Story
আয়তনে তারা হাতির কাছে আলপিন। তবু হাতিই সমঝে চলে তাদের। শ্রবণশক্তি এবং ঘ্রাণশক্তি প্রখর হওয়ার কারণে হাতির দল যদি তাদের খোঁজ পায়, তাহলে ত্রিসীমানায় থাকেনা হাতির দল। আর এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েই ফসল বাঁচানোয় অনেকটা সুরাহা পেয়েছেন আলিপুরদুয়ারের নূরপুর গ্রামের বাসিন্দারা। যেখানে বন্য প্রাণী মূলত হাতির হাত থেকে ফসল বাঁচানোর জন্য চাষ করা হচ্ছে মৌমাছি।
ভুটান পাহাড়ের পাদদেশে বক্সার জঙ্গল ঘেরা ছবির মত গ্রাম হল নূরপুর। এখানকার সিংহভাগ বাসিন্দাই আদিবাসী। চাষবাস করেই কোনরকমে নিজেদের পেট ভরান তাঁরা। কিন্তু জঙ্গল থেকে বন্য প্রাণী সহ হাতির নিত্য উৎপাতে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন নূরপুরের বাসিন্দারা। ফসল বাঁচানোই দায় হয়ে গিয়েছিল। আর এই সমস্যা থেকে বাঁচাতে কার্যত ত্রাতার ভূমিকা নিল উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁদের পরামর্শেই এলাকায় শুরু হল মৌ চাষ। ফলও মিলল হাতেনাতে। কারণ মৌমাছির হুলের ভয় তো আছেই। এমনকি মৌমাছির গুঞ্জনও হাতি সহ্য করতে পারেনা। তাই একটা সময় হাতির হানা যখন চিন্তা বাড়াচ্ছিল গ্রামের চাষিদের, তখন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শে মৌমাছি চাষ যেন এই সমস্যার অনেকটাই সুরাহা করে দিল। একইসঙ্গে মধু বিক্রি করেও আর্থসামাজিক দিকেও তাঁদের উন্নতি হল যথেষ্ট। আয়ের একটা পথ খুঁজে পেলেন গ্রামের আদিবাসী মানুষগুলো।
মূলত দু’ধরনের মৌমাছি চাষ এখানে হয়ে থাকে। আর এই দুই প্রজাতির মৌমাছি চাষ করেই এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন অন্তর পাওয়া যায় মধু। যা বিক্রি করেই বদলে যেতে চলেছে নূরপুরের গ্রামীণ অর্থনীতি। সামান্য পরিচর্যা করলেই আর্থিক ভাবে অনেকটা স্বাধীন হতে পারছেন গ্রামবাসীরা।
পাঞ্জাব বা হরিয়ানার মত এলাকায় বিগত দিনে মধুর উৎপাদন বেড়েছে নজিরবিহীন। আমাদের বাংলায় মূলত উত্তরবঙ্গে সেইভাবে মৌমাছি চাষ করে মধু উৎপাদন করা হয়ে ওঠেনি। এখন সেদিকেই নজর দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে একেবারে কম খরচে কিভাবে মৌমাছি প্রতিপালন করে মধু উৎপাদন করা যায় এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি কিভাবে সম্ভব হয়, এখন সেদিকেই জোর দিয়েছেন তাঁরা। গ্রামের বেকার যুবকদের জন্য যা অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই লাভবান করে তুলবে।
কিভাবে হচ্ছে এই মৌমাছি চাষ আর কিভাবেই বা তাঁরা সংগ্রহ করছেন মধু? সেই বিষয় নিয়ে বিজনেস প্রাইম নিউজের সঙ্গে কথা বললেন নূরপুরের এক মৌ চাষি সুজানা বাড়া।
ইতিমধ্যেই মৌমাছি চাষ করে এবং মধু বিক্রি করে যে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে তাতে রীতিমত খুশি এলাকার মানুষরা। মৌ চাষ শুরু হয়েছে প্রায় আট মাস। এদিকে হাতির উপদ্রব নেই বললেই চলে। মৌ চাষের ফলে এলাকায় পরাগ মিলনের সুযোগ অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনও বেড়েছে গ্রামে। প্রথমে এই কর্মযজ্ঞে হাতে গোনা কিছু মানুষ সামিল হলেও এখন প্রায় ১০০ জন মানুষ এই মৌমাছি চাষ করছেন। এমনকি গত বছর লকডাউনে কাজ হারানো মানুষরাও মৌচাষে উৎসাহ দেখিয়েছেন। উৎসাহ দেখিয়েছেন আশপাশের অন্যান্য গ্রামের মানুষরা। আর উৎপাদিত মধু বিক্রিতে সাহায্য করছে সন্তালপুর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। একদিকে কমেছে হাতির উপদ্রব। অন্যদিকে পাওয়া গিয়েছে বিকল্প আয়ের পথ। আর সব মিলিয়ে নূরপুর গ্রামে তৈরি হয়েছে এক আর্থিক সুরক্ষা বলয়।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার