Trending
বাপ-ঠাকুরদার ভিটে ছেড়ে কেই বা যেতে চায়? কিন্তু সমস্যাও তো কম নেই। নেই কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা। নেই হাসপাতালে পৌঁছনোর জন্য উপযুক্ত রাস্তা। বাচ্চাদের পড়াশুনোর জন্য স্কুলে পৌঁছতে হয় জঙ্গল আর খরস্রোতা নদী পেরিয়ে। কেউ বেঁচে থাকার জন্য করেন সামান্য চাষাবাদ। কেউ ভরসা রাখেন পশুপালনের উপরে। এদিকে হাতি, বাইসন,চিতা বাঘ, ভাল্লুকের সঙ্গেই রয়ে গিয়েছে এই মানুষগুলোর সহাবস্থান। কিন্তু সম্প্রতি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছে বন দফতর। আর তাই বন্য জন্তুর সঙ্গে মানুষের যাতে আবার না সংঘাত হয় তার জন্য এবার উঠিয়ে দিতে চাইছে গোটা ভুটিয়া বস্তিকেই।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের একদম কোর এলাকায় অবস্থিত এই ভুটিয়া বস্তি। পাহাড়, নদী,জঙ্গল ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম। ছবির মত। শান্তিপূর্ণ। গ্রামের লোকসংখ্যা মেরেকেটে সত্তর। বংশ পরম্পরায় এরা এভাবেই জঙ্গলের মধ্যে জঙ্গলের সঙ্গে যুদ্ধ করেই ভিটেমাটি আঁকড়ে রয়েছেন। কেউ তিন পুরুষ। তো কেউ চার পুরুষ।
সম্প্রতি এই ভুটিয়া বস্তির কিছু মানুষ বিকল্প আয়ের জন্য হোম স্টে চালু করেছেন বাড়ির একাংশে। হোম স্টে চালুর খবর পেয়ে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই ভুটিয়া বস্তি। গভীর অরণ্যের মাঝে শ্বাপদ সংকুল পরিবেশে থাকার এমন সুযোগ কেউই হাতছাড়া করতে চাইছেন না। কিন্তু থোক টাকা দিয়ে বন দফতর চাইছে তাঁরা যাতে বক্সার জঙ্গলকে পিছনে ফেলে শহরের দিকে চলে যান। স্বাভাবিকভাবেই গ্রামবাসীর কপালে জমছে দুশ্চিন্তা।
গ্রামটি বক্সার একদম কোর এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে বড় প্রতিবন্ধকতা। আগেও বন দফতরের পরিকল্পনায় ছিল ভুটিয়া বস্তি উঠিয়ে দেওয়ার। গ্রামবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করিয়ে। তবে সম্প্রতি প্রায় দু দশক পর আবার এই জঙ্গলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা যাওয়ায় বন দফতরের কাছে এখন বাঘ ও এই বনবস্তির বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জঙ্গলের পরিবেশে ভালোই আছেন তাঁরা। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে। নির্জনে। কিন্তু প্রাণ হাতে করে জীবনযুদ্ধ করাটাও কোন সমাধানের পথ হতে পারেনা। যদিও গ্রামবাসীদের কেউ কেউ বলছেন সঠিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হলে জঙ্গল রক্ষার স্বার্থে, জঙ্গলের পশু পাখির স্বার্থে, বাঘের স্বার্থে তাঁরা তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে রাজি আছেন।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার