Market
আর্থিক সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। অব্যাহত জ্বালানি বিপর্যয়। গ্যাসের মজুদ রয়েছে মাত্র সাত বছরের। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভাগ্যে পড়েছে শনির নজর। চলতি অর্থবছরে তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকায়। রপ্তানি হচ্ছে কম। আমদানি হচ্ছে বেশি। আর এই সবই ধীরে ধীরে বাংলাদেশের আর্থিক স্বাস্থ্যকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, এই ট্র্যাডিশন যদি বজায় থাকে, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পড়বে গভীর খাদে। তাহলে, সাত বছর পর কি কার্যত জ্বালানি বিপর্যয় আরও গভীর হবে? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভাগ্য?
মন্দার কবলে পড়েছে আমেরিকা এবং ব্রিটেন। এই দুটি দেশই এখন মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদ বৃদ্ধির পথে হাঁটছে। আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজার্ভ ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে ব্রিটেনও হাঁটল আমেরিকার পথে। সেই দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক- ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বৃদ্ধিকে ব্রহ্মাস্ত্র করেছে, মূল্যবৃদ্ধিকে আটকে রাখার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মনে করা হচ্ছে, গোটা বিশ্বেই অর্থনীতি ভালোরকম ধাক্কা খেতে পারে। সেই প্রভাব এড়াতে পারবে না বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশে টাকার ভ্যালু কমলে খরচ বাড়বে দেশের। স্পেশ্যালি আমদানি খাতে এই খরচের অঙ্ক অনেকটাই বাড়তে পারে। ফলে অর্থনীতির জন্য সেটা যে গভীর আশঙ্কা তৈরি করবে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এমনিতেই বাংলাদেশ সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার জন্য জলের মতন ডলার খরচ করছে হাসিনা সরকার। তবু লাগাম টানা যাচ্ছে কোথায়? একটা পরিসংখ্যান বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্যবাবদ আয় হয়েছিল ২২৩ কোটি ডলার। উল্টোদিকে বাংলাদেশের কোষাগার থেকে বেরিয়েছে ৩৩৩ কোটি ডলার। এভাবেই প্রতি মাসে বাণিজ্য ঘাটতির অঙ্কটা প্রবল হচ্ছে গোটা বাংলাদেশ জুড়েই। তবে কোষাগারে টান পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন ঘাটতিকেও। যার জন্য দায়ি বিদ্যুৎ সংকট। আর বিদ্যুৎ সংকটের জন্য দায়ি গ্যাসের মজুদ।
এমনিতেই সেই দেশে জ্বালানি সংকট তীব্র হচ্ছে। ফলে দিনের অর্ধেক সময় চলছে লোডশেডিং-এর প্রকোপ। বিদ্যুৎ বিপর্যয় বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে যখন বিদ্যুৎ ঘাটতি কিছুটা হলেও একটু আটকানো সম্ভব হচ্ছে, এমনই সময় উঠে এলো আরও একটি আশঙ্কাজনক তথ্য। জানা গিয়েছে, দেশে নাকি গ্যাসের মজুদ কমছে খুব তাড়াতাড়ি। ফলে কমছে গ্যাসের সরবরাহ। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পাশাপাশি যা আর্থিক বিপর্যয়ের কারণ বলেও মনে করছেন অনেকে। ২০১৬ সালে যেখানে প্রতিদিন গ্যাস উত্তোলন হত ২,৬৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে গেল বছর গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে প্রতিদিন ২,৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। মানে চাহিদা থাকলেও গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না বাংলাদেশের গ্যাস সংস্থাগুলো। আর এটাই ভালোরকম বিপদে ফেলতে চলেছে বাংলাদেশকে। কারণ, বাংলাদেশের শিল্প এবং বিদ্যুৎ নির্ভর করে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপরেই। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। বাংলাদেশে বছরে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা থাকে ১ টিসিএফ মতন। গেল জানুয়ারি পর্যন্ত গ্যাসের মজুদ রয়েছে ১০ টিসিএফ মতন। যার সবটা উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। উত্তোলন করা যায় ৭০% মতন। অর্থাৎ, আগামী ৭ বছর পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। যা বাংলাদেশের জনগণ থেকে শুরু করে সকল শিল্পক্ষেত্রের জন্য ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু তারপর? আন্তর্জাতিক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সমুদ্র তীরবর্তী এবং ব-দ্বীপ অঞ্চল হওয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রচুর পরিমাণ মজুত রয়েছে নিচে। কিন্তু সেই পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস তুলতে গেলেও সময় লাগবে আরও দশ বছর মতন। তাহলে উপায়? আপাতত বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এখনই কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তাহলে? প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলাম দুই বাংলার সকল বন্ধুদের কাছে। মতামত জানান কমেন্ট বক্সে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ