Story
দেবস্মিতা মণ্ডল, উত্তর ২৪ পরগণাঃ ব্যবসা করতে পুঁজি লাগে। সবাই জানে। আবার এমন ব্যবসাও আছে যেখানে কোন পুঁজিই লাগেনা। শুধু চাই বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিশ্রম করার ক্ষমতা। কোন পুঁজি বিনিয়োগ না করেই আয় করতে পারেন লক্ষাধিক টাকা। তাও আবার মাসে মাসে। বিনিয়োগ বলতে নিজের পরিশ্রমটুকু। বিনা পুঁজিতে এমন আয়ের কথা শুনে আপনার গল্প মনে হলেও এটা কিন্তু আদপেই গল্প নয়। বরং কঠিন বাস্তব। গল্পকে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে সত্যি করে দেখালেন এই যুবক। দেখালেন আত্মনির্ভরতার নতুন পথ।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বেড়িগোপালপুর গ্রামের কমলেশ বালা। নিজের বাড়ির বাগানে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক ব্রয়লার মুরগি চাষ করে আজ স্বনির্ভর হয়েছেন। বিনা পুঁজিতে। সম্পূর্ণ কোম্পানির পুঁজিতে নিজের বাড়ির আমবাগানে বৈজ্ঞানিকভাবে মুরগি প্রতিপালন করে গড়লেন নজির।
পারিবারিক চাষাবাদে তেমন আয়ের মুখ দেখছিলেন না কমলেশ। সংসারে রোজকার দিনগুজরান হয়ে উঠছিল বেশ কঠিন। তখন স্থানীয় কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের পরামর্শে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে নিজের বাড়িতেই খুললেন পোলট্রি খামার।
কোম্পানি চাষের প্রয়োজনীয় মুরগির বাচ্চা থেকে খাবার সবই জোগান দেয়। চুক্তিভিত্তিক এই চাষে চাষির নিজের পুঁজি লাগে না বললেই চলে। তবে যেটুকু লাগে সেটা নেহাতই যৎসামান্য। কমলেশ নিজের বাড়িতে পুঁজি বলতে বিনিয়োগ করেছে শুধুমাত্র মুরগির ঘর তৈরি করতে। লাভ ক্ষতির কোন দায় থাকে না চাষির। উল্টে বাজার ভালো হলে কপালে জোটে লাভের গুড়। সেটাও জোটে কোম্পানির দৌলতেই।
যত বাচ্চা খামারে ঢুকবে ততটাই নির্দিষ্টদিন পরে বাজারে আসবে। খামার চুক্তিচাষের এই পদ্ধতি সাধারণত অল ইন অল আউট নামে পরিচিত। গাইঘাটার এই চাষি ২০১০ সালে মাত্র দু’হাজার স্কোয়ার ফুট জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে এই চাষ শুরু করেন। আজ তার খামারের আয়তন ১৫ হাজার স্কোয়ার ফুট। প্রতি ৪৫ দিন অন্তর এই খামার থেকে কোম্পানি সংগ্রহ করে ১৫ হাজার কেজি মাংস। কেজি প্রতি চাষির ভাগ থাকে ৬ টাকা। টাকার অঙ্কে আয় গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
বেকার যুবক যুবতী বা আগ্রহীরা অনায়াসে সরকারি কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের পরামর্শে দপ্তর থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিজের জায়গাতেই শুরু করতে পারেন এই ব্যবসা।
একে লাভজনক ব্যবসা, দুই ব্যবসায় ক্ষতির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তাই চাকরির বাজার যখন ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে, বাড়ছে বেকারত্বের হার ঠিক তখনই চুক্তিভিত্তিক মুরগির খামার ব্যবসা নতুন আলো নিয়ে আসছে বাজারে।