দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান। অনেকেই বলছেন নাকি যে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে চান নি বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলা হচ্ছে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, অহংকার, ঔদ্ধত্য এবং একগুয়েমির কারণেই হাসিনা নিজের পতন ডেকে আনলেন। পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
যেখানেই তাকান না কেন সেখানেই এখন হাসিনা বিরোধী কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের বহু শীর্ষ মাথারা এখন বাংলাদেশকে স্বাধীন বাংলাদেশ বলছেন। তসলিমা নাসরিন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বহু প্রথম সারির নাগরিকদের মনে শেখ হাসিনার প্রতি যে বিরূপ মনোভাব দেখাচ্ছেন বা আরও কঠিন ভাষায় বললে, বিষ ওগরাচ্ছেন তারপর কি সত্যিই মনে হয় যে শেখ হাসিনা একেবারেই নির্দোষ ছিলেন? আন্দোলন কি শুধু ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেল নাকি হাসিনার প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব দিনে দিনে ছাই চাপা আগুনের মত জ্বলছিল? অনেকেই বলছেন, ছাত্র আন্দোলনের বিষয়টা হয়ত সেই সময় ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারতেন হাসিনা সরকার। তার বদলে গুলি চালাল হাসিনার পুলিশ। ছাত্রদের রক্ত বাংলাদেশের মাটিকে আরও জ্বালিয়ে দিল। আর সেটারই সুযোগ নিল নাকি বিএনপি এবং জামাত। তাহলে হাসিনা এখন কোথায় যাবেন? তাঁর ভবিষ্যৎ কী সেসব নিয়েই আলোচনা আজকের প্রতিবেদনে।

শেখ হাসিনা ছিলেন ঔদ্ধত্য। শেখ হাসিনা ছিলেন অহংকারী। শেখ হাসিনা মনে করতেন, তিনিই সুপ্রিমো এই বাংলাদেশের। বহু বিশিষ্টজনের মত, শেখ হাসিনা নিজের পিতৃপরিচয়কে ভুলে গেছিলেন। মানে আজ বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙা হচ্ছে তার অন্যতম কারণ শেখ হাসিনার উগ্র এবং আগ্রাসী মনোভাব। তার মধ্যে একটা হল নির্বাচনী জয়। একের পর এক টার্ম হাসিনা জিতেছেন। কিন্তু সেইসব নির্বাচন নাকি নামেই নির্বাচন ছিল। হাসিনা কোনদিনই বিরোধী স্বরকে তুলে আনতে পারেন নি। যে বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশ নামক এক স্বাধীন রাষ্ট্রকে জন্ম দিল, সেই বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙা হচ্ছে দেখে কি মনে হচ্ছে? হাসিনা নিজের ভুল নিজেই সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে এলেন না? হ্যাঁ, হাসিনার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এক প্রবল আবেগ ছিল। যে কারণে মেধার পরিবর্তে সংরক্ষণকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সময় পাল্টেছে। রূপরেখা বদলেছে। পারস্পরিক ধ্যানধারণা সবই বদলেছে। এখন অর্থনীতির যুগ, এই যুগ আবেগের নয়। এখন দেশের অর্থনীতিকে তুলে ধরার জন্য মেধার প্রয়োজন। সেখানে আন্দোলনকে ঠেকাতে ছাত্রদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হাসিনা যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তারপর হাসিনা নিজের পলিটিকাল কেরিয়ারে যে শেষ পেরেক পুঁতে দিলেন সেটা বলাই যায়। তবে নয়া দিল্লি মনে করছে, কোটা সংরক্ষণ নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের একটা নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকলেও বর্তমানে যেটা ঘটে গেল তার পিছনে পাকিস্তানের হাত থাকতে পারে। কিন্তু বর্তমানে এখন যে বিষয়টা সবার আগে উঠে আসছে, সেটা হল হিংসার প্রতিফলন। আর এই প্রতিফলন কেন ঘটল জানেন? বাংলাদেশের অর্থনীতির কারণে।

মনে হতেই পারে যে বাংলাদেশ নিজের উন্নয়নকে ধীরে ধীরে তুলে ধরতে পারছিল। তাহলে কেন এতো হতাশা জমেছিল হাসিনার সরকারকে ঘিরে? তার কারণ, করোনার অভিঘাত আসার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি যে সেই ধাক্কা খেয়েছিল সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড় করাতে পারে নি হাসিনার সরকার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দিন দিন আকাশ ছুঁয়েছে। বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি ব্যপকভাবে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের ভাঁড়ারে। ফলে আয় এবং ব্যায়ের মধ্যে ব্যাপক অসাম্য দেখা যাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি পৌঁছে গিয়েছে কুড়ি শতাংশে। এছাড়া আরেকটা বড় কারণ আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ২০২৩ সালে যে সমীক্ষা করা হয়েছিল সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের কোন চাকরি নেই। এমনকি প্রপার শিক্ষা নিয়ে তাঁরা যে এই প্রতিযোগিতার মাঠে নামবেন, সেটাও রয়েছে অধরা। সংখ্যার হিসেবে ধরলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ১ কোটি ২২ লক্ষ মানুষ তাঁরা কিছুই করেন না। এই সংখ্যাটা হচ্ছে দেশের ৩৯% যুবকের। তাঁরা কিছুই করেন না মানে কিছুই করেন না। না করেন ছোটখাটো চাকরি, না রয়েছে নিজের ব্যবসা, না কিছু। তাঁরা স্রেফ বেকার। এদিকে আওয়ামি লীগ শুধু বলে গেছিল, দেশে বেকারত্ব নাকি দাঁড়িয়ে আছে মাত্র ৩.৩ শতাংশে। সমন্বয়ের ব্যাপক অভাব দেখা গিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, এনবিআরের মত সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর। এদিকে হাসিনা সরকার যখন দেখেছে তারা আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারবেন না, তখন হাসিনাই নির্দেশ দেন ব্যাঙ্ক থেকে প্রচুর পরিমাণ ঋণ নিতে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক টাকা ছাপিয়েছে। ফলে মূল্যবৃদ্ধি আরও হয়েছে। বাজারে বিপদ, যারা ব্যবসায়ী তাঁদের মধ্যে অসততার প্রকাশ দেখা গিয়েছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয় নি হাসিনার সরকার।

একদিকে মেধার অভাব, একদিকে পড়াশোনায় সংরক্ষণ, একদিকে ছাত্রদের দমিয়ে রাখা আর অন্যদিকে ফুটোফাটা অর্থনীতি, মূল্যবৃদ্ধির কোপ, মেধাকে শেষ করে দেওয়া এই সবই নাকি হাসিনার পতন ডেকে আনল। তারপরেও দিনের শেষে এই বাংলাদেশকে ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তায় স্বাধীনতা এনেছিলেন সেই বঙ্গবন্ধু। আজ মুজিবর কন্যার এ কি হাল! কেউ বলছেন বেইমান আর কেউ বলছেন হাসিনা করেছেন অপমান। বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসুক। যে সরকার গঠন হোক, দিনের শেষে বাংলাদেশ যেন নিজের ইতিহাসকে ভুলে না যায়। আপনাদের কি মনে হয় জানান কমেন্ট বক্সে।

বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ