Trending
এতদিন পর্যন্ত জিও, এয়ারটেলের মত বেসরকারি সংস্থার দৌরাত্ম্যে একেবারে ফ্লপ শো-য়ে নাম লিখিয়েছিল বিএসএনএল। কিন্তু ফ্লপের তালিকায় নাম লিখিয়েও যে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাটি, সেই বিষয়ে কোন খেয়াল আছে? গ্রাহক সংখ্যার নিরিখে জিও, এয়ারটেল অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও বিএসএনএল কিন্তু ঘুরপথে বছরে হাজার কোটির সংস্থান করে নিয়েছে। আর এই হাজার হাজার কোটির সিংহভাগ দিতে হচ্ছে জিও-কেই। মানে, এগিয়ে থেকেও কিভাবে মুকেশ অম্বানির সাধের জিও-র থেকেই সবথেকে বেশি আয় করছে বিএসএনএল? সেটাই বলব আজকের আলোচনায়।
বিএসএনএলের সঙ্গে টাটা গ্রুপের নাম জড়িয়ে যাবার পরেই টেলিকম সেক্টর যেন নতুন করে দেশে ভাইরাল কী-ওয়ার্ড হয়ে গিয়েছে। তার অন্যতম কারণ জিও, এয়ারটেলের মত বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলোর প্ল্যানের চার্জ বৃদ্ধি। মোবাইল রিচার্জ করতে গিয়েই যদি আম আদমিকে গ্যাঁটের কড়ি এভাবে খরচ করতে হয় তাহলে উপায়? ডিজিটাল জমানায় বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলোর প্ল্যানের মূল্যবৃদ্ধি তাই অনেকেই দাদাগিরি বলেছিলেন। সবথেকে বেশি সমালোচিত হয় জিও। কারণ শুরুর দিন যেভাবে বিনেপয়সার সিম দিয়ে দেশের টেলিকম সেক্টরে নিজের দাদাগিরি দেখাবে ঠিক করেছিল, যতদিন এগিয়েছে ততই যেন সেখানে নেমেছে ভাটা। দিন দিন মূল্যবৃদ্ধি যেন জিও-র গ্রাহকদের তিতিবিরক্ত করে তুলেছিল। এমনই একটি সময়ে বিএসএনএল ফিরে এলো স্বমহিমায়। যখন জিও, এয়ারটেলের দাদাগিরি ছিল না সেই সময় বিএসএনএলের যে সাবেক কৌলীন্য ছিল, যা এতকাল প্রায় মুছে যেতে বসেছিল, ফের স্বমহিমায় ফিরে আসার কারণে বিএসএনএলকে ঘিরে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে যাবতীয় আশা ভরসা। প্রতিদিন নতুন নতুন আপডেট নিয়ে আসছে বিএসএনএল। দুর্মূল্যের বাজারে বিএসএনএল ক্রমশই নিজেকে গ্রাহক ফ্রেন্ডলি করে তুলছে। ফলে জিও ছাড়ছেন অনেকে। পোর্ট করাচ্ছেন বিএসএনএলে। কিন্তু আপনারা কি জানেন, বিএসএনএলের মার্কেট সেভাবে এই বাজারে না থাকলেও মানে ৪জি পরিষেবা দেবার বিষয়টা প্রকাশ্যে না এলেও কোম্পানি কিন্তু বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে যাচ্ছিল যার অনেকটাই দিতে হচ্ছিল খোদ মুকেশ অম্বানিকেই? সেটাই তো অবাক করে দেবার মত তথ্য।
জানা গিয়েছে, বিএসএনএল এক অর্থবর্ষে প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করছে অন্যান্য টেলিকম সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। কিন্তু কিভাবে? বলা হচ্ছে, বিএসএনএল-এর এই আয় আসছে মূলত টাওয়ার লিজ দিয়ে বা টাওয়ার ভাড়া দিয়ে। আর বিএসএনএলের থেকে সবচেয়ে বেশি টাওয়ার লিজ নিয়েছে জিও নিজেই। সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, ৮ হাজার ৪০৮টি টাওয়ার বিএসএনএলের থেকে লিজ নিয়েছে জিও। এছাড়া এয়ারটেল লিজ নিয়ে রেখেছে ১ হাজার ৫৬৮-টা। ভোডাফোন আইডিয়া লিজ নিয়ে রেখেছে ২ হাজার ৪১৫টা। এই বিপুল পরিমাণ টাওয়ার লিজ দেবার কারণেই বিএসএনএলের আয় বছর বছর শুধু বেড়েছে। ২০১১ সালে বিএসএনএল টাওয়ার লিজ দিয়ে আয় করেছিল ৩০.৭৩ কোটি টাকা। ৯ বছর ঘুরতেই মানে ২০২০ সালে সেই আয় দাঁড়িয়ে যায় এক অর্থবর্ষে ১ হাজার কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালে আয়ের অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়ায় ১০৫৫.৮৪ কোটি টাকায়। জানিয়ে রাখি, বর্তমানে দেশ জুড়ে বিএসএনএলের মোট টাওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়ে আছে ৬৭ হাজার ৩৪০-এ। এছাড়াও অন্যান্য টেলিকম সংস্থাকে টাওয়ার দেওয়া আছে ১২ হাজার ৫০২টি। বিএসএনএলের টাওয়ার লিজ নিয়েছে রাজ্য পুলিশ সহ এমটিএনএল। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে যে, বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির বাড়বাড়ন্তের কারণে যখন মনে করা হচ্ছিল বিএসএনএলের অবস্থা দাঁড়িয়ে আছে ভাঁড়ে মা ভবানির মত অবস্থায় তখন আয়ের হিসেব নিকেশের বিষয়টা একেবারেই অন্য ছিল। আর সেই তথ্য হাতে আসার পর সত্যিই অবাক হতে হল। আর এখন যেভাবে বিএসএনএলে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে তারপর জিও-র অবস্থা যে পড়তির দিকে যাবে এমনটাই মনে করছেন দেশের বহু জিও গ্রাহকরা। আপনাদের কী মনে হয়, মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ