Trending
আচ্ছা মনে করুন, আপনি কোথাও বেরাতে গেলেন। মানে একেবারে দেশের বাইরে। যাকে আমরা বিদেশ ভ্রমণ বলে থাকি আর কি। বেরাতে গিয়ে প্ল্যানমাফিক সকল জায়গা ঘুরলেন। তারপর জানতে পারলেন, সোনা কেনা সম্ভব একটু কম দামে। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে বুঝতে পারলেন, একটু কম নয়। বেশ কম দামেই আপনি সোনা কিনতে পারছেন। জানতে পারলেন, সস্তায় সোনা কেনার সুযোগ করে দিয়েছে, সেই দেশের সরকার। অর্থাৎ, রথ দেখা কলা বেচা- দুইই হচ্ছে। কী হাসি চওড়া হবে তো? সত্যি বলছি, ভুটান এখন এমনই এক স্কিম চালু করেছে। ভারত থেকে হোক বা বাংলাদেশ থেকে। পর্যটকদের জন্য ভুটান সরকার নিয়ে এসেছে এমনই দুর্দান্ত স্কিম। মানে, ভুটান বেরাতে গেলেই সস্তায় সোনা কিনে আনতে পারবেন। পুরো বিষয়টা জানতে হলে দেখতে হবে গোটা প্রতিবেদন।
সুখী মানুষের দেশ বলা হয় ভুটানকেই। পাহাড়, অরণ্য, নদী- প্রকৃতির অভূতপূর্ব মেলবন্ধনে ভুটান হিমালয়ের অন্যতম সুন্দর সৃষ্টি। যা কোনদিক থেকেই স্বর্গীয় সৌন্দর্যের থেকে কম নয়। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এই দেশ হ্যাপিনেস ইনডেক্সে বলে বলে গোল দেয় ভারত, বাংলাদেশকেও। প্রায় দূষণমুক্ত এই পর্বতময় দেশটিতে তাই প্রতি বছর পর্যটকদের পা পড়ে ভালোরকম। এই দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি তো ট্যুরিজম। তাই ভুটান নিজের ট্যুরিজম সেক্টরকে সাজিয়েছেও ঢেলে। থিম্পু, পারো, পুনাখা, বুমথাং, চেলে লা পাসের মতন এমন বহু জায়গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেএই দেশে। সুতরাং ভুটান আসা মানে এই সকল জায়গাগুলো ঘুরতে আসা মাস্ট। রয়টার্সের প্রতিবেদন ঘেঁটে জানতে পারলাম, ২০১৯ সালে ভুটান ভিজিট করেছিলেন ৩ লক্ষ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। সাধারণত প্রতি বছর ভুটান ট্যুরিজম ৮৪ মিলিয়ন ডলার দেশের রাজকোষে জমা করে থাকে। করোনার সময় ভুটান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, না এই দেশে কেউ আসতে পারবেন, না এই দেশ থেকে কেউ বেরোতে পারবেন। এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার কারণেই ভুটানের রাজকোষে স্বাভাবিকভাবে টান পড়েছিল। কিন্তু তারপরেও করোনার জন্য মৃত্যু মিছিলের সাক্ষী ভুটানকে থাকতে হয়নি। তারপর অবশ্য দু’বছরের মাথায় ভুটানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। ভুটানে মূলত ভারত এবং বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ ঘুরতে আসেন। ট্যাঁকের একটু জোর না-থাকলে অবশ্য ভুটান ভ্রমণ একটু মিইয়ে যেতে পারে বলে মনে হতে পারে। তবে, ভুটান ভ্রমণের জন্য সেইটুকু স্যাক্রিফাইস করাই যায়…কী বলেন?
কিন্তু এবার ভুটান সরকার চাইছে, আরও বেশি সংখ্যায় পর্যটকদের আসা-যাওয়া। তার জন্যই এবার দুর্দান্ত একটা সুযোগ করে দিচ্ছে ভুটান সরকার। শুধু ঘুরতে আসা নয়, সামান্য কিছু শর্ত মানতে পারলেই, আপনি ভুটান থেকে সোনা কিনতে পারবেন একেবারে সস্তায়। ফুটশিলিং এবং থিম্পু থেকেই সোনা কেনা সম্ভব শুল্ক মুক্ত দোকান থেকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে এই সুযোগ কেন দেওয়া হচ্ছে? আসলে ভুটান রাজার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবং সেই দেশের নববর্ষ লোসার উপলক্ষ্যে পর্যটকদের সেই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। ভুটান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের ডিউটি ফ্রি-র সঙ্গে সেই দেশের ট্যুরিজম সেক্টর শুল্ক মুক্ত সোনা বিক্রি করবে পর্যটকদের জন্য। কিন্তু তার জন্য ছোট্ট একটা শর্ত। সেই দেশের পর্যটন বিভাগ যে যে হোটেলগুলি নির্ধারণ করে দিয়েছে, আপনাকে রাত্রিবাস করতে হবে সেখানেই। মূলত ভুটান অর্থ মন্ত্রকের আওতায় থাকা শুল্ক মুক্ত পণ্যের দোকানগুলোতেই সস্তায় সোনা কেনা যাবে। আসলে পর্যটনে গতি আনার জন্যই নেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত। জানা গিয়েছে, সেই দেশে ২৪ ক্যারাট সোনার ১০ গ্রামের দাম ৪০ হাজার ২৮৬ ভুটানি মুদ্রা।
ভুটানের মুদ্রার সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রার বিশেষ কোন ফারাক নেই। আগে ভুটান সরকার পর্যটকদের জন্য আলাদা করে পর্যটন কর চাপিয়েছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি। ভারতীয়দের থাকার জন্য প্রতিদিন ১২০০ টাকা এই ফি দিতে হত। আর অন্য দেশের পর্যটকদের জন্য সেই খরচ পড়ত ৬৫ থেকে ২০০ ডলার মতন। তবে, আমাদের কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ করের নিয়ম অনুসারে, একজন পুরুষ বাইরে থেকে ২০ গ্রাম মতন এবং একজন মহিলা বাইরে থেকে ৪০ গ্রাম মতন সোনা নিয়ে আসতে পারেন। তার জন্য কোন কর দিতে হবে না। ভুটান একদিকে শান্তির দেশ আবার অন্যদিকে ড্রাগনের দেশও বলা হয়। তবে দিনের শেষে ভুটান একটি সুখী দেশ ছাড়া আর কিই? ভুটান ঘুরে আসা মানে, স্বর্গের খুব কাছ থেকে ঘুরে যাবারই মতন। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট দেশটি নিজেকেই ছড়িয়ে দিয়ে বছর বছর পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে। আর সস্তায় সোনা কেনার সুযোগ আর যাই হোক ভুটানে ঘুরতে আসা ভারতীয় পর্যটকরা ইগনোর করতে পারবেন না।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ