Story
কেউ বলেন কালী। কেউ বলেন উগ্রতারা। তিনিই আবার তমলুকের অধিষ্ঠাত্রী বর্গভীমা। এদিকে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ভক্তরা এই দেবীকে পুজো করে আসছেন কখনো দুর্গা রূপে। কখনো কালী রূপে। কখনো জগদ্ধাত্রী রূপে। এই দেবীর ইতিহাস প্রাচীন। এই দেবীর ইতিহাস অলৌকিকতায় মোড়া।
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক শহরেই অধিষ্ঠান করেন মা বর্গভীমা। একান্নটি শক্তিপীঠের মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে সতীর বাম গোড়ালি পড়েছিল। দেবী এখানে ভীমরুপা কপালিনী। তাঁর ভৈরব হলেন সর্বানন্দ। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবীর মূর্তিটি কষ্টি পাথর দিয়ে তৈরি। বর্গভীমার মাহাত্ম্য এতটাই ব্যপ্ত যে কালীপুজোর দিন পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও মাতৃদর্শনের জন্য ভক্তদের ঢল নামে বর্গভীমার মন্দিরে। সারাদিন ধরে চলে পুজো। তবে বিশেষ পুজো হয় রাতে। রাজরাজেশ্বরী বেশে ষোড়শোপচারে মায়ের পুজো করা হয়। হোম, যজ্ঞ, পূজার্চনা মিটতে মিটতে হয়ে যায় ভোর রাত। মা বর্গভীমাকে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় শোল মাছ।
এই মন্দিরের ইতিহাস প্রাচীন। সেই মহাভারতের সময় থেকে এই দেবীর মাহাত্ম্য বহমান। বর্গভীমার মন্দিরের উপরেও আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল কালাপাহাড়। কিন্তু শেষমেষ আক্রমণ করতে পারেনি সে। কেন? শুনে নেওয়া যাক সেই ইতিহাস।
শুধু তমলুক নয়। তদানীন্তন তাম্রলিপ্তে যখন শক্তির আরাধনা শুরু হল তখন পণ্ডিতরা বিধান দিয়েছিলেন আগে মা বর্গভীমার কাছে পুজো দিতে হবে। অনেকটা বর্গভীমার অনুমতি নেওয়ার মত। এমনটাই বলছেন অয়নবাবু।
কথিত আছে মহাভারতের সময় ময়ূরবংশীয় রাজা তাম্রধ্বজের রাজত্বকালে রাজার নির্দেশ অনুযায়ী এক জেলেনি রাজার নির্দেশে রোজ জ্যান্ত শোল মাছ নিয়ে যেতেন রাজবাড়িতে। একদিন রাজপ্রাসাদে যাওয়ার সময় তিনি লক্ষ্য করেন সবকটি মাছ মরে গেছে। পাশেই ছিল একটা জলাশয়। সেই জলাশয়ের জল মাছের উপর ছিটিয়ে দিতেই মাছগুলো আবার বেঁচে উঠেছিল। এই অতিলৌকিক ঘটনার কথা রাজা জানতে পারেন। অবশেষে তৈরি হয় মন্দির। গত বছর করোনার জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি ছিল। তবে এই বছর তমলুক শহরের সমস্ত মন্ডপের শুধু পুরোহিত এবং একজন উদ্যোক্তা মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও গর্ভগৃহে কেউ পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারবেন না। বাইরে থেকেই পুষ্পাঞ্জলী এবং পুজো দিতে পারবেন পুণ্যার্থীরা।
প্রসূন ব্যানার্জী
পূর্ব মেদিনীপুর