Daily
সবজি চাষ বা প্রাণী পালনের মাধ্যমে আয়ের দিশা দেখেছেন অনেকেই। কিন্তু বিকল্প পদ্ধতিতে চাষ করেও মিলবে আয়ের সুলুক সন্ধান। আর সেই পথে এগিয়েই মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন ব্লক জুড়ে চলছে বিশাল কর্মকাণ্ড। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে বিকল্প আয়ের পথ। যা ক্রমশই বিকল্প লাভজনক চাষ হয়ে উঠছে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মধুর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূজা-অর্চনা থেকে সর্দি-কাশির মত রোগ উপশমে মধুর ব্যবহার প্রতিদিনই হয়ে থাকে আমবাঙালির ঘরে ঘরে। স্বাভাবিকভাবেই মধুর চাহিদা যে সবসময় থাকবে, সেটা বলাই বাহুল্য। আর এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে মৌমাছি পালনে কৃষকদের উৎসাহিত করছে কৃষিদপ্তর। কৃষি বিশেষজ্ঞদের আশা, কম খরচে মৌমাছি পালন করে একদিকে যেমন বিকল্প আয়ের রাস্তা খুলে যাবে, সাথে সাথে, সর্ষে, সূর্যমুখী ইতাদি তৈলবীজ সহ অন্যান্য ফসল চাষেও উৎপাদন বাড়বে, কারণ মৌমাছি ফুলের পরাগ সংযোগেও সাহায্য করে। এই বিষয়ে আরশা ব্লকের ব্লক টেকনোলজি ম্যানেজার দীপক কুমার মাহাতো কী বলছেন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর মুখ থেকেই।
এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে এপিস মেলিফেরা প্রজাতির মৌমাছি। একেকটি বাক্সে ফ্রেম রয়েছে ৬টি মতন। এই প্রজাতির মৌমাছির ওজন অন্যান্য মৌমাছির থেকে তুলনামুলকভাবে বেশি। যে কারণে মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছি প্রতিপালন করা হয় আনাজের জমি, সর্ষের জমির কাছাকাছি। আর সেই উদ্দ্যেশ্যেই কাজ চলছে মৌমাছি পালনে।
আমরা সবাই জানি, কিভাবে শ্রমিক মৌমাছিরা কাজ করে থাকে। চাক থেকে মধু সংগ্রহের জন্য স্মোকারের সাহায্যে ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছিগুলোকে সরিয়ে একটি ড্রামের মধ্যে চাকের ফ্রেমগুলিকে সেট করে ঘোরানো হয়। এর ফলে চাকের মধু ঝরে গিয়ে সেই ড্রামে সংগৃহীত হয়। প্রতিটি বাক্স থেকে সপ্তাহে ১কেজি থেকে ১.৫কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু বর্ষার সময়?
মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের উপভোক্তা বিবেকানন্দ মাহাতো খুবই খুশি। তিনিও মৌমাছি চাষ করছেন ভালোরকম। তিনি বললেন, চিনির রস খাওয়ানোর সময়ই একটু খরচ হয় বটে। কিন্তু বাকি সময়ে তেমন খরচ না থাকায় এই মৌমাছি পালন যথেষ্ট লাভজনক হয়েছে। স্থানীয় এলাকায় মধুর চাহিদা ভালো হয়েছে। এমনকি দামও ভালো পাচ্ছেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ১৩টি বাক্স বসিয়ে মৌমাছি পালনের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর যদি এই পালন লাভজনক মনে হয় সেক্ষেত্রে বাক্সের সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে। আতমা প্রকল্পের সহায়তায় মৌমাছি প্রতিপালনের জন্য দেওয়া হয়েছে কাঠের বাক্স, স্মোকার, মৌমাছির কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নেটের টুপি, মধু নিষ্কাশনের ড্রাম সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। যত দিন যাচ্ছে, ততই কৃষকদের আর্থিক স্বাস্থ্য মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে কৃষি দফতর। শুধু সবজি বা ফল চাষ করেই আয়ের রাস্তা মসৃণ করা সম্ভব নয়। যে কারণে মৌমাছির সাহায্যেই আয়ের দিশা অনেকটাই খুঁজে পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। লাভবান হচ্ছেন উপভোক্তারা। সেই ছবিটাই স্পষ্ট হল পুরুলিয়া জেলার আরশা ব্লকে।