছে যে, কিভাবে ভারত নিজের ইকোনমিকে এতোটা গ্রোথ দিতে পারছে? আজকের প্রতিবেদন হতে চলেছে ছোট্ট, তবে খুব ইন্টারেস্টিং।
বেশ কয়েকদিন আগের একটা ভিডিও খুব ভাইরাল হয়েছিল। আপনারাও হয়ত দেখেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে এগিয়ে এসে মোদীর কাঁধে টোকা মারছেন। সকলেই জয় মোদী জয় মোদী করেছিল। মোদী ভক্তরা বলেছিলেন, এই হচ্ছে নাকি মোদী ক্যারিশ্মা। স্বয়ং মার্কিনী প্রেসিডেন্ট এগিয়ে এসে দেখা করছেন, এটা নাকি আধুনিক ভারতের দাদাগিরির প্রত্যক্ষ প্রমাণ। তবে সত্যি বলতে কী, শুধু আমেরিকা বলে নয়। আজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ- সেটা ফ্রান্স হতে পারে, জার্মানি হতে পারে আবার অন্য কোন প্রথম সারির দেশ হতে পারে। তারাও আজ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া করছে। বিশ্ব অর্থনীতি এমনি প্রেম-পিরিতির উপর নির্ভর করে চলে না। গ্লোবাল ইকোনমিতে রুল করার মূল বিষয় হচ্ছে বিজনেস। যে দেশ যত ভালো বিজনেস এনভায়রনমেন্ট তৈরি করতে পারে, সেই দেশের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রাখে প্রত্যেকটা দেশ। আর সত্যি বলতে কী, আমাদের ফরেন পলিসি এখন অনেকটাই জবরদস্ত। সেটার জন্য মোদী ক্যারিশ্মা যত না কাজ করেছে, তার থেকেও বেশি কাজ করেছে একমাত্র জয়শংকরের জন্য। জয়শংকর এখন ড্যাডি অফ দ্য ডিকেড। পাকিস্তান তো বটেই, এমনকি প্রত্যেকটা দেশই আজ ইন্ডিয়ার ফরেন পলিসি নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ইয়ে, তাঁর ঐ কাটা কাটা বাক্যবন্ধন, কাউকে তোষামোদ না-করা মানসিকতা, সটান উত্তর দেবার মত নির্ভীকতা। যা এতদিন হয়নি, সেটাই হচ্ছে। একইসঙ্গে ভারত সাফ বুঝিয়ে দিয়েছে, বাইরের ইনভেস্টরদের ভারতে এসে কাজ করার সুবিধে কতটা। প্রথম হচ্ছে, পপুলেশন আর দ্বিতীয় হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং সেটআপ। দেশের বড় বড় কর্পোরেট মাথারা আভ্যন্তরীণ বাজারে যে সুবিশাল মার্কেট তৈরি করে দিয়েছে, আজ সেই একইপথে বিদেশের কোম্পানিগুলোকে ভারতে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। হ্যাঁ, চিন পপুলেশন বৃদ্ধি নিয়ে একটা খোঁচা ভারতকে দিয়েছিল। চিনের বক্তব্য ছিল শুধু পপুলেশন বাড়লেই কি আর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে দাদাগিরি দেখানো সম্ভব? তার জন্য তো ভালোভাবে টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকাটা প্রয়োজন। চিন সেই কাজটা যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করেছে, সেটা বলে দিতে হবে না। কারণ ভারতে পপুলেশন বৃদ্ধি পেলেও এখানে বৈষম্য অনেক। ভারতের এই সুবিশাল ডাইভারসিটি হয়ত একটা প্রবলেম ক্রিয়েট করতে পারে। কিন্তু তবু কেন্দ্রীয় সরকার এই কাজটা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভালোভাবে করার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টা যে বিশ্ব বাজারে অনেকটা পজিটিভ এফেক্ট ফেলতে চলেছে, তাকে অস্বীকার করার জায়গা নেই। এবার সেই কথাটাই বলছে জাতি সংঘ।
আমরা সকলেই জানি, বর্তমান সময়ে বিশ্ব বাজার খুব একটা সুবিধেজনক জায়গায় নেই। টালমাটাল পরিস্থিতি, অস্থিরতা- এই সবই কাজ করছে বিশ্ব বাজারে। আমেরিকার মতন গ্লোবাল রুলারের অর্থনীতির ভাগ্যে আসতে চলেছে কালো দিন। সেখানে বিশ্ব অর্থনীতিতে সবথেকে বেশি গ্রোথ ধরে রাখবে ভারত! চলতি বছরে এই গ্রোথ ৫.৮ শতাংশ থাকলেও ২০২৪ সালে সেই গ্রোথ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৬.৭ শতাংশে। এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, এই বছরে সেই লক্ষ্য কেন পূরণ হবে না? কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বাইরের বাজারে ক্রমশই চাহিদা কমছে। তার প্রভাব পড়বে দেশের বাজারেও। একইসঙ্গে এখানে মূল্যস্ফীতি ঘোরাফেরা করছে ৬ শতাংশের আশেপাশে। সুতরাং তাকে ঠেকনা দিতে সুদের হার বাড়িয়েছে আরবিআই। সেটার প্রভাবও যে একেবারে নেই বলা ঠিক হবে না। তবে এখানেই একটা ব্যপার। অনেকে মনে করছেন যে, দেশে মুদ্রাস্ফীতি এই বছর ৫.৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াতে পারে ৫.৫ শতাংশে। যদি মুদ্রাস্ফীতি কমে আর এদিকে বিশ্ব মার্কেটে ভারত নিজের আভ্যন্তরীণ বাজারকে খুলে রাখে তাহলে চাঁদের হাট বসানোর জন্য তো গ্লোবাল কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বসেই রয়েছে। ফক্সকনের কথা ধরা যেতে পারে। সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরি, আইফোন তৈরি, ইভি মারসেডিজ ম্যানুফ্যাকচার এই সবই আজ হতে চলেছে ভারতের মার্কেটে। সুতরাং ভারত আজ গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং-এর কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে। সেটা অবশ্য ব্রাইট একটা স্পট। কিন্তু তাও…চিনকে টক্কর দেওয়া যে বড় কঠিন। মূল্যস্ফীতির কথাই যদি ধরি, তাহলে বলতে হবে যে ভারতে যেখানে মাত্র ৬% মতন, সেখানেই চিনে এখন মূল্যস্ফীতি ১ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। আর চিন থেকে কোম্পানিগুলো নিজেদের সরিয়ে নিয়ে যাবার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সেটা আইবটনে ক্লিক করে দেখতে পারবেন (কেন চিন থেকে পালাচ্ছে একের পর এক বিদেশি কোম্পানি)। তাও এখানে একটা মেজর কারণ বলে দিই। সেটা হল চিনে ন্যুনতম খরচার বিনিময়ে যে ওয়ার্ক ফোর্স পাওয়া যেত, আজ সেটা অনেকটাই কমে গিয়েছে। কারণ চিনের ওয়ান চাইল্ড পলিসি। কিন্তু চিনের পপুলেশন এবং সমান মানসিকতা দেশটার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টকে ভালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছে? ভারতের পক্ষে সম্ভব কিনা এই নিয়ে একটা প্রতিবেদন করার ভবিষ্যতে ইচ্ছে রইল। আপনারাও চিন এবং ভারতের কোন টপিক নিয়ে প্রতিবেদন দেখতে চান, সেটাও জানাবেন আমাদের। এই প্রতিবেদন শেষ করার আগে একটাই কথা বলছি, ভারত আজ যা করে দেখাচ্ছে সেটা অনেক দিন আগেই চিন করে দেখিয়েছে। আবার এটাও ঠিক যে পরিস্থিতি সবার সমান থাকে না। তাই চিনের পরিস্থিতি ঘুরছে। ভারতের ভাগ্য খুলছে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ