Trending
শেষ রক্ষাটা আর করা গেল না। রেভোলিউশনারি পদ্মা সেতু বা ঢাকা মেট্রো- হাসিনা সরকারের কোন স্ট্র্যাটেজিই আর হাল ধরতে পারল না। ধূলিসাৎ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি! শিয়রে সংকট এতটাই গভীর, যে এবার সত্যি সত্যিই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঘেরাটোপে জড়াচ্ছে বাংলাদেশ। এই গত কয়েকমাস আগের কথা, দুমুঠো ভাতের জন্য মানুষ কতটা ডেসপারেট হয়ে উঠতে পারে, তা আমাদের দেখিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া। খাদ্য সংকট, জ্বালানি সংকট, বিদ্যুৎ সংকট, দেশ জুড়ে শুধুই হাহাকার- শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের সেই ছবি আজও দগদগে বিশ্ববাসীর কাছে। জ্বালানি বা ফরেন রিজার্ভ তো অনেক কঠিন শব্দ, সামান্য অন্ন-বস্ত্রের জোগাড় করতে নাজেহাল হয়েছে আস্ত দুটো দেশ। তবে কি আরও একটা দেশের দুর্দশা দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের? নাকি পরিস্থিতি হাতের মুঠোয় রয়েছে?
কী জানেন তো? যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের ঘরে আগুন লাগছে, ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের টনক নড়ে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অবশ্যম্ভাবী জেনেও হাসিনা সরকারের নির্ধারিত নিয়ম-নীতি অন্তত সেই ধারনাকেই আরও বেশি করে স্পষ্ট করে তুলছে। কেন বলছি? চলুন একবার দেখে নেওয়া যাক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পরিস্থিতিটা ঠিক কেমন? বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, এমনটাই বলছে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফাণ্ড। সম্প্রতি সেদেশের ইকনমিক্যাল ডেভলপমেন্ট এবং ইমপ্লেমেন্টেশনের বিষয়ে কথা বলতে আইএমএফ-এর একদল বাংলাদেশ ভিজিট করে। এবং সেখানেই উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা জানায়, বাংলাদেশের ফরেক্স রিজার্ভের পরিমাণ কমে পৌঁছতে পারে ২৯.৮৬ বিলিয়ন ডলারে। যা বাংলাদেশের গত ৭ বছরের অর্থনৈতিক ইতিহাসে সর্বনিম্ন। প্রশ্ন হচ্ছে, আইএমএফ-এর সাবধানবাণী শোনা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার কেন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোন প্ল্যানিং করলো না? ঠিক কি কারণে বাংলাদেশকে সাবধানবাণী দিয়েছিল তারা?
ডলার ক্রাইসিস! মাঝসমুদ্রে আটকে আছে তেল ভর্তি জাহাজ। মালিকপক্ষ তেল দিতে নারাজ বাংলাদেশকে। বাংলাদেশকে কোণঠাসা করছে একের পর এক আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি। কারণ, সব মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের গণ্ডি। আর ডলার সংকটে তেলের মূল্য চোকাতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বিপজ্জনকভাবে কমছে জ্বালানির মজুত। গত ৯ মে বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বিপিসি জানিয়েছে যে, দেশের বাজারে ফরেক্স রিজার্ভের ঘাটতি থাকায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সময়মতো আমদানি ব্যয় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন ভারতের পাওনা রুপিতে পরিশোধ করতে পারে। প্রসঙ্গত, প্রতি মাসে বাংলাদেশ প্রায় ৫ লক্ষ টন রিফাইন্ড ওয়েল এবং ১ লক্ষ টন ক্রুড ওয়েল ইমপোর্ট করায়। চিন ছাড়াও ভারতের থেকে এই আমদানিকৃত তেলের সিংহভাগ পৌঁছয় বাংলাদেশে। আর ডলার সংকটে ধার মেটাতে না পারায় দুইদেশের সম্পর্কে তিক্ততা বাসা বেঁধে, তা হয়তো কিছুটা হলেও আঁচ করা যাচ্ছে। কারণ শুধুমাত্র ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েলের কাছেই বাংলাদেশের ধারের পরিমাণ পৌঁছেছে প্রায় ১৪৭ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু আশারকথা হচ্ছে, বিপিসি চাইছে ভারতের সঙ্গে এই দেনাপাওনার হিসেব রুপিতেই হোক। আর ভারতও চেয়ে এসছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ডলারের বদলে রুপিতেই হোক। যদিও প্রস্তাব রাখলেও বাংলাদেশ এই বিষয়ে এখনও সঠিক কোন সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছতে পারেনি।
কিন্তু অঘটন যা ঘটবার, ঘটে গিয়েছে। কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিশ্বের অন্যতম ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং ইকনমি। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তথৈবচ। এখন সেই পরিস্থিতি হজম করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, জারার মতো কোম্পানি হয়তো সাতে পাঁচে না থেকেও এই ইকোনমিক ডাউনটার্নের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। আর ইলেক্ট্রিসিটি ক্রাইসিস যে ইকোনমিক গ্রোথের ক্ষেত্রে কত বড় বাধা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনাদের কী মনে হয়, বাংলাদেশ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? হাসিনা সরকারের মস্তিস্কপ্রসূত কোন স্ট্র্যাটেজি কি বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে পারবে? জানান আমদের কমেন্টবক্সে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ