Trending
আচ্ছা, ব্রিকস কি নতুন কোন মুদ্রা আনার পরিকল্পনা করছে? ব্রিকস চাইছে কি আরও সম্প্রসারণের জন্য? ভারত কী বলছে? কী বলছে ব্রাজিল? কেন ব্রিকস নতুন মুদ্রা আনতে চাইছে? ডলারকে কাঁচকলা দেখানোটাই যে উদ্দ্যেশ্য, সেটা আর বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আদৌ কি কার্যকর হবে? ভারতের ‘হ্যাঁ’ রয়েছে কি এই প্রস্তাবে? এসব নিয়ে আলোচনা সারা যাক আজকের প্রতিবেদনে।
ব্রিকস তৈরি হয়েছে পাঁচটি দেশ নিয়ে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ না দেওয়ায় সংগঠনের নাম ছিল ব্রিক। ব্রিকস তৈরি করা হয়েছিল নির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত মাথায় রেখে। শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি। দেশগুলোর মধ্যে এই বিষয়গুলির ওপরেই জোর দেওয়া হত। খেয়াল রাখবেন কিন্তু, ব্রিকস জোটে থাকা দেশগুলোয় বসবাস করেন বিশ্বের ৪৩ শতাংশ মানুষ। বিশ্বের ২৬ শতাংশ ল্যান্ড ব্রিকসের আওতায়। এছাড়া গ্লোবাল ইকোনমির ৩০ শতাংশ আসে এই ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলো থেকেই। সুতরাং ব্রিকসের কদর কেউ করুক না করুক তাকে অবহেলা করা যায় না। আর তাই চিনের নতুন বায়না, এবার ব্রিকসের আওতায় আনতে হবে অন্যান্য দেশগুলোকে। যারা আর কী এই জোটে নাম লেখাতে চায়। সেই দেশগুলো কী কী? বাংলাদেশ, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, আলজেরিয়া। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, ব্রিকস জোটে এই প্রত্যেকটি দেশ যদি চলে আসে আর নতুন করে ব্রিকস মুদ্রা চালু করা হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি কে বিপদে পড়বে?
এই প্রশ্নটা উঠলেই ভারতের স্ট্যান্ড কী হতে পারে এটাও একটা পয়েন্ট। নতুন সদস্য নেবার ব্যপারে চিন এবং রাশিয়া একজোটে সাগ্রহ দেখালেও ভারত ‘হ্যাঁ’ তো বলেই নিই। সঙ্গে নিজের অবস্থান ধরে রেখে একটু সেফ গেম খেলতে চাইছে মোদী গভর্নমেন্ট। প্রায় একই সুরে সুর মিলিয়েছে ব্রাজিল নিজেও। চিন গত বছরেই নতুন সদস্যদের নিয়ে আসতে চেয়েছিল। তবে সেই ধারণায় আপাতত জল ঢেলে দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। তাঁর বক্তব্য, ব্রিকস মুদ্রা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। আর নতুন সদস্যরা চাইলেই জয়েন করতে পারবে না। এটা ঠারেঠোরে চিন কর্তা জিংপিংকে বুঝিয়ে দেওয়া, তুমি এশিয়ার বাইডেন হতে চাইলেও সেটা হতে দিচ্ছি না। জয়শঙ্কর বলেছেন, জোটের সম্প্রসারণ করতে হলে সবার আগে দেখতে হবে ব্রিকসের কাঠামো কী হবে। পলিসিতেও অনেক চেঞ্জেস আসবে। সেসব নিয়ে এখনো স্পষ্ট হয়নি কিছুই। ব্রাজিলের বক্তব্য, স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে বলেই ব্রিকস নিয়ে খুব সতর্ক ভারত। কিন্তু ব্রিকসের সম্প্রসারণ উন্নতি হলে আখেরে তো ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর লাভ। তারপরেও কেন ভারত গড়িমসি করছে?
গ্লোবাল এরিনায় মোদী জমানায় আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া বা জাপান থেকে ইউরোপ সর্বত্র মোদী ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যস্ত। এইসব দেশগুলোর ব্যবসা যদি নিজের দেশে মোদী নিয়ে আসতে পারে, তাহলে কর্মসংস্থান থেকে অর্থসংস্থান- এক তুড়িতে কাজ হাসিল হয়ে যাবে। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতের ব্যপারটাও রয়েছে নজরে। কোয়াড গ্রুপে ভারত নিজের একটা দৃপ্ত ইমেজ তুলে ধরতে পেরেছে। ব্রিকসে নতুন সদস্য নিয়ে আসা মানে চিনের কথায় সায় দেওয়া। সেটা হলে এই যে কষ্ট করে মোদী এতবার বিদেশ ভ্রমণ করে ফেললেন, মানে এই সব দেশগুলোয় গেলেন তখন যে সব মাঠে মারা যাবে। ডলারের দাপট একটুও কমেনি। তাই আমেরিকা সহ এই দেশগুলো কিন্তু ভারতের প্রতি আর আস্থা রাখবে না। ভারত তখন স্যান্ডউইচ অবস্থায় পড়বে। একদিকে ব্রিকসে চিনের ছড়ি ঘোরানো আর অন্যদিকে ভারতের প্রতি আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মনোভাব দিন দিন আরও জটিল হয়ে পড়বে। আর সবথেকে বড় কথা ব্রিকসের দেশগুলোর মধ্যে কোন সামরিক জোট নেই। সেটা ভারতকে কিছুটা প্যাঁচে ফেলতে পারে। তবে মোক্ষম চালটি দেবেন সেক্ষেত্রে জিংপিং। তিনি চাইছেন, ব্রিকস যদি নিজস্ব একটা মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করে তাহলে ডলারের কফিনে পেরেক পোঁতার কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর ব্রিকসের মুদ্রা হিসেবে সবথেকে এগিয়ে থাকবে ইউয়ান। অর্থাৎ ঠারেঠোরে ভারতের মুখ পুড়বে। একইসঙ্গে ভারতের অবস্থা খানিক ল্যাজেগোবরে করে দেবে চিন। আর সেটা দেখবে পুতিন। ভারতের হয়ে সাফাই, সেটা সঙ্গে সঙ্গে দেবে নাকি? চিন আর রাশিয়ার দোস্তি কিস্তিমাত করতে পারে বিশ্বে। সেটাই হচ্ছে।
মোদ্দা কথা, গ্লোবাল ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে এখন চিনের পথে হাঁটছে ভারত। এদিকে এশিয়ার এই দুই বাঘ একে অপরকে দেখতে পারে না। সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। খেয়াল রাখবেন, ব্রিকস যা উৎপাদন করে তার তিন ভাগের দুই ভাগ আসে চিন থেকে। স্বাভাবিকভাবেই ব্রিকস নিজে যদি কোন মুদ্রা নিয়ে আসে সেটা চিনা মুদ্রা হবার চান্স বেশি। আর ব্রিকসে সবসময় চিন রাজমুকুট পরে থাকতে চায়। সেটা ভারতের আবার বিশেষ পছন্দের নয়। তাই ব্রিকসে বিকল্প মুদ্রা এনে ডলারকে হঠিয়ে দেওয়া এতো সহজ হবে না। কারণ বিশ্ব বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কে? আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এরাই। এখানে সবথেকে বেশি টাকা দেয় কে? আমেরিকা। সুতরাং, আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফর করে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চিনের কথায় হ্যাঁ অত সহজে বলছে না ভারত। তাহলে ভবিষ্যৎ কোনদিকে এগোচ্ছে? সেটা ঠিক করবে কেন্দ্রীয় সরকার। আমরা একটা অনুমান করতে পারি মাত্র। তাই কি না? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর সাবস্ক্রাইব করে নিন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ