Trending
বাজেট নিয়ে চর্চা তো অনেক হল। বাড়িতে একদফা আলোচনা, অফিসে তর্ক-বিতর্ক, রকে বসে আড্ডা- সমস্ত কিছুই হয়েছে। কিন্তু আসল কথাটা হল, আসলে আপনি কী পেলেন? পকেটে বাড়তি কতটুকু? আজকের ভিডিও অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট নিয়েই। না! অবশ্যই কোন রাজনৈতিক রং গায়ে লাগিয়ে নয়। আলোচনা হবে বাজেটের সঙ্গে জড়িত অর্থনীতি এবং নির্দিষ্ট কিছু স্টকের উপর বাজেটের কী রকম প্রভাব পড়তে পারে, তাই নিয়ে।
বাজেটে সাত ডিজিটের উন্নয়ন বার্তা নির্মলার। ২০২৪-এর অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেই বাজেটকে কার্যত বিকশিত ভারতের রোডম্যাপ বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি। তো বাজেট কতটা জনমুখী আর কতটা ভোটমুখী- আসা যাক সেই প্রসঙ্গে।
অর্থমন্ত্রীর অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছে, সেটা হচ্ছে ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার। অর্থাৎ পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যয়। এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১১.১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১১.১১ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেখুন, দেশের পরিকাঠামো খাতে যত বেশি অঙ্ক বরাদ্দ হবে, ততই দেশের মানুষের জন্য সেটা ভালো। ইনফাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট হবে, যাতায়াতে সুবিধা হবে, বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য। কাজেই এটা দেশবাসীর জন্য সুখকর তো বটেই। প্রশ্ন হল, সত্যি কী সেটা হয়েছে? কী বলছে বিগত বছরের হিসেব? ২০২৩ সালে খরচের হিসেব ছিল ১০ লক্ষ কোটি। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১১ লক্ষ কোটি। মানে ঐ ধরুন ১১%-এর কাছাকাছি বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিন্তু এখানেই একটা বিষয় নজর করতে হবে। আপনাদের হয়তো মনে থাকবে যে কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল যে, মার্চ ২০২৪-এর মধ্যে ৭০০ এয়ারক্র্যাফটের ২০০টির পরিষেবা নাকি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাতে কী হবে? কিছুই না। আপনারা যারা প্লেনে সফর করেন- তাদের পকেটে চাপ বাড়বে, কারণ ঊর্ধ্বগতিতে থাকবে প্লেনের ভাড়া। হিসেব বলছে, বিগত কয়েকবছরে ট্যুরিজম সেক্টর কার্যত রকেট হাই। প্রায় ৩-৪ গুণ বেড়েছে পর্যটনের সংখ্যা। সেই হিসেবে প্লেন পরিষেবার সংখ্যা কত বেড়েছে? নয় নয় করে দ্বিগুন। আর এয়ারপোর্টের সংখ্যা কত বেড়েছে? সেটাও ঐ মেরেকেটে দ্বিগুন। কাজেই যেভাবে এয়ার ট্র্যাভেলের ডিম্যান্ড বেড়েছে সেই হিসেবে কিন্তু ইনফাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট হয়নি- এটুকু পরিষ্কার। সুতরাং এর রেজাল্ট কী হবে? পরিষেবা পেতে আপনাকে বাড়তি পয়সা খসাতে হবে। সুতরাং এই বাজেটে ইনফাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টে নজর দেওয়াটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
এরপরেই রয়েছে ট্যুরিজমে জোর। পর্যটক টানতে হাত উপুড় করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে দেশীয় পর্যটনের থেকে বিদেশী পর্যটনে জোর দেওয়াটা। বিদেশী পর্যটন যত বেশি আসবে যত বেশি ফুলেফেপে উঠবে দেশের কোষাগার- সেই হিসেব কিন্তু জলের মতো সহজ। আর বিদেশী পর্যটক টানতে গেলে দেশে সেই পরিবেশ তৈরিতে জোর দিতে হবে। দেশের প্রতিটা পর্যটন ক্ষেত্রে বিদেশী পর্যটকের আকর্ষণ বাড়াতে তাদের কমফোর্টেবল পরিবেশ তৈরি করাটা জরুরী। সিভিক সেন্স ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে সেখানকার এডুকেশনাল ডেভলপমেন্ট, ইনফাস্ট্রাকচারাল ডেভলপমেন্ট করাটা বিশেষভাবে জরুরী।
লাখপতি দিদি স্কিম থেকে রুফটপ সোলার প্রোজেক্ট, লাক্ষাদ্বীপে ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট থেকে এমএসএমই-কে গ্লোবাল মার্কেটে তুলে ধরার পরিকল্পনা, আবাস যোজনায় ২ কোটি বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি- সবই ছিল নির্মলা সিতারামনের এবারের বাজেটের আলোচনায়। কিন্তু দেশের বেকারত্ব নিয়ে, বেকারত্ব কমানোর বিষয়ে কোন চমকই দেখা গেল না। অথচ এই বিষয়টাই সবথেকে বেশি হাইলাইটেড হবে বলে বসে ছিলেন কোন আইআইএম বা আইআইটি ডিগ্রিধারী বেকাররা। দেশে বেকারত্বের যা হাল, তাতে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা না হওয়াটা, বাজেটে এই নিয়ে একটি শব্দ উচ্চারন না হওয়াটা অস্বাভাবিকই বটে।
অপরিবর্তিত রয়েছে ট্যাক্স কাঠামো। কৃষি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা পরিকাঠামোয় কম অঙ্কের বাজেট বরাতের কারণে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। অথচ বাজেট বেড়েছে রেলে, বন্দে ভারতের কোচ উন্নতমানের করতে। যাই হোক! ২০১৯-এ অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে যেমন ভোটের আগে বড় চমক দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী, ২০২৪-এর বাজেটে কিন্তু সেসব দেখা যায়নি। তবে চমকহীন নির্মলার বাজেটের নেপথ্যে রয়েছে মোদীর কামব্যাক গ্যারান্টি? কামব্যাকের আত্মবিশ্বাস নিয়েই বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন? প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই।
এবার আসা যাক দালাল স্ট্রিটে এর কীরকম প্রভাব পড়তে পারে, সেই বিষয়ে। ইনফাস্ট্রাকচারাল ডেভলপমেন্ট খাতে বিপুল পরিবর্তন আসার প্রতিশ্রুতি মিলেছে এবারের বাজেটে। রয়েছে সোলারের প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্ট করারও প্রতিশ্রুতি। আর যে কারণে অনেকেই মনে করছেন ইনফাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট খাতে ইনভেস্টমেন্ট লাভদায়ক হতে পারে। সোলার এনার্জিতেও ইনভেস্ট করার কথা ভাবছেন অনেকে। তবে, বাজেটের পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কতটা ঠিক, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই। আর তাছাড়া, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ সর্বদাই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে, তবেই বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।