Trending
ডলার নির্ভরতা ছাড়া কোন গতি নেই বাংলাদেশের। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক চিরকালই রয়েছে ভালো উচ্চতায়। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে তাতে মনে করা হচ্ছে, ব্রিকসে যোগ দিতে পারে বাংলাদেশ। আর ব্রিকসে যদি বাংলাদেশ ঢুকে পড়ে তাহলে বাংলাদেশের ওপর নিজের অধিকার ফলানোর বিষয়টা এক ধাক্কায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে চিন। সেটা নতুন করে চিন্তায় ফেলে দেবে ভারতকে। তাহলে কি এবার ভারত বাংলাদেশের ব্রিকস জয়েনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? আসুন আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা সারব এই নিয়ে। কেন ব্রিকসে বাংলাদেশ জয়েন করতে এতটা মুখিয়ে রয়েছে?
কয়েকদিন আগের কথা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সগর্বে বলেন, আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা উড়ে আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে আমেরিকার দিকে তাকিয়ে থাকার কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন। তাহলে কি এবার বাংলাদেশ ডলার নির্ভরতা কমাতে চাইছে? আমেরিকার হাত থেকে পেতে চাইছে নিষ্কৃতি? কেন শেখ হাসিনার মুখে আমেরিকা-অনীহা? বহু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ এখন নতুন ট্রাম্প কার্ড বের করছে। বাংলাদেশ চাইছে ব্রিকসের সঙ্গে যোগ দিতে। ব্রিকস অর্থাৎ- ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। পশ্চিমা দেশের জোটগুলোকে যদি একপাশে সরিয়ে রাখা যায় তাহলে ব্রিকসের মতো জোট আর একটিও নেই। কেন বললাম ব্রিকস খুব গুরুত্বপূর্ণ? ব্রিকস যে দেশগুলো নিয়ে তৈরি তাদের সম্মিলিত পপুলেশন প্রায় ৩.০২ বিলিয়ন। গ্লোবাল পপুলেশনের ৪১.৫ শতাংশ ব্রিকসের আন্ডারে। ব্রিকসের সামগ্রিক নমিনাল জিডিপি ২৮.০৬ ট্রিলিয়ন ডলার যা গ্রস ওয়ার্ল্ড প্রোডাক্টের ২৬.৬%। আর টোটাল জিডিপি পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৫৬.৬৫ ট্রিলিয়ন ডলারে। এই তথ্যগুলো দেওয়া হল ২০১৮-র নিরিখে। তার মানে ভেবে দেখুন, যত দিন যাচ্ছে কিভাবে ব্রিকস নিজের সম্মিলিত ইকোনমিকে জবরদস্ত করছে। এদের মধ্যে বিশ্বের তিন উদীয়মান শক্তি হচ্ছে রাশিয়া, চিন এবং ভারত। বিশ্ব বাণিজ্য যাদের ছাড়া অচল। এবার এই গোষ্ঠীতে যোগ দেবার পালা বাংলাদেশের?
মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশ যদি ব্রিকসের সঙ্গে যোগ দেয় তাহলে আমেরিকা এবং পশ্চিমি দেশগুলো কিছুটা হলেও মিত্র শক্তি হারাবে। কারণ এশিয়া মহাদেশে যেমন চিন, ভারত ছাড়া বিশ্ববাজারের গুরুত্ব নেই, তেমনই অবহেলার পাত্র নয় বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভাবে সবথেকে বেশি সাপোর্ট দিয়ে থাকে আমেরিকা। কিন্তু বাংলাদেশ যদি ব্রিকসে জয়েন করে তাহলে আমেরিকার বিরুদ্ধে সেটা ভালোরকম জবাব হতে পারে। এই জবাব কিসের? বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল আমেরিকা। এবং ভিসা সংক্রান্ত ইস্যু বাংলাদেশের কাছে খুব বিরক্তির জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ চেয়েছিল যাতে আমেরিকার সর্বেসর্বা মনোভাব থেকে নিজেদের কিছুটা সরানো যায়। তার জন্যই বাংলাদেশ এবার আমেরিকার কাছ থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছে। ব্রিকসে জয়েন করলে ডলার নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন করবে হাসিনা সরকার। সেটা বাংলাদেশের জন্য একদিক থেকে যেমন ভালো তেমনই থ্রেট। কারণ আমেরিকার ওপর থেকে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমবে। উল্টো দিকে চিনের দাদাগিরি সেক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাবে। আর চিনের দাদাগিরি বাড়লে সেটা আবার তখন ভারতকে ফেলে দেবে উভয় সংকটে। কারণ, ভারতের একদিকে পাকিস্তান যে চিন ছাড়া একটি কথাও বলে না, তারপর অন্যদিকে যদি বাংলাদেশে চিনের প্রভাব বৃদ্ধি পায় তাহলে ভারতের জন্য সেটা সাঁড়াশি চাপ তো তৈরি করবেই। যদিও অনেকেই বলছেন যে শেখ হাসিনা আমেরিকা নিয়ে যতই হম্বিতম্বি করুন না কেন, আমেরিকা বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে সেটা বাংলাদেশের ইকোনমিক গ্রোথের জন্য অনেকটাই দায়ী। আমেরিকার বেশ কিছু সংস্থা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে মোটা অঙ্ক বিনিয়োগ করে বসে রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ ব্রিকসে জয়েন করলে সেটা ভারতের চেয়েও অনেক বড় ফাঁড়া তৈরি করবে আমেরিকার জন্য। ডলার নির্ভরতা কমবে, আর ডলার নির্ভরতা কমলে আমেরিকার আগ্রাসী মনোভাব কিছুটা ধাক্কা খাবে। সেই কারণেই কি আমেরিকা ভারতকে এভাবে পাশে পেতে চায়? ভারতকে দিয়ে আটকাতে চায় বাংলাদেশের ব্রিকসে জয়েন? তাহলে ভারত কি স্ট্যান্ড নেবে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ