Story
আলিপুরদুয়ারের বর্মণপাড়া। আজ পরিচিত বড়িপাড়া হিসেবে। এলাকাতে। এই এলাকার অধিকাংশ মহিলারা বড়ি তৈরিতেই সারাবছর নিজেদেরকে যুক্ত রেখেছেন। ডালের বড়ি যেন এখানে কুটীর শিল্পের রূপ নিয়েছে।
সাত-আট বছর আগে নিছকই পরিবারের অভাব মেটাতে বিকল্প আয়ের সন্ধানে হাত পড়েছিল বড়ি তৈরিতে। সেই বড়ি তৈরিই যে এভাবে পাড়ার পর পাড়াতে শিল্পের আকার ধারণ করবে তা ভাবতে পারেননি অমরী বর্মণের মত মহিলারা।
তবে ভাবতে ভালো লাগে প্রতিমা বর্মণ, দিলীপ বর্মণদের আজ গোটা এলাকার মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরাও এগিয়ে এসেছেন এই কলাই ডালের বড়ি তৈরিতে।
বাঙালির নিরামিষ রান্নায় শুক্ত কিংবা শাকে বড়ি হল অপরিহার্য। বড়ি যেমন অপরিহার্য তেমনই বাজারে সারা বছর বড়ির জোগান ঠিক রাখতে যা শুরু হয়েছিল গৃহ উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে সেটাই আজ আলিপুরদুয়ারের গুয়াবারি টোল প্লাজা সংলগ্ন বর্মণ পাড়ায় এসে কুটীর শিল্পের রূপ নিয়েছে। এখানকার মহিলারা বিশ্বকর্মা স্বনির্ভর দল গড়ে নিজেদের আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন বড়ি তৈরির মধ্য দিয়ে।
নিপুণ শিল্পকলায় স্টিলের পাতের উপর কাপরের টোপলা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক বড়ি। কেউ বড়ি দিচ্ছেন আপন খেয়ালে। কেউ আবার স্টিলের পাতের উপর বিভিন্ন ডিজাইনও ফুটিয়ে তুলছেন বড়ির মধ্য দিয়ে। শুধু যে মহিলারাই দিচ্ছেন তা নয়। এই কাজে তাদেরকে যোগ্য সঙ্গত করছেন বাড়ির পুরুষরাও।
গোটা বর্মণপাড়াকে দেখে আজ আশেপাশের মহিলারাও উদ্যোগী হয়ে নেমেছেন এই বড়ি তৈরির ব্যবসায়। তৈরি হয়েছে কিছুটা প্রতিযোগিতা। আগে যে মুনাফা আসত, এখন এই প্রতিযোগিতার বাজারে সেই পরিমাণ মুনাফা না আসলেও মোটামুটি চলেই যায় এখানকার মানুষগুলোর। তবে সরকারি সাহায্য যদি পাওয়া যেত, আরও একটু ঘুরে দাঁড়ানোটা সহজ হত বর্মণপাড়ার মহিলাদের।
বাঙালির সারাবছরের রকমারি রসনায় বড়ি যে প্রতিটা ঘরেই লাগে সেকথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এই জেলার একটা গোটা পাড়ার অধিকাংশ মানুষরা যখন বড়ি তৈরিকেই নিজেদের জীবনধারণের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সেটা যেমন আশ্চর্যের বিষয়, তেমনি আশ্চর্যের বিষয় এই উদ্যোগে এখানকার মানুষরা এখনও পাননি সরকারকে তাঁদের পাশে।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার