বাংলার শিল্পে আরও এক দুঃসংবাদ। বন্ধ হল তারাতলার ব্রিটানিয়া কোম্পানির কারখানা। মাথায় হাত ২৫০ অস্থায়ী কর্মীর। স্থায়ী কর্মীদের সংখ্যা ১২২। কী হবে তাদের? কোন পথে তাদের ভবিষ্যৎ? কেন কারখানা বন্ধের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হল সংস্থাকে? উঠছে হাজার একটা প্রশ্ন।

একেই রাজ্যে সরকারী চাকরির আকাল। তার উপর আরও এক দুশ্চিন্তার খবর। ঝাঁপ পড়ল তারাতলার ব্রিটানিয়া কারখানায়। বাঙালির আবেগের সঙ্গে মিশে রয়েছে এই ব্রিটানিয়া। দাদু খায়, নাতি খায়- এই ট্যাগলাইন, বাঙালির বড়ো প্রিয়। শুধু তাই নয়। বছরে প্রায় ২৫ লক্ষ টন বিস্কুট উৎপাদন করত এই কোম্পানি। আর এত বড়ো মাপের এই কোম্পানি বন্ধ হওয়ায় এখন পথে বসেছেন, কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীরা। যদিও ঠিক কী কারণে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করা হল, তা নিয়ে কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি।

প্রায় লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ভিআরএস নেওয়ানো হয় সংস্থার স্থায়ী কর্মীদের। কিন্তু অস্থায়ী কর্মীরা? এক টাকাও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ অস্থায়ী কর্মীদের। একটা কারখানা বন্ধ হওয়া মানে তো শুধুমাত্র ঐ কোম্পানির ক্ষতি, এমনটা নয়। কারখানার আশে-পাশের ছোট দোকান ব্যবসায়ীদেরও বেশ বড়ো মাপের ক্ষতি। আর সেখানে রীতিমত নাজেহাল অবস্থা সেই সমস্ত ছোট ব্যবসায়ীদের।

প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের শাসকদলের উদাসীনতা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে শাসক দলের শিল্পনীতি নিয়ে। বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকারের শিল্পনীতির জন্যই নাকি ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে এই সংস্থা। পথে বসেছেন কর্মীরা। এখনও কেন চুপ মুখ্যমন্ত্রী? কারখানার ঝাঁপ বন্ধ, শিল্পের মৃত্যুতে কী কিছুই করণীয় নেই শাসকদলের? প্রশ্ন ব্যবসায়ীমহলের একাংশের।

তারাতলার ব্রিটানিয়া কোম্পানিতে উৎপাদন বন্ধ করল সংস্থা। বছরে যে কারখানার প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি প্রায় আড়াই হাজার টন। মুহূর্তে সেই কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার বিষয়টা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ের। বিগত মে মাস থেকেই পুরোপুরি বন্ধ ব্রিতানিয়া কোম্পানিতে উৎপাদন প্রক্রিয়া।

১৮৯২ সালে কোলকাতায় যাত্রা শুরু করে ব্রিটানিয়া কোম্পানি। মাত্র ২৯৫ টাকার ইনভেস্টমেন্টে কোলকাতায় শুরু হয় ব্রিটানিয়ার স্বাদের যাত্রা। মধ্য কোলকাতার একটা ছোট্ট বাড়িতেই শুরু হয়েছিল সেই বিস্কুট তৈরি কাজ। একেবারে দেশীয় পদ্ধতিতেই বিস্কুট তৈরি করা সেই ভিন্টেজ আমলে। পরে গুপ্ত ব্রাদার্স বলে একটি সংস্থা তাদের কিনে নেয়। নলিন চন্দ্র গুপ্ত ভি এস ব্রাদার্স নামের এই উদ্যোগটি লিড করতেন। এরপর ১৯১০ সাল নাগাদ মেশিনে বিস্কুট উৎপাদন শুরু করে তারা। ১৯১৮ সালে এই কোম্পানির অংশীদার হন ইংরেজ ব্যবসায়ী সিএইচ হোমস। তৈরি হয়, ব্রিটানিয়া বিস্কুট কোম্পানি লিমিটেড।

আজ কারখানার ঝাঁপ বন্ধ। তারাতলার ব্রিটানিয়া কোম্পানির এই ফ্যাক্টরি শুধু একটা প্রোডাকশন ইউনিট নয়। বাংলার শিল্পমহলের কাছে, এটা একটা উদাহরণ, গর্ব এবং ঐতিহ্য। ১০০ বছরেরও বেশি এই কোম্পানির ঝাঁপ বন্ধ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলার বুকে শিল্পের ভাণ্ডার গড়ে তোলার প্রত্যাশায় স্পেনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোলকাতাকে শিল্পতালুক করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন হাজার হাজার বেকার যুবক এবং সাধারণ মানুষকে। আজ সেই কোলকাতার বুকেই বন্ধ হল কারখানা। শিল্পের মৃত্যু কী তবে ঘনিয়ে এল? কেন এখনও প্রতিক্রিয়াহীনভাবে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তার পার্ষদরা। ব্রিটানিয়া কোম্পানির কারখানা বন্ধ হওয়ার মতো ঘটনা কী সকলকে নাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়? যে রাজ্যে সরকারির চাকরির বেহাল অবস্থা, একটা চাকরির আশায় হন্যে হয়ে ঘুরছেন শিক্ষিত বেকাররা- সেই রাজ্য থেকে শিল্পের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা কী যথেষ্ট থ্রেটনিং নয়? শিল্প সংস্থার সিদ্ধান্তের পর রাজ্য সরকারের কী কোন দায় থাকে না? উঠছে হাজার প্রশ্ন। এবিষয়ে আপনাদের মতামত জানান কমেন্টবক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।business Prime News