Trending
বাংলার কৃষকবন্ধুরা কিভাবে কম খরচে বেশি ফলন পেয়ে আর্থিকভাবে অনেকটাই লাভবান হতে পারেন, সেদিকে সবসময় নজর রেখেছে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি জেলার কৃষি বিজ্ঞানীরা। এবার সেই লক্ষ্যেই আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল নদীয়ার বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তৈরি করা হল জীবাণু সার। যে সার প্রয়োগ করলে কৃষকবন্ধুরা উপকৃত হবেন একেবারে চাষের জমি থেকেই।
সম্প্রতি মোহনপুরের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবাণু সার বা বায়োফার্টিলাইজার তৈরি করার একটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এই সার যেমন একদিকে পরিবেশ বান্ধব। তেমনি অন্যদিকে দামেও বেশ কম। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সার ব্যবহার করলে বজায় থাকবে মাটির স্বাস্থ্য এবং উর্বরতা। অন্যান্য সারের থেকে ২৫ শতাংশ কম সার প্রয়োগ করে চার থেকে পাঁচ গুণ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। ধান, পাট, মুসুর ডাল, শাক সব্জি সহ যেকোন চাষের ক্ষেত্রে এই সার প্রয়োগ করা যাবে। সবদিক থেকেই লাভবান হবেন কৃষকরা।
মূলত মাটিতে যে উপকারি জীবাণুগুলি রয়েছে, সেগুলিকে সংগ্রহ করেই কেন্দ্রের ল্যাবরটরিতে উন্নত মানের যন্ত্রের সাহায্যে বিশেষ পদ্ধতিতে কালচার করে এই তরল সার তৈরি করা হচ্ছে। তারপর মেশানো হচ্ছে চারকোলের সঙ্গে। প্রাথমিক পর্যায়ে বছরে ৫০ টন এই সার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানালেন এই কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত বিজ্ঞানী অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র কোলে।
তবে মনে হলেই যত ইচ্ছা তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই সার তৈরি করলে এবং তা বাজারজাত করতে গেলে ৬ মাসের মধ্যেই করে ফেলতে হবে। তবেই সারের গুণাগুণ সঠিকমাত্রায় বজায় থাকবে। রাজ্য সরকারের কৃষি বিভাগ এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এই সার উৎপাদন করলে চাষিরা সঠিক জিনিসটা পাবেন। এখন রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে কৃষকবন্ধুদের হাতে এই সার তুলে দেওয়াই হবে প্রধান লক্ষ্য।
এতোদিন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরণের সার তৈরি হত। এবার নদীয়ার বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বড় স্কেলে তৈরি করা হচ্ছে এই বায়োফার্টিলাইজার। সরকারিভাবে রাসায়নিক কীটনাশকবিহীন এই সার উৎপাদন এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর তেমন কোথাও হচ্ছে না। এজন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কৃষিবিজ্ঞানে এই সার শুরু করতে চলেছে এক নতুন অধ্যায়। আর এই সার বিক্রি করা হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে যেমন বাঁচতে পারবেন কৃষকরা। তেমনি সবদিক থেকেই লাভবান হবেন তাঁরা। বাংলার কৃষিক্ষেত্র মজবুত হবে অনেকটাই।
রনি চ্যাটার্জী
নদীয়া