Daily
দু’মাস আগে যখন করোনার থাবা চওড়া হচ্ছিল বাংলাদেশে, তখন হাসিনা সরকার লকডাউন জারি করেন। কিন্তু দেখা যায় প্রথম ঢেউয়ের আর্থিক ক্ষতি কোনরকমে সামলে ওঠার মুখে আবারও দ্বিতীয় লকডাউনকে মেনে নিতে পারেননি সেই দেশের ব্যবসায়ীমহল। ফলে সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন তাঁরা। উত্তাল হয় বাংলাদেশ।
কিন্তু এইবারের ছবিটা একেবারে আলাদা। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে প্রতিদিনই সেদেশের মানুষকে দেখতে হচ্ছে কিভাবে একের পর এক জীবন থেমে যাচ্ছে করোনার কামড়ে। আর তাই বেলাগাম সংক্রমণকে রোখার জন্য এবারেও হাসিনা সরকার বাধ্য হল লকডাউনকেই বেছে নিতে। প্রাথমিক পর্যায়ে সোমবার থেকে সাতদিনের সম্পূর্ণ লকডাউনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু এইবার কোন বিক্ষোভ নয়। একেবারে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাল ব্যবসায়ী মহল।
প্রায় দেড় বছর ধরে এই করোনার জন্য ব্যবসায় লোকসান গুণেই চলেছেন তাঁরা। কিন্তু জীবনের আগে তো কিছু নয়। তাই ক্ষতি হবে জেনেও আজ তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন সরকারি সিদ্ধান্তকে। একইসঙ্গে দাবি জানাচ্ছেন, আনলক পর্বে সরকারের যেন কৃপাদৃষ্টি পড়ে। কারণ তাঁদের ভাগ্যে শুধুই জমছে ক্ষতির ওপর ক্ষতি। তাই দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনের পথে হেঁটে আর বাড়াতে চাইছেন না ক্ষতির ভার।
এদিকে লকডাউনের খবর পেয়েই আবারও যে যার বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। যার ফলে ফেরিঘাটে নজর পড়ল উপচে পড়া ঘরমুখো মানুষের ভিড়। দূরত্ববিধিও কার্যত উধাও হয়ে গেল।
লকডাউন চলাকালীন বিশেষ ব্যবস্থায় পোশাক কারখানা, রপ্তানি পণ্য এবং স্থানীয় পণ্যবাহী যান, সংবাদমাধ্যম, ওষুধ, স্বাস্থ্য সংক্রান্তসহ জরুরী সেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থা-প্রতিষ্ঠান লকডাউনের বাইরে থাকবে। তবে অর্থবর্ষ শেষ হওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও হিসাব সংক্রান্ত কিছু অফিস সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। শনিবারও দেশে ২৪ ঘণ্টায় ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৪ হাজার ৫৩ জনে। শুক্রবার ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৩৩৪ জন। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৮ জনে।
লকডাউনের পাশাপাশি এই মারণ ভাইরাসের আতঙ্ক তাড়া করে বেরাচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে। আর কয়েক ঘণ্টা পর থেকে বাংলাদেশের আর্থিক কর্মকাণ্ডে ঝুলবে তালা। তবু বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে। আর ফিরে পেতে হবে সংক্রমণ শূন্য বাংলাদেশ।
ঋদি হক, ঢাকা