রেখা পাত্র। ২০২৪-এর নির্বাচনে বিজেপি-র ট্রাম্প কার্ড। তৃণমূলের খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র মুখ করা হয়েছিল তাকে। একেবারে রণং দেহী মেজাজে নিজের প্রচার সেরেছিলেন তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন রেখা। কাজেই অনেকেই আশা করেছিলেন যে, বসিরহাট লোকসভা থেকে তিনিই হয়তো জিতবেন। অন্যদিকে মুখোমুখি লড়ার জন্য হাজি নুরুল ইসলামকে প্রার্থী করে তৃণমূল। আর নির্বাচনের রেজাল্ট বেরনোর সাথে সাথেই পাশা বদলে যায়। জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম। নিয়ম মতো তারই সাংসদ হওয়ার কথা। কিন্তু এখানেই উঠছে প্রশ্ন। জানা যাচ্ছে, হাজি সাহেবের সাংসদ পদ নাকি বাতিল হতে পারে! বদলে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হিসেবে উঠে আসছে রেখা পাত্র-র নাম। আর এরপরেই কার্যত তোলপাড় হতে শুরু করে রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু ঠিক কী কারণে সাংসদ পদ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে হাজি নুরুল ইসলামের?

২০২৪-এর বাংলা থেকে যে কটা হাইভোল্টেজ লোকসভা কেন্দ্র ছিঃল তার মধ্যে অন্যতম বসিরহাট। সন্দেশখালির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের মহল গরম থাকে এই লোকসভাকে কেন্দ্র করে। বিশেষ করে রেখা পাত্রকে ঘিরে। সন্দেশখালির সেই প্রতিবাদী মুখ। যিনি প্রথম কোলে সন্তান নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। নির্ভয়ে বলেন, সন্দেশখালিতে দিনের পর দিন ঘটতে থাকা নারকীয় অত্যাচারের কাহিনী। আর তারপরেই বিজেপি-র মুখ হয়ে দাঁড়ান তিনি। রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা হলেও রাস্তাঘাট, বাজার দোকান, রেলস্টেশন দাপিয়ে প্রচার সারেন রেখা। আর ভোটের আগে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে রেখা পাত্রকে করা নরেন্দ্র মোদীর ফোন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ফোন করেন রেখা পাত্রকে। দেন ভোটে লড়ার ব্লু-প্রিন্ট। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। ভোট যুদ্ধে জিতে গিয়েছেন হাজি নুরুল ইসলাম। আর এরপরেই কার্যত নড়েচড়ে বসে বিরোধী শিবির। তৃণমূল ভোটে কারচুপি করেছে, এমন প্রশ্নও তোলেন তারা। তবে, বিষয়টা এখানেই থেমে নেই।

এবার সরাসরি সাংসদ পদ বাতিলের পথে হাজি নুরুল ইসলামের। ঠিক কী কারণে বাতিল হতে পারে তাঁর সাংসদ পদ? জয়ী হওয়ার পরেও তাঁর সাংসদ পদ নিয়ে এত জটিলতা কেন? এবিষয়ে মুখ খুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানিয়েছেন, রেখা পাত্র নাকি ইলেকশন পিটিশন ফাইল করবেন। ময়দানে বোমা ফাটানর হুঁশিয়ারি তিনি আগেই দিয়েছিলেন। এবার কী সেই কথা রাখতেই বিস্ফোরক বিরোধী দলনেতা? তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ঠিক যে আইনে বীরভূমে দেবাশিষ ধরের প্রার্থী পদ বাতিল হয়েছিল। সেই আইনেই নমিনেশন বাতিল হওয়া উচিৎ হাজি নুরুলের। খুব শীঘ্রই সেই ইলেকশন পিটিশন ফাইল করা হবে। এবিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে কী বলেন শুভেন্দু অধিকারী?

জানিয়ে রাখি, নির্বাচনের আগেও হাজি নুরুল ইসলামের নমিনেশন বাতিল করার প্রসঙ্গ উঠেছিল। বলা হয়েছিল, বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের ঐ তৃণমূল প্রার্থী তাঁর মনোনয়নের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নো-ডিউজ সার্টিফিকেট জমা দেননি। প্রসঙ্গত বীরভূমে পদ্ম শিবির থেকে প্রথমে প্রার্থী হন প্রাক্তন আইপিএস দেবাশীষ ধর। কিন্তু রাজ্য সরকারের থেকে নো-ডিউজ সার্টিফিকেট না মেলার সম্ভাবনায় সেখান থেকে বিজেপি-র মুখ হিসেবে দাঁড়ান দেবতনু ভট্টাচার্য। নমিনেশন ক্যান্সেল হয় দেবাশীষ ধরের। এবার সেই একই কায়দায় হাজি নুরুলের মনোনয়ন বাতিলের জন্য ইলেকশন পিটিশন দাখিল করবেন রেখা। এমনটাই জানান, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

স্বাভাবিকভাবেই, হাজী নুরুলের নমিনেশন বাতিল হলে সেক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ পদও বাতিল হবে। এখন প্রশ্ন, এবার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ কে হবেন? তাহলে কী বিজেপি-র স্টার ক্যান্ডিডেট রেখা পাত্রই হতে চলেছেন বসিরহাটের সাংসদ? তবে সব উত্তরের দিশা দেখাবে রেখা পাত্রের ইলেকশন পিটিশন ফাইল। এখন তিনি কী পদক্ষেপ নেন, সেটাই দেখার।

দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।