Trending
ঋণের বোঝা ক্রমশই বাড়ছে বাংলাদেশে। আর্থ সামাজিক এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ঋণের অঙ্ক পৌঁছে গিয়েছে ৭ লক্ষ কোটি টাকার ওপরে। এরই মধ্যে আবারও বিশাল অঙ্কের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। ঋণ দেবার জন্য হাসিনা সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। তারপরেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। বাংলাদেশের ঘাড়ে যেখানে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ, সেখানে আবারও ঋণ নেওয়ার পর কি আদৌ বাংলাদেশের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সহজ হয়ে দাঁড়াবে? আদৌ কি বাংলাদেশ পারবে ঋণ পরিশোধ করে আবারও নিজের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে? আজ এই নিয়েই শুরু হোক আমাদের প্রতিবেদন- লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা বাংলাদেশের পক্ষে কতটা কঠিন?
এই এক দেড় মাস আগের কথা। বৈদেশিক ঘাটতি চওড়া হচ্ছিল বলে আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের কাছ থেকে বাংলাদেশ ঋণ বাবদ নিয়েছিল প্রায় ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার। উদ্দ্যেশ্য, বৈদেশিক মুদ্রার ব্যপক সংকট। আর সেটা সামাল দেবার জন্যই নাকি মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সাত মাসের কিস্তিতে এই ঋণ শোধ করতে হবে। কিন্তু তার আগেই হাসিনা সরকার ফের একবার ঋণ নেবেন বলে ঠিক করে। তারপরেই পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা গেল দক্ষিণ কোরিয়াকে। প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নমনীয় ঋণ দিচ্ছে দেশটি। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। জানা গিয়েছে, উন্নয়নমূলক খাতেই বাংলাদেশ সরকার এই ঋণ পেতে চলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে। একইসঙ্গে হাসিনা সরকার যে মেগা প্রকল্পগুলি করবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন, সেই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে যাবে ঋণের টাকা বাংলাদেশের কোষাগারে ঢুকলেই। বাংলাদেশি টাকায় অঙ্কটা পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। আর এই বিরাট অঙ্কের ঋণ কিস্তি মাফিক শোধ করতে হবে ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল অর্থাৎ পাঁচ বছর ধরে।
কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফেসিলিটি থেকে এই ঋণ নিতে চলেছে বাংলাদেশ। তার জন্য লেটার অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং কো-অপারেশন অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, কোরিয়া সরকার এ যাবত পর্যন্ত বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এই আর্থিক সহায়তা পেয়ে বাংলাদেশ মোট ১৬টি প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছে। যার আনুমানিক ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬২ কোটি ডলার। অন্যদিকে কাজ চলছে আরও ৭টি প্রকল্পের। এই প্রকল্পগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ডলারের একটু বেশি। এখানেই আরেকটা কথা। শুধু কোরিয়া বলে নয়। আজ বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ দেবার জন্য দাঁড়িয়েছে জাপান নিজেও। কোরিয়ার মতনই জাপানও বাংলাদেশের অন্যতম সঙ্গী। জাপান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারিগরি প্রকল্প বাবদ বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে ৮৬ লক্ষ ডলার মতন। টেকনিক্যাল এডুকেশন খাতে এই অঙ্কটা বাংলাদেশের কারিগরি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেকটাই সাহায্য করবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ একের পর এক ঋণ নিয়ে শুধু বোঝা বাড়িয়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ঋণ পরিশোধ দেওয়াটাও অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমশই বিশ্বব্যপী মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে বিভিন্ন দেশ। মার্কিন মুলুকের অবস্থাও বেশ খারাপ। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ব্যাঙ্ক। বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিনী ব্যবসা বাণিজ্য বহুদিনের। ফলে মার্কিন মুলুকে যদি ২০০৮ সালের মন্দা ফিরে আসে, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি কিন্তু ভালোরকম হোঁচট খাবে। এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল হাসিনা সরকার। সেই মতন রাশিয়া থেকে প্রয়োজনীয় জাহাজ এসেছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট বন্দরে সেই জাহাজকে নোঙর করতে দেয়নি হাসিনা গভর্নমেন্ট। অনেকে মনে করছেন, এর পিছনে মার্কিনী শাসানি প্রচ্ছন্ন ভাবে কাজ করেছে। এদিকে রাশিয়ার কাছেও কিছুটা ব্যাড ইমেজ তৈরি করে গেলেছেন হাসিনা। সব মিলিয়ে তাই বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বাজার কিছুটা চাঙ্গা থাকলেও বৈদেশিক সম্পর্কের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় রফতানি বাণিজ্য হোঁচট খেতে পারে। ফলে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ নামাটাও অবাস্তব কিছু নয়। তাই দিনের শেষে হাসিনা সরকার ঋণ পরিশোধ দিয়ে কতটা হাসি ধরে রাখতে পারবেন, সেটাই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে দিল আন্তর্জাতিক মহলে
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ